বসুন্ধরা গ্রুপকে ঋণসুবিধা দেওয়ার অভিযোগ তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ

হাইকোর্টফাইল ছবি

দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী গোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপের ৩ হাজার ৮৫৯ কোটি টাকা ঋণসুবিধা দেওয়ার অভিযোগ তদন্ত করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। অর্থসচিব, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনরসহ বিবাদীদের প্রতি এ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে তদন্তের অগ্রগতি জানিয়ে বিবাদীদের আদালতে প্রতিবেদন দিতেও বলা হয়েছে।

এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহ ও বিচারপতি ফয়েজ আহমেদের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ গত মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) রুলসহ এ আদেশ দেন।

‘সরকার পতনের ৪ দিন আগে বসুন্ধরা গ্রুপকে বিশেষ সুবিধা’ শিরোনামে গত ১৫ সেপ্টেম্বর প্রথম আলোয় একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটি যুক্ত করে ঋণ অনুমোদন ও ঋণ পরিশোধে বিশেষ সুবিধার বৈধতা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এম সারোয়ার হোসেন গত ২৭ অক্টোবর রিটটি করেন। আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে আবেদনকারী নিজেই শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল খান জিয়াউর রহমান শুনানিতে ছিলেন।

২৯ অক্টোবরের আদেশের বিষয়টি আজ রোববার জানিয়ে রিট আবেদনকারী আইনজীবী এম সারোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘নিয়ম অনুসারে বসুন্ধরা গ্রুপ ৮০৩ কোটি টাকা ঋণ পেতে পারে। অথচ ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে বসুন্ধরা গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ঋণের পরিমাণ ৩ হাজার ৮৫৯ কোটি টাকা। ঋণ পুনঃ তফসিলের ক্ষেত্রে নীতিমালা অনুসারে সর্বোচ্চ এক বছরের জন্য ছাড় দিতে পারে। অথচ বসুন্ধরা গ্রুপের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তৎকালীন গর্ভনর দুই বছর পর্যন্ত ঋণ পরিশোধে ছাড়ের বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেয়। এমনকি এ–ও উল্লেখ করা হয় যে এটি অন্যদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না, যা বিরল। বসুন্ধরা গ্রুপকে ঋণ অনুমোদনে ও ঋণ পরিশোধে ছাড়ের সিদ্ধান্তে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকিং আইনসহ অন্যান্য আইনি বিধান লঙ্ঘিত হয়েছে, যে কারণে রিটটি করা হয়।’

রিট আবেদনকারী এই আইনজীবী বলেন, বসুন্ধরা গ্রুপকে ৩ হাজার ৮৫৯ কোটি টাকা ঋণ অনুমোদন ও পরিশোধে ছাড়ের বিষয়ে সুবিধা দেওয়ার অভিযোগ তদন্ত করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। অর্থসচিব, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনরসহ বিবাদীদের প্রতি এ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তদন্তের অগ্রগতি জানিয়ে এই বিবাদীদের চার মাসের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতেও বলা হয়েছে।

প্রথম আলোয় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের চার দিন আগে দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী গোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপকে দুই বছর ঋণ পরিশোধ না করার সুযোগ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। বেসরকারি খাতের ন্যাশনাল ব্যাংকে থাকা ঋণের জন্য গ্রুপটি এই সুবিধা পেয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ন্যাশনাল ব্যাংকে বসুন্ধরা গ্রুপের ঋণের পরিমাণ ৩ হাজার ৮৫৯ কোটি টাকা, যার মধ্যে সরাসরি ঋণ ৩ হাজার ৮৪৪ কোটি টাকা। ব্যাংকটি থেকে এই ব্যবসায়ী গোষ্ঠীকে দেওয়া সরাসরি ঋণ আইন অনুযায়ী তাদের জন্য প্রযোজ্য ঋণসীমার ৮ গুণ বেশি। বসুন্ধরার খেলাপি ঋণ পুনঃ তফসিলের সময় বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়, যা ছিল তাদের খেলাপি ঋণ পুনঃ তফসিলের দ্বিতীয় ঘটনা।

আরও পড়ুন