নিজ নামে প্রতিষ্ঠিত তিনটি ট্রাস্টে দান করা অর্থের বিপরীতে আয়কর কর্তৃপক্ষের ‘দানকর’ আরোপ বৈধ ঘোষণা করে দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের করা পৃথক তিনটি লিভ টু আপিলের (আপিল করার অনুমতি চেয়ে আবেদন) শুনানি ২৩ জুলাই পর্যন্ত মুলতবি করেছেন আপিল বিভাগ। তাঁর আইনজীবীর পক্ষে সময় চেয়ে আবেদন করা হলে আজ সোমবার প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বিভাগ আগামী রোববার পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেন।
এই তিন ট্রাস্ট হলো প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস ট্রাস্ট, ইউনূস ফ্যামিলি ট্রাস্ট এবং ইউনূস সেন্টার ট্রাস্ট। এই তিন ট্রাস্টে ড. ইউনূস দান করেন। তিনটি ট্রাস্টে দান করা অর্থের বিপরীতে আয়কর কর্তৃপক্ষের ‘দানকর’ আরোপ করেন। এর বিরুদ্ধে ড. ইউনূসের করা পৃথক তিনটি আবেদন খারিজ করে গত ৩১ মে রায় দেন হাইকোর্ট। রায়ে তিনটি ট্রাস্টে তিন করবর্ষে ড. ইউনূসের দেওয়া উপহারের (দান) বিপরীতে কর আরোপকে বৈধ বলা হয়।
হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে গত ২০ জুন আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় পৃথক তিনটি লিভ টু আপিল করেন ড. ইউনূস। এর সঙ্গে হাইকোর্টের রায় স্থগিত এবং আয়কর কর্তৃপক্ষের দেওয়া এ–সংক্রান্ত চাহিদাপত্রের কার্যক্রম স্থগিতের আরজিও রয়েছে। তিনটি লিভ টু আপিল আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত হয়ে আজ আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য ওঠে।
আদালতে লিভ টু আপিলকারীর পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড তৌফিক হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন।
পরে তৌফিক হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘লিভ টু আপিলকারীর (ড. ইউনূস) একজন আইনজীবী অসুস্থ, অপর একজন দেশের বাইরে রয়েছেন। যে কারণে দুই সপ্তাহ সময় চাওয়া হয়। আদালত এক সপ্তাহ সময় দিয়েছেন।’
আইনজীবীর তথ্যমতে, ওই তিনটি ট্রাস্টে তাঁর দান করা অর্থের পরিমাণ ৭৬ কোটি ৭৩ লাখ ৩৪ হাজার টাকা। দানের বিপরীতে ২০১১–১২, ২০১২–১৩ এবং ২০১৩–১৪ করবর্ষের জন্য ‘দানকর’ হিসেবে ১৫ কোটি ৩৯ লাখ ১৬ হাজার ৮০০ টাকা আরোপ করে আয়কর কর্তৃপক্ষ। দাবি করা ১৫ কোটির বেশি টাকার মধ্যে আপিল দায়েরের শর্তানুসারে তিনি ইতিমধ্যে তিন কোটি টাকা দিয়েছেন।
অভিযোগ গঠনের বিরুদ্ধে ইউনূসের আবেদনের শুনানি শুরু
শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে করা মামলায় অভিযোগ গঠনের আদেশের বিরুদ্ধে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ও গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজনের করা আবেদনের ওপর হাইকোর্টে শুনানি শুরু হয়েছে। বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুস ও বিচারপতি আশীষ রঞ্জন দাসের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ সোমবার শুনানি গ্রহণ করেন। পরবর্তী শুনানির জন্য আগামীকাল মঙ্গলবার দিন রাখা হয়েছে।
শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে ২০২১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজনের বিরুদ্ধে ওই মামলা করে ঢাকার কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের এক শ্রম পরিদর্শক। ৬ জুন এই মামলায় ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতের বিচারক। অভিযোগ গঠনের আদেশের বৈধতা নিয়ে ও মামলার পরবর্তী কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে গত মাসে হাইকোর্টে আবেদনটি করেন ড. ইউনূসসহ চারজন। অপর তিন আবেদনকারী হলেন গ্রামীণ টেলিকমের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আশরাফুল হাসান, পরিচালক নুর জাহান বেগম ও মো. শাহজাহান।
আদালতে ড. ইউনূসসহ আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী আবদুল্লাহ–আল–মামুন, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী খাজা তানভীর আহমেদ। কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খুরশীদ আলম খান।
পরে আইনজীবী আবদুল্লাহ–আল–মামুন প্রথম আলোকে বলেন, ওই মামলা করার আগে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের দেওয়া নোটিশের পরিপ্রেক্ষিতে গ্রামীণ টেলিকমের এমডি জবাব দাখিল করেন, যা মামলার অভিযোগে বাদী উল্লেখ করেছেন। দাখিল করা ওই জবাবসহ সম্পূরক তথ্যাদি দাখিলের জন্য শুনানিতে সময় চাওয়া হয়। শুনানি নিয়ে আদালত আগামীকাল মঙ্গলবার শুনানির পরবর্তী দিন রেখেছেন।