দায়িত্বের কারণে তাঁদের স্বজন ছাড়া ঈদ
পশু কোরবানির সময় শিংয়ের গুঁতা, গরুর লাথি, চাপাতির কোপ, ছুরির পোঁচসহ নানা দুর্ঘটনায় পড়ে আহত লোকজন একে একে আসছেন। চিকিৎসক, নার্সদেরও ব্যস্ততা বাড়ছে। কথা বলারও ফুরসত নেই। ঈদে সবকিছু বন্ধ থাকলেও চিকিৎসা, সংবাদ, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনাসহ বেশ কিছু জরুরি সেবা চালু থাকে। এসব সেবার সঙ্গে যুক্ত মানুষগুলোর অনেককেই ঈদের ছুটিতেও কর্মব্যস্ত দিন কাটাতে হয়।
আজ সোমবার ঈদুল আজহার দিনে দুপুর পৌনে ১২টা পর্যন্ত অন্তত ৬০ জন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছেন। হাসপাতাল সূত্র জানায়, যাঁরা চিকিৎসা নিয়েছেন, তাদের মধ্যে ৫০ জন পশু কোরবানি ও মাংস কাটাকাটিসংক্রান্ত দুর্ঘটনায় পড়ে এসেছেন।
ঢাকা মেডিকেলের ক্যাজুয়ালিটি সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. আরিফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা চিকিৎসক যারা আছি, ঈদের ছুটিতেও তাদের মাথায় রাখতে হয়, হাসপাতাল থেকে যখন-তখন ডাক আসবে। এটা দায়িত্ব হয়ে গেছে। কখনো ফোনে, কখনো সশরীর এসে কাজ করতে হয়। মানসিকভাবে আমরা প্রস্তুত থাকি। সকালে বাসায় কোরবানির কাজ বুঝিয়ে দিয়ে হাসপাতালে চলে এসেছি। পরিবারও এখন অভ্যস্ত হয়ে গেছে।’
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে চিকিৎসক ও নার্সদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, ঈদের সময়ও ঢাকা মেডিকেলে সারা দেশ থেকেই রোগী আসে। রোগীর চাপ কমে না।
ঈদ কিংবা অন্য কোনো ছুটি—কোনো সময় ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বন্ধ থাকে না। তিন ঈদ ধরেই দায়িত্ব পালন করছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) রমনা ট্রাফিক বিভাগের পুলিশ সার্জেন্ট মো. আবু সালেক। আজ তিনি শাহবাগে দায়িত্ব পালন করছেন। আবু সালেক প্রথম আলোকে বলেন, ঈদের ছুটিতে গাড়ির চাপ কম থাকলেও তাঁদের কাজ থাকেই। বিশেষ করে ঈদের দিনে ঈদের জামাতের জন্য ভোর থেকে কাজ শুরু হয়। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের এদিন চলাচল বেশি থাকে। ফলে বাড়তি সতর্কতা রয়েছে।
মোহাম্মদপুর থেকে গুলিস্তানগামী একটি পরিবহনে চালকের সহকারী হিসেবে কাজ করেন কায়সার সরদার। শাহবাগ মোড়ে কথা হয় তাঁর সঙ্গে। ঈদে ছুটি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গত ঈদে ছুটি কাটিয়েছেন। তাই এবার মালিক ছুটি দেননি। বাসের বেশির ভাগ কর্মীই ছুটিতে, তাই চালকের সঙ্গে তাঁকে বের হতে হয়েছে।
কারওয়ান বাজার মোড়ের তেজগাঁও ট্রাফিক বিভাগের পুলিশ সার্জেন্ট শফিউল আলম জানান, গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোয় ট্রাফিক বিভাগের দায়িত্ব সব সময়ই থাকে। তিনি গত ঈদে ছুটি পেয়েছিলেন। এবার দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে।
সবকিছু বন্ধ থাকলেও সংবাদ থেমে থাকে না। মানুষকে খবর জানানোর জন্য দেশের সব সংবাদমাধ্যমেই কিছু কর্মী থাকেন। দেশের একটি অনলাইন পোর্টালে কাজ করেন ওমর ফারুক। তিনি সব ঈদেই অফিস করেন। কারণ হিসেবে জানান, তিনি এখনো কাজটাকে প্রাধান্য দিয়ে দায়িত্ব পালন করতে চান।