রায়েরবাজার স্মৃতিসৌধজুড়ে শ্রদ্ধার ফুল
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে রাজধানীর রায়েরবাজারে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে সমবেত হয়ে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন সর্বস্তরের মানুষ। আজ শনিবার ভোর থেকে সেখানে ভিড় জমতে থাকে। শ্রদ্ধার ফুলে ভরে ওঠে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধের বেদি।
আজ রায়েরবাজার শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে আসা বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলেছে প্রথম আলো। কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসরের প্রেসিডিয়াম সদস্য শ্যামল বিশ্বাস বলেন, ‘স্বাধীনতার ৫৪ বছরেও মানবিক, গণতান্ত্রিক ও সমতার বাংলাদেশ বিনির্মাণ করা যায়নি। এ কারণেই গত ৫ আগস্ট একটি গণ-অভ্যুত্থান হয়েছে। এখন স্থিতিশীল গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখি। স্থিতিশীল গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরি হলেই কেবল অসম্পূর্ণ স্বপ্নগুলো বাস্তবায়ন সম্ভব হবে। পাশাপাশি মানবিক ও বিজ্ঞানমনস্ক দেশপ্রেমিক প্রজন্ম গড়ে উঠবে।’
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এ এস এম আমানুল্লাহ বলেন, এমন একটি বৈষম্যহীন রাষ্ট্র গড়ে তুলতে হবে, যেখানে সবার সমান সুযোগ থাকবে।
শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, পেশাজীবী সংগঠন, শ্রমিক সংগঠন, ছাত্রসংগঠন, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। এ ছাড়া নতুন প্রজন্মসহ সর্বস্তরের মানুষ শ্রদ্ধা জানানোর জন্য সেখানে জড়ো হন।
মোহাম্মদপুরের শের শাহ সূরি রোড থেকে পাঁচ বছরের সন্তান শফিউল ইসলামকে সঙ্গে নিয়ে বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে এসেছিলেন বেসরকারি চাকরিজীবী আনোয়ারুল ইসলাম। ছেলেকে একটি ছোট্ট পতাকা কিনে দিয়েছেন তিনি। নিজের বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন উল্লেখ করে আনোয়ারুল প্রথম আলোকে বলেন, ছেলেকে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস সম্পর্কে জ্ঞান দিতেই বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে নিয়ে এসেছেন। ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে ছেলেকে নিয়ে জাতীয় স্মৃতিসৌধেও যাওয়ার পরিকল্পনা আছে তাঁর।
আনোয়ারুল বলেন, স্বাধীনতার ৫৪ বছরে যারাই ক্ষমতায় এসেছে, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করেছে। তাঁর প্রত্যাশা, নতুন প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জেনে দেশ গঠনে একসঙ্গে কাজ করবে।
১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে পরাজয় নিশ্চিত জেনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করার ঘৃণ্য চক্রান্ত করে। তারা তাদের এদেশীয় দোসরদের নিয়ে শিক্ষক, বিজ্ঞানী, চিন্তক, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, শিল্পী, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, ক্রীড়াবিদ, সরকারি কর্মকর্তাসহ বহু মানুষকে হত্যা করে। বিশেষ করে ১৪ ডিসেম্বর তারা ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চালায়। মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত বিজয়ের পর রাজধানীর রায়েরবাজারের ইটখোলা, মিরপুরের বধ্যভূমিসহ ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন স্থানে বুদ্ধিজীবীদের চোখ-হাত বাঁধা ক্ষতবিক্ষত মৃতদেহ পাওয়া যায়। এর মধ্য দিয়ে জাতিকে মেধাশূন্য করার ষড়যন্ত্র প্রকাশিত হয়ে পড়ে। স্বাধীনতার পর থেকে ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।