২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

নিবন্ধন ছাড়া চলছে ৩৫% বেসরকারি হাসপাতাল

অবৈধ বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চলমান অভিযানের মধ্যেই এই গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করা হলো।

দেশে মাত্র ৬ শতাংশ বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতালের লাইসেন্স আছে। এ ধরনের ৩৫ শতাংশ বেসরকারি প্রতিষ্ঠান চলছে নিবন্ধন ছাড়াই, এমনকি তারা নিবন্ধনের আবেদনই করেনি। বাকি ৫৯ শতাংশ প্রতিষ্ঠান নিবন্ধন নবায়ন করেনি অথবা নিবন্ধনের জন্য নতুন করে আবেদন করেছে।

বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক নিয়ে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। ২০১৯-২০ সালে করা ওই গবেষণার ফলাফল গতকাল মঙ্গলবার প্রকাশ করা হয়। অবৈধ বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও রোগনির্ণয় প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চলমান অভিযানের মধ্যেই আইসিডিডিআরবি এ গবেষণা ফলাফল প্রকাশ করল।

গতকাল রাজধানীর মহাখালীতে আইসিডিডিআরবিতে অনুষ্ঠিত ওই অনুষ্ঠানের শুরুতে বলা হয়, গত শতকের আশির দশকে দেশে বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পায়। বর্তমানে দেশের প্রায় ৮০ শতাংশ হাসপাতাল বেসরকারি স্বাস্থ্য খাতের আওতাভুক্ত।

নিবন্ধন পাওয়ার পর প্রতিষ্ঠানগুলো শর্ত মেনে চলছে কি না, সে ব্যাপারে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ ও নজরদারি জোরদার করার উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।
শেখ দাউদ আদনান, উপপরিচালক, হাসপাতাল শাখা, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর

হাসপাতালের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পেলেও এসবের পরিচালনা ব্যবস্থাপনায় ঘাটতি আছে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান নিয়ে এই গবেষণায় অর্থায়ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের দাতা সংস্থা ইউনাইটেড স্টেটস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ইউএসএআইডি)।

গবেষণায় ১২টি সিটি করপোরেশনসহ ও ১০টি জেলার মোট ১ হাজার ১১৭টি প্রতিষ্ঠানের তথ্য সংগ্রহ করা হয়। গবেষকেরা এসব প্রতিষ্ঠানের দলিল পর্যালোচনার পাশাপাশি একটি প্রশ্নপত্র পূরণ করেন। এ ছাড়া বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পর্কিত ৩১ জনের বিশেষ সাক্ষাৎকার নেন।

অনুষ্ঠানে গবেষণা ফলাফল উপস্থাপন করেন আইসিডিডিআরবির মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য বিভাগের জ্যেষ্ঠ পরিচালক শামস্ এল আরেফিন। তিনি বলেন, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো (বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ল্যাবরেটরিজ) চলে ১৯৮২ সালের অধ্যাদেশের মাধ্যমে। ওই অধ্যাদেশে বলা আছে, প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকতে হবে।

কিন্তু সেসব ওষুধের কথা সুনির্দিষ্টভাবে বলা হয়নি। তবে বাংলাদেশ হেলথ ফ্যাসিলিটি সার্ভেতে অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের তালিকায় ১৪টি ওষুধের নাম আছে। আইসিডিডিআরবির গবেষণার সময় মাত্র ৭ শতাংশ প্রতিষ্ঠানে এই ১৪টি অত্যাবশ্যকীয় ওষুধ পাওয়া গিয়েছিল।

ওই অধ্যাদেশে বলা আছে, নিবন্ধনের জন্য প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে ৩৬ ধরনের যন্ত্রপাতি বা সরঞ্জাম থাকতে হবে। গবেষকেরা একটি প্রতিষ্ঠানেও তালিকাভুক্ত ৩৬ ধরনের যন্ত্রপাতি বা সরঞ্জাম পাননি।

যেকোনো প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধনের জন্য কিছু সহায়ক দলিলের প্রয়োজন হয়। এর মধ্যে আছে কর সনদ, ভ্যাট সনদ, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ও মাদকবিষয়ক ছাড়পত্র।

গবেষণায় দেখা যায়, নিবন্ধনের জন্য কর সনদ জমা দেয়নি ১৪ শতাংশ প্রতিষ্ঠান, ৪২ শতাংশ প্রতিষ্ঠান ভ্যাট সনদ জমা দেয়নি, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র দেয়নি ৬৮ শতাংশ প্রতিষ্ঠান এবং মাদকবিষয়ক ছাড়পত্র জমা দেয়নি ৭৫ শতাংশ প্রতিষ্ঠান। ১৯৮২ সালের অধ্যাদেশে নিবন্ধনের জন্য সাতটি বাধ্যতামূলক শর্তের উল্লেখ আছে। মূল্যায়নকৃত প্রতিষ্ঠানের ৯০ শতাংশ সাতটির মধ্যে তিনটি শর্ত পূরণ করতে পেরেছিল।

করণীয়

গবেষকেরা বেশ কিছু সুপারিশ তুলে ধরেন। তাঁরা বলেন, ১৯৮২ সালের আইনের বিধিমালা চূড়ান্ত করা দরকার। বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক পরিদর্শনের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জনবল বাড়ানো উচিত। এসব বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ওপর নজরদারি বাড়ানোর জন্য সরকারের অন্যান্য বিভাগের সঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত আলোচনা হওয়া দরকার।

অনুষ্ঠানে একাধিক সরকারি কর্মকর্তার মধ্যে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল শাখার উপপরিচালক শেখ দাউদ আদনান। তিনি বলেন, নিবন্ধনপ্রক্রিয়া আগের চেয়ে অনেক সহজ করা হয়েছে। নিবন্ধনের সময় সব শর্ত পূরণ হচ্ছে কি না, তা কঠোরভাবে দেখার ব্যবস্থা আছে। তবে নিবন্ধন পাওয়ার পর প্রতিষ্ঠানগুলো শর্ত মেনে চলছে কি না, সে ব্যাপারে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ ও নজরদারি জোরদার করার উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।

মানুষের মধ্যে এই ধারণা আছে যে দেশে অনেক হাসপাতাল, ক্লিনিক ও রোগনির্ণয় কেন্দ্র চলছে অবৈধভাবে। এ নিয়ে গণমাধ্যমে নিয়মিত খবর প্রকাশ পেতে দেখা যায়। এ বছরের ২৬ মে অবৈধ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

অভিযানের তিন মাস পর ২৭ আগস্ট অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) আহমেদুল কবীর এক অনুষ্ঠানে মাধ্যমে সাংবাদিকদের বলেন, গত তিন মাসে অবৈধ ১ হাজার ৬৪১টি বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও রোগনির্ণয় কেন্দ্র বন্ধ করা হয়েছে। এ সময় ১ হাজার ৪৮৯টি প্রতিষ্ঠানকে নতুন লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ২ হাজার ৯৩০টি প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন নবায়ন করা হয়েছে।