সহায়তা চেয়ে ৯৯৯ নম্বরে সবচেয়ে বেশি ফোন ১৯ জুলাই

১৬ জুলাই থেকে ৮ দিনে প্রায় ৩ লাখ ফোনকল আসে। সর্বোচ্চ ৪৮ হাজার ফোনকল আসে ১৯ জুলাই।

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে বিক্ষোভ ও সংঘাতের সময় সহায়তা চেয়ে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ ফোনকল এসেছে। সবচেয়ে বেশি ফোনকল এসেছে ১৯ জুলাই শুক্রবার। ওই দিন জরুরি পুলিশ সেবা ও ফায়ার সার্ভিসের সহায়তা দিতে হয়েছে সবচেয়ে বেশি। অ্যাম্বুলেন্সের জন্য সবচেয়ে বেশি সহায়তা দিতে হয়েছে পরদিন শনিবার।

১৬ থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৯৯৯ নম্বরে আসা ফোনের হিসাব থেকে জানা যায়, এই ৮ দিনে সারা দেশ থেকে প্রায় ৩ লাখ ফোনকল এসেছে। এর মধ্যে পুলিশের জরুরি সহায়তা দেওয়া হয়েছে ৬ হাজার ৯১৯টি। অ্যাম্বুলেন্স সহায়তা দেওয়া হয়েছে ২ হাজার ২০৫টি আর ফায়ার সার্ভিসের সহায়তা দেওয়া হয়েছে ৮৪৩টি।

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের টানা আন্দোলন শুরু হয় ১ জুলাই। ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনকারীদের কর্মসূচি ঘিরে সংঘর্ষ ও হামলার ঘটনা ঘটে। এরপর সারা দেশে বিক্ষোভ ছড়াতে থাকে। ১৮ থেকে ২০ জুলাই—এই তিন দিনে সবচেয়ে বেশি হতাহতের ঘটনা ঘটে।

জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরের প্রধান ও পুলিশের অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক মোহাম্মদ তবারক উল্লাহ গত বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, স্বাভাবিক সময়ে দিনে ২০ থেকে ২২ হাজার ফোনকল আসে। অন্য সময়ের তুলনায় গত কয়েক দিনে সহায়তা চেয়ে ও অভিযোগ জানিয়ে ফোন এসেছে প্রায় দ্বিগুণ। এ সময় অনেক জায়গায় বিক্ষোভ, সহিংসতা, ভাঙচুর ও আগুন লাগানোর ঘটনা ঘটে। তিনি বলেন, আগুন লাগার ঘটনা ঘটলে বা সহিংসতা হলে একই সঙ্গে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও অ্যাম্বুলেন্স—তিনটির জন্যই সহায়তা চাওয়া হয়।

জাতীয় জরুরি সেবার তথ্য অনুসারে, ৯৯৯ নম্বরে সহায়তা চেয়ে ২২ হাজার ফোন আসে ১৬ জুলাই। পরদিন তা ছিল ২৩ হাজারের বেশি। ১৮ জুলাই ফোনকল বেড়ে দাঁড়ায় ৩৪ হাজারে। এরপরের ৪ দিন কলের সংখ্যা ছিল আরও বেশি। ১৯ জুলাই সর্বোচ্চ ৪৮ হাজার ফোনকল আসে। এরপর ২০ জুলাই ৪২ হাজার, ২১ জুলাই ৪৬ হাজার এবং ২২ জুলাই ৪৫ হাজারের বেশি ফোনকল আসে। পরদিন ২৩ জুলাই তা নেমে আসে ৩৭ হাজারে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ১৯ জুলাই ফোনকলের ভিত্তিতে পুলিশের জরুরি সহায়তা দেওয়া হয় ১ হাজার ১৬৪টি। ফায়ার সার্ভিসের সহায়তা দেওয়া হয় ২৫৭টি এবং অ্যাম্বুলেন্স সহায়তা দেওয়া হয় ৩১৪টি। অ্যাম্বুলেন্স সহায়তা দেওয়া হয় সবচেয়ে বেশি ২০ জুলাই। ওই দিন ৫১২টি অ্যাম্বুলেন্স পাঠিয়ে সেবা দেওয়া হয়। একই দিন পুলিশের সহায়তা দেওয়া হয় ৭৭০টি এবং ফায়ার সার্ভিস সেবা দেওয়া হয় ১৩৫টি।

বনানী ও মহাখালীতে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের টোলঘর, রামপুরায় বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) ভবন, মহাখালীতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, সেতু ভবনে হামলাকারীরা ভাঙচুর ও আগুন দিলে ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে ফায়ার সার্ভিস, পুলিশের সহায়তা চাওয়া হয়। সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা জানান, তাঁরা ৯৯৯ নম্বরে ফোন করার পর জানানো হয় যে পুলিশকে জানানো হয়েছে। কিন্তু সহিংসতা ঠেকাতে পুলিশ বা আগুন নেভানোর জন্য ফায়ার সার্ভিসকে যথাসময়ে দেখা যায়নি।

এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মোহাম্মদ তবারক উল্লাহ বলেন, সংঘাত প্রতিরোধে ব্যস্ত ছিল পুলিশ। ফায়ার সার্ভিসকে আগুন নেভানোর বিষয়ে ৯৯৯ থেকে জানানো হলে কোনো কোনো ক্ষেত্রে তারা পুলিশের নিরাপত্তা চায়। এসব কারণে সহায়তা চেয়ে ফোন পাওয়ার পরও কিছু ক্ষেত্রে সময়মতো ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়নি।

জাতীয় জরুরি সেবা সূত্র জানায়, ৯৯৯ নম্বরে ১ মিনিটে ১২০টির মতো ফোনকল গ্রহণ করার ব্যবস্থা রয়েছে। প্রতি পালায় ৮০ জন কলগ্রহণকারী (কল টেকার) ফোন গ্রহণ করেন। দ্বিতীয় স্তরে কলের বিষয়ে ব্যবস্থা নিশ্চিত করা অর্থাৎ পুলিশ সহায়তা, ফায়ার সার্ভিস বা অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা হয়েছে কি না, তা দেখেন ১৬ জন বার্তা প্রেরণকারী (ডিসপ্যাচার)। তৃতীয় স্তরে পুরো প্রক্রিয়া তত্ত্বাবধান করেন ৪ জন তত্ত্বাবধায়ক (সুপারভাইজার)।

এর আগে এক দিনে এত ফোনকলের অভিজ্ঞতা হয়নি বলে জানান ৯৯৯ নম্বরের গণমাধ্যম ও জনসংযোগ কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক আনোয়ার সাত্তার। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ৮ দিনে (১৬ থেকে ২৩ জুলাই) মোট ৯ হাজার ৯৬৭টি জরুরি পুলিশ সহায়তা, ফায়ার সার্ভিস ও অ্যাম্বুলেন্স সহায়তা দেওয়া গেছে। অনেক জায়গায় পরিস্থিতির কারণে সহায়তা পৌঁছায়নি। এর বাইরে অনেকে কল করেছেন পরিস্থিতি সম্পর্কে তথ্য নিতে। অনেকে কল করেছেন তিনি পথে আটকা পড়েছেন, কোন দিক দিয়ে বের হতে পারবেন ইত্যাদি জানতে। আগুন লাগা, ভাঙচুর, সংঘাত ও সংঘর্ষের ঘটনায় একই জায়গা থেকে সহায়তা চেয়ে অনেক ফোনকল আসার ঘটনাও ঘটেছে।