হাজার কোটি টাকা খরচ করে আর জনশুমারি চান না দুই মন্ত্রী
দেশের জনসংখ্যা কত, তা জানার জন্য দশ বছর অপেক্ষা করার পদ্ধতি থেকে বের হয়ে আসার পক্ষে মত দিয়েছেন সরকারের দুই মন্ত্রী। তাঁরা দুজনই বলেছেন, দেশ ডিজিটাল হচ্ছে। স্মার্ট বাংলাদেশের পথে বাংলাদেশ। তাই দশ বছর পরপর ঘটা করে জনশুমারি করার মানে হয় না। এই ধারা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। এক বছরের মধ্যে দেশের জনসংখ্যার তথ্য প্রচারের উপায় বের করতে পরিসংখ্যান ব্যুরোকে (বিবিএস) নির্দেশ দেন দুই মন্ত্রী।
আজ রোববার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলনকক্ষে আয়োজিত ‘জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২–এর সমন্বয়কৃত জনসংখ্যার তথ্য প্রকাশ’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম। সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব শাহনাজ আরেফিন, বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক বিনায়ক সেন, পরিসংখ্যান ব্যুরোর মহাপরিচালক মতিয়ার রহমান। সমন্বয়কৃত জনসংখ্যাসম্পর্কিত মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জনশুমারি ও গৃহগণনা প্রকল্পের পরিচালক দিলদার হোসেন।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের যন্ত্র আছে, জ্ঞান আছে, জনবল আছে। সরকারি কর্মকর্তা আছে। তাহলে কেন জনসংখ্যার তথ্য জানার জন্য দশ বছর অপেক্ষা করতে হবে? জনশুমারির পেছনে কেন দেড় হাজার কোটি টাকা খরচ করতে হবে? এ ধারা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।’ নরওয়ে, ফিনল্যান্ড, ডেনমার্কের মতো দেশগুলো কীভাবে জনসংখ্যার হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করে, তা পর্যালোচনা করতে বিবিএসকে নির্দেশ দেন পরিকল্পনামন্ত্রী। প্রয়োজনে তাদের কাছ থেকে সহযোগিতা নেওয়ার কথাও বলেন।
একই সুরে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম বলেন, নেদারল্যান্ডসে এক বছরের মধ্যে জনসংখ্যার তথ্য প্রকাশ করা হয়। ইউরোপের দেশগুলোতেও তা-ই হচ্ছে। আমাদের দেশেও এক বছরের মধ্যে জনশুমারির তথ্য প্রকাশ করা যায় কি না, তা খতিয়ে দেখার তাগিদ দেন তিনি। ঘটা করে জনশুমারি করার ধারা থেকে বেরিয়ে আসার কথা বলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী।
দশ বছর পর পর দেশে জনশুমারি করে আসছে বিবিএস। দেশ স্বাধীনের পর প্রথম ১৯৭৪ সালে আদমশুমারি হয়। এরপর ১৯৮১ সালে দ্বিতীয়, ১৯৯১ সালে তৃতীয়, ২০০১ সালে চতুর্থ ও ২০১১ সালে পঞ্চম আদমশুমারি করেছে বিবিএস। ২০১৩ সালে পরিসংখ্যান আইনে ‘আদমশুমারি’র পরিবর্তে ‘জনশুমারি’ করা হয়। নিয়ম অনুযায়ী ২০২১ সালে জনশুমারি হওয়ার কথা থাকলেও করোনা মহামারি ও ট্যাব কেনা নিয়ে জটিলতায় এক বছর পর ষষ্ঠ জনশুমারি হয় ২০২২ সালে। ওই বছর ১৫ থেকে ২১ জুন দেশজুড়ে জনশুমারি করা হয়।
এক মাসের ব্যবধানে শুমারির প্রাথমিক তথ্য প্রকাশ করে বিবিএস। তখন বলা হয়, দেশে জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৫১ লাখ। বিবিএসের শুমারিতে কতসংখ্যক মানুষ বাদ পড়েছে, তা জানতে আলাদাভাবে জরিপ করে সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস)। গত ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশ করা প্রতিবেদনে বিআইডিএস জানায়, বিবিএসের শুমারিতে ২ দশমিক ৭৫ শতাংশ বা ৪৭ লাখ মানুষ বাদ পড়েছে। তাদের যোগ করলে দেশের প্রকৃত জনসংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে ১৬ কোটি ৯৮ লাখে।
বাদ পড়া সেই ৪৭ লাখ মানুষকে যোগ করে আজকের সংবাদ সম্মেলনে বিবিএস জানিয়েছে, চূড়ান্ত বিচারে দেশের জনসংখ্যা এখন ১৬ কোটি ৯৮ লাখ ২৮ হাজার ৯১২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৮ কোটি ৪০ লাখ ৭৭ হাজার ২০৩ জন এবং নারী ৮ কোটি ৫৬ লাখ ৫৩ হাজার ১২০ জন। প্রকল্প পরিচালক দিলদার হোসেন জানান, সবচেয়ে বেশি মানুষের বসবাস ঢাকা বিভাগে—৪ কোটি ৫৬ লাখ, যা মোট জনগোষ্ঠীর প্রায় ২৭ ভাগ। সবচেয়ে কম মানুষ বাস করে বরিশাল বিভাগে—৯৩ লাখ, যা মোট জনগোষ্ঠীর সাড়ে পাঁচ ভাগ। মুসলমানের সংখ্যা ১৫ কোটি ৪৫ লাখ বা ৯১ ভাগ। অন্য ধর্মাবলম্বীর সংখ্যা ১ কোটি ৫২ লাখ বা ৮ দশমিক ৯৫ ভাগ।
সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘এটাই যাতে শেষ জনশুমারি হয়। জনসংখ্যার তথ্য জানতে এরপর আমাদের যাতে আরও দশ বছর অপেক্ষা করতে না হয়।’ দশ বছর পরপর জনশুমারি না করে এক বছরের মধ্যে জনসংখ্যার তথ্য দেওয়া–সংক্রান্ত প্রস্তাব প্রয়োজনে প্রধানমন্ত্রীর কাছেও দেবেন বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী।
বিদেশে কতসংখ্যক প্রবাসী, জানা গেল না
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কতসংখ্যক প্রবাসী বসবাস করেন, এবারের জনশুমারিতে তা প্রকাশের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বিবিএস। অন্য সব তথ্য দিলেও এই তথ্য প্রচার করছে না সংস্থাটি। এমনকি আজ জনশুমারির চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিলেও এবারও বিদেশে কতসংখ্যক প্রবাসী বসবাস করেন, সে তথ্য দেওয়া হয়নি।
প্রবাসীর সংখ্যা কত, সে তথ্য প্রকাশে কোনো বাধা আছে কি না, প্রথম আলোর পক্ষ থেকে প্রশ্ন করা হলে প্রকল্প পরিচালক দিলদার হোসেন জানান, জনশুমারি ও গৃহগণনা প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৪ সাল পর্যন্ত আছে। ওই সময়ের মধ্যে বিদেশে অবস্থানকারী প্রবাসীদের তথ্য দেওয়া হবে। এই তথ্য প্রকাশে কোনো বাধা নেই।
পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কতসংখ্যক প্রবাসী বসবাস করছেন, তা জানতে সবার আগ্রহ আছে। চূড়ান্ত প্রতিবেদনে তথ্যটি প্রকাশ করা যেত। এটা তেমন কঠিন ছিল না। এর আগে প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রকাশের সময়ও এ তথ্য দেওয়ার কথা ছিল। তবে তিনি বিবিএসের ওপর আস্থা রাখার পরামর্শ দেন।