দেশ গড়তে নতুন প্রজন্মের হাতে দায়িত্ব এখন। তাদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধারাও থাকবেন। ইতিহাস ভুলে গেলে চলবে না। সেখান থেকে শিক্ষা নিতে হবে।
আজ সোমবার মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত বিজয়মেলায় এ কথা বলেন এক মুক্তিযোদ্ধা। পুরান ঢাকার জনসন রোডের ঢাকা জেলা প্রশাসক কার্যালয় প্রাঙ্গণে এই বিজয়মেলা হয়। এবার প্রথমবারের মতো ঢাকাসহ সব জেলা-উপজেলায় বসছে এই মেলা। এতে ঢাকা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১৩৫ জন মুক্তিযোদ্ধাকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
বিজয়মেলায় উপস্থিত হয়ে মুক্তিযোদ্ধারা নিজেদের ভাবনা তুলে ধরেন। মুক্তিযোদ্ধা লুৎফা হাসীন রোজী যুদ্ধকালীন সময়ের স্মৃতিচারণা করেন। তিনি বলেন, ‘দেশটা স্বাধীন হয়েছে, কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্নের বাস্তবায়ন হয়নি। মানুষ ৫৩ বছরে কোনো না কোনোভাবে শোষণের শিকার হয়েছে। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ গড়ে ওঠেনি। মুক্তিযুদ্ধ শেষ হয়নি।’ তিনি বলেন, ‘দেশ গড়তে নতুন প্রজন্মের হাতে দায়িত্ব এখন। তাদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধারাও থাকবেন। ইতিহাস ভুলে গেলে চলবে না। সেখান থেকে শিক্ষা নিতে হবে।’
আরেক মুক্তিযোদ্ধা মুকিত মজুমদার বলেন, ‘একাত্তরে যদি সবাই ঝাঁপিয়ে না পড়ত, তাহলে স্বাধীনতা অসম্ভব ছিল। ৫৩ বছরে অনেক কিছুই অর্জিত হয়নি। কিন্তু এখন সফল হতে হবে এবং অর্জন ধরে রাখতে হবে। যে মুক্তিযোদ্ধারা বেঁচে আছেন, তাঁদের ভূমিকা শেষ হয়ে যায়নি। দেশকে ভালো রাখার দায়িত্ব সবার।’
জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ তাঁদের পরিবার, স্বজনেরা বিজয়মেলায় এসেছেন। এ ছাড়া আশপাশের বাসিন্দারাও কেউ কেউ ঘুরে দেখছেন স্টলগুলো। পাটুয়াটুলীর বাসিন্দা আব্দুর রহমান দুই মেয়েকে নিয়ে এসেছেন। একজন স্কুলে গেলেও আরেকজন এখনো বেশ ছোট। আব্দুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বেশি দূরে যাওয়ার সুযোগ হয়নি। তাই বাসার কাছেই এমন আয়োজন পেয়ে একটু ঘুরতে এসেছেন।
এই মেলায় ২২টি স্টল বসানো হয়েছে। জেলা প্রশাসন ছাড়াও সরকারের বিভিন্ন সংস্থা, দপ্তর স্টল নিয়ে বসেছে। বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের স্টল থেকে বেলা ১১টার মধ্যেই বিক্রি শুরু হয়ে গেছে। অন্যরাও পণ্য ও সেবার পসরা নিয়ে বসেছেন।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) স্টলে জামদানি পণ্য নিয়ে এসেছেন তাঁতি মো. আবুল হোসেন। তিনি বলেন, মেলায় বিক্রি হওয়ার চেয়ে তাঁর নিজের কাজ দেখানো ও পরিচিতি বাড়াতেই তিনি এসেছেন।
বিজয়মেলার উদ্বোধনে ঢাকা জেলা প্রশাসক তানভীর আহমেদ মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সম্মান জানিয়ে বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা জানান এবং সবাইকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে মেলায় অংশ নেওয়ার আহ্বান জানান।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ঢাকার পুলিশ সুপার আহম্মদ মুঈদ বলেন, পৃথিবীর সব পরিবর্তনের সঙ্গে ছাত্ররা যুক্ত। দেশের ’৫২, ’৬৯, ’৭১, ’২৪ এই ছাত্রদের ভূমিকা দেখে গেছে। জুলাইতে বাচ্চাদের ঘরে আটকে রাখা যায়নি। ছাত্ররা জেগে উঠেছে এবং জাতিকে শৃঙ্খলমুক্ত করায় এগিয়ে এসে বিজয় এনে দিয়েছে। সঠিক মুক্তিযুদ্ধ এবং সঠিক মুক্তিযোদ্ধাদের জানতে হবে। সত্যের ওপর ভর করে দেশপ্রেম নিয়ে দেশ গড়তে হবে।
বিজয়মেলায় আরও বক্তব্য দেন ঢাকা জেলার সিভিল সার্জন জিল্লুর রহমান, ঢাকা জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ফুয়ারা খাতুন, ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের উপপরিচালক ইকবাল হোসেনসহ মুক্তিযোদ্ধারা।