বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাজউদ্দীন আহমদের যৌথ চেষ্টায় দেশ যা পেতে পারত, সেই সম্ভাবনা শেষ হয়ে যায় ১৯৭৫ সালে। তার জন্য বড় মূল্য দিতে হয়েছে দেশকে। মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের স্মরণসভায় এসব কথা উঠে এসেছে।
তাজউদ্দীন আহমদের ৯৮তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সোমবার বিকেলে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে অনুষ্ঠিত হয় স্মরণসভা। সূচনা বক্তব্যে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি সারওয়ার আলী বলেন, বঙ্গবন্ধুর পাশাপাশি তাজউদ্দীন আহমদের কর্ম ও জীবনের উল্লেখ ছাড়া বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস অসম্পূর্ণ থাকবে। তিনি বলেন, স্বল্পবাক্ তাজউদ্দীন আহমদের রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও সাংগঠনিক গুণাবলির অতুলনীয় পরিচয় পাওয়া যায় মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকার পরিচালনার ক্ষেত্রে।
তাজউদ্দীন আহমদ স্বাধীনতার পর যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে স্বনির্ভর অর্থনীতির দেশ হিসেবে গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেন বলে উল্লেখ করেন সারওয়ার আলী। তিনি বলেন, তাজউদ্দীন আহমদের সেই স্বপ্নের প্রকাশ লক্ষ করা যায় অর্থমন্ত্রী হিসেবে দেওয়া প্রথম বাজেট বক্তৃতায়। কিন্তু তাজউদ্দীন আহমদের আমৃত্যু নেতা বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে বিচ্ছিন্নতার উচ্চমূল্য দিতে হয়েছে দেশকে। ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর সভ্যতা বিবর্জিত জেলহত্যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের এই ‘ট্র্যাজিক নায়কের’ জীবনাবসান হয়।
বাংলাদেশের মানুষের জীবনের আকাঙ্ক্ষার মধ্যে তাজউদ্দীন আহমদ বেঁচে আছেন বলে উল্লেখ করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি তাজউদ্দীন আহমদের মেয়ে সংসদ সদস্য সিমিন হোসেন (রিমি)। তিনি বলেন, ‘আজ যখন সোনার বাংলা গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখি, তখন আমি প্রতিটা মানুষের মধ্যে তাজউদ্দীনকে খুঁজতে চেষ্টা করি। সেই তাজউদ্দীন যিনি স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকার প্রতিষ্ঠার পর শপথবাক্যে বলেছিলেন, “বাংলাদেশের নিরন্ন দুঃখী মানুষের জন্য রচিত হোক নতুন পৃথিবী।”’
তাজউদ্দীন আহমদ দেশের মানুষের জন্য খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসাব্যবস্থা নিশ্চিত করার স্বপ্ন দেখতেন বলে উল্লেখ করেন সিমিন হোসেন। তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু ও তাজউদ্দীন আহমদ দুজনেই বলেছিলেন, সোনার বাংলা গড়তে হলে আগে সেই মানুষদের তৈরি করতে হবে, যারা দেশ গড়বে। কিন্তু তাই কি করতে পারছি আমরা?’
স্মরণসভায় তাজউদ্দীন আহমদের লেখা ১৯৫৪ সালের ব্যক্তিগত দিনলিপি থেকে তিনটি দিনের কথা পড়ে শোনানো হয়। তাজউদ্দীন আহমদের জীবন নির্ভর করে লেখা সুহান রিজওয়ানের ‘সাক্ষী ছিলো শিরস্ত্রাণ’ বই থেকে পাঠ করে শোনানো হয়।
আলোচনা পর্বে সুহান রিজওয়ান বলেন, তাজউদ্দীন আহমদ হচ্ছেন সেই ব্যক্তি যিনি ‘আমি’ সর্বস্ব ব্যক্তি নয়, এক টুকরা বাংলাদেশ নিয়ে ভাবতেন। কিন্তু সেই মানুষটিকে শিক্ষার্থীদের কাছে চিনিয়ে দেওয়ার প্রয়াস কখনোই বাংলাদেশে ছিল না।
সভায় তাজউদ্দীন আহমদকে বিভিন্ন ব্যক্তির লেখা এবং তাঁর নিজের লেখা তিনটি চিঠি পড়ে শোনানো হয়। এর মধ্যে আছে ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর তাজউদ্দীন আহমদকে লেখা ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর লেখা একটি চিঠি।
তাজউদ্দীন আহমদ ১৯২৫ সালের ২৩ জুলাই গাজীপুরের কাপাসিয়া থানার দরদরিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর কারাগারে বন্দী অবস্থায় আরও তিন জাতীয় নেতার সঙ্গে তাঁকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়।