শিক্ষকদের জোর করে সই নেওয়া পদত্যাগপত্র বাতিলের আহ্বান বাকশিসের

শিক্ষকদের জোর করে পদত্যাগ করানোর ঘটনার প্রতিবাদে মানববন্ধন করে বাংলাদেশ কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। ঢাকা, ৩১ আগস্টছবি : সাজিদ হোসেন

ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানের পর দেশের একটি মহল শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করে শিক্ষকদের পদত্যাগে বাধ্য করছে। কর্তৃপক্ষকে এ ধরনের পদত্যাগপত্র গ্রহণ না করার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ কলেজ–বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি (বাকশিস)।

আজ শনিবার রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে এক মানববন্ধনে এ দাবি জানান বাকশিসের নেতারা। যাঁরা জোর করে পদত্যাগপত্রে সই নিয়েছেন, সরকার তাঁদের বিরুদ্ধে এক সপ্তাহের মধ্যে ব্যবস্থা না নিলে বৃহত্তর পরিসরে বাকশিস কর্মসূচি ঘোষণা করবে বলে জানানো হয় মানববন্ধনে।

মানববন্ধনে শিক্ষকেরা বলেন, শিক্ষকদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অনিয়ম বা দুর্নীতির অভিযোগ থাকলে প্রাতিষ্ঠানিক বিধিমালা ও রাষ্ট্রের আইনের মাধ্যমে বিচার করা উচিত। কিন্তু তা না করে শিক্ষকদের জুতার মালা পরিয়ে, টানাহ্যাঁচড়াসহ নানাভাবে অসম্মান করে জোরপূর্বক পদত্যাগ করানো হচ্ছে, যা নিন্দনীয়। যাঁরা শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করে এ ধরনের ঘটনা ঘটাচ্ছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। শিক্ষক–শিক্ষার্থীদের মধ্যে এমন বিভেদ ও অনাস্থা তৈরি হলে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা ভেঙে পড়বে।

বাকশিসের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক আজিজুর রহমান মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন। তিনি বলেন, ৫ আগস্টের পর থেকে শিক্ষকদের ওপর নিপীড়ন চলছে। বিশেষ করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের শিক্ষকদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা হয়েছে। শিক্ষক হিসেবে তাঁরা এ ধরনের ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছেন।

অধ্যাপক আজিজুর রহমান আরও বলেন, শিক্ষক অন্যায়–অবিচার করলে প্রাতিষ্ঠানিক নিয়মকানুন বা রাষ্ট্রীয় আইন প্রয়োগ করে ব্যবস্থা নিন। কিন্তু অসম্মান করে কেন পদত্যাগে বাধ্য করা হচ্ছে? যেসব শিক্ষকদের জোর করে পদত্যাগপত্রে সই করানো হয়েছে, সেসব পদত্যাগপত্র গ্রহণ না করার বিষয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে নির্দেশনা দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

আরও পড়ুন

মানববন্ধনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, ফরাসি বিপ্লবকে ঘিরে ইংরেজ সাহিত্যিক চার্লস ডিকেন্স বলেছিলেন, ‘এটা সর্বশ্রেষ্ঠ সময়, এটা নিকৃষ্ট সময়’। তাঁর মতে, যেকোনো বিপ্লব বা জাগরণ হলে একটি শূন্যতা সৃষ্টি হয়। বিপ্লবের মাধ্যমে উন্নততর ব্যবস্থা পেতে যাকে তাড়িয়ে দেওয়া দরকার, তাকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। এটা সর্বশ্রেষ্ঠ সময়। আর নিকৃষ্ট সময় বলতে তিনি বলেছেন, এই বিপ্লবের পর অনেক নিরপরাধ লোককে হত্যা করা হয়েছিল, অন্যায় করা হয়েছিল।

ফরাসি বিপ্লবের উদাহরণ দিয়ে ছাত্র–জনতার অভ্যূত্থানের বিষয়ে অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, শিক্ষার্থীরা অসাধ্য সাধন করেছেন। এখন তাঁদের সৃষ্টি করার সময়। নিজেদের হাতে আইন তুলে নেওয়ার সময় নয়।

আরও পড়ুন

বাকশিসের ঢাকা মহানগরের সভাপতি অধ্যাপক মিজানুর রহমান মজুমদার বলেন, সহস্রাধিক শিক্ষককে জোর করে পদত্যাগ করানো হয়েছে বলে তাঁরা জানতে পেরেছেন। এ ধরনের ন্যক্কারজনক ঘটনার বিরুদ্ধে যাঁর যাঁর অবস্থান থেকে প্রতিবাদ জানানো দরকার।

মানববন্ধনটি সঞ্চালনা করেন বাকশিসের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও লালমাটিয়া হাউজিং সোসাইটি স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ আকমল হোসেন। তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে দেশে পটপরিবর্তন হলেও শিক্ষকদের হেনস্তা করার ক্ষেত্রে কোনো পরিবর্তন নেই। শিক্ষক–শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিশ্বাসের জায়গা বিঘ্নিত হলে শিক্ষাব্যবস্থা ভেঙে পড়বে। দেশগঠন হুমকিতে পড়বে।

মানববন্ধনে শিক্ষকদের মধ্যে আরও বক্তব্য দেন অধ্যাপক বদিউর রহমান, অধ্যাপক খোরশেদ আলম ভূঁইয়া প্রমুখ।

আরও পড়ুন