২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

ফেসবুকে কিডনি কেনাবেচা, দাতা এখন দালাল

দেশের মানুষ বিদেশে কিডনি বিক্রি করছেন। অনেকে ঠকছেন। অনেকের শরীর ভালো নেই।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কিডনি কেনাবেচার বাজার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। কিডনি ক্রেতা ও বিক্রেতাকে ফেসবুক গ্রুপে কিডনি নিয়ে দর-কষাকষি করতে দেখা যায়। অন্যদিকে প্রলোভনে পড়ে অতীতে যাঁরা কিডনি বিক্রি করেছিলেন, তাঁদেরই কেউ কেউ এখন কিডনি বিক্রির দালালে পরিণত হয়েছেন।

কিডনি কেনাবেচা বন্ধ করতে সরকারের পক্ষ থেকে তেমন কোনো কার্যকর উদ্যোগ না থাকায় কিডনির ব্যবসা বড় হয়েছে। এক যুগ আগে জয়পুরহাট জেলার কালাই উপজেলা কিডনি বিক্রির জন্য সংবাদের শিরোনাম হয়েছিল। কালাইয়ে এখনো এই ব্যবসা চলছে। পাশের উপজেলা পাঁচবিবিতেও ব্যবসা সম্প্রসারিত হয়েছে—এমন প্রমাণও পাওয়া গেছে।

সমাজের দরিদ্র ও দুর্বল শ্রেণির মানুষ কিডনি বিক্রি করছেন। সব শ্রেণির মানুষের প্রয়োজন হলেও কিডনি কিনছেন ধনী, ক্ষমতাবান ও প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। কেনা ও বেচার মধ্য আছে দালাল। প্রভাবশালীদের ছত্রচ্ছায়ায় থেকে এসব দালাল দরিদ্র কিডনিদাতাদের নানাভাবে প্রতারিত করছেন।

কিডনি রোগ বেড়ে যাওয়ায় প্রতিস্থাপনের জন্য কিডনির চাহিদা বেড়েছে। দেশের আইন মেনে নিকটাত্মীয়ের দেওয়া কিডনির মাধ্যমে এই চাহিদা পূরণ হচ্ছে না। কিডনি রোগ বিশেষজ্ঞদের একটি হিসাব বলছে, দেশে বছরে প্রায় পাঁচ হাজার কিডনি প্রতিস্থাপন দরকার। দেশের হাসপাতালগুলোতে বছরে ৫০০ কিডনিও প্রতিস্থাপন করা হয় না। সচ্ছল মানুষ দেশের বাইরে কিডনি প্রতিস্থাপন করাচ্ছেন।

প্রতিস্থাপনের জন্য আইন মেনে যখন কেউ কিডনি সংগ্রহ করতে পারেন না, তখন কিডনি কিনতে চান। তাঁরা দালালের শরণাপন্ন হন। অথবা দালালেরা বিভিন্ন বিশেষায়িত কিডনি হাসপাতালে খোঁজ রাখেন, কোন রোগীর কিডনি প্রয়োজন। এই দালালেরাই জানেন কার শরীর থেকে কিডনি কেনা সম্ভব। কিডনিদাতার স্বাস্থ্য পরীক্ষা, প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে যাওয়ার প্রয়োজন হলে পাসপোর্ট–ভিসার বন্দোবস্ত করেন দালালেরা। বিদেশের কোন হাসপাতালে কিডনি প্রতিস্থাপন হবে, তা–ও জানেন দালালেরা। কিডনিদাতা, কিডনিগ্রহীতা, পুলিশ কর্মকর্তা, সাংবাদিক, সমাজকর্মী, চিকিৎসক, নার্স, আইনজীবী, হাসপাতাল ব্যবস্থাপকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিভিন্ন পেশার মানুষ এই কিডনি কেনাবেচা চক্রের সদস্য।

আরও পড়ুন

ডিজিটাল কিডনির হাট

নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি বাংলাদেশ টেলিভিশনে জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদের নক্ষত্রের রাত নামের একটি ধারাবাহিক নাটক প্রচারিত হতো। ১৯৯৫ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি প্রচারিত একটি পর্বে বাড়ির মালিকের চরিত্রে অভিনয় করা শিল্পী আবুল হায়াতের কাছে নিজের দেশ–বিদেশ ভ্রমণের শখ পূরণের জন্য অর্থ জোগাড় করতে এক অভিনব সিদ্ধান্তের কথা জানান ভাড়াটের চরিত্রের আসাদুজ্জামান নূর। তিনি অর্থ জোগাড় করতে নিজের কিডনি বিক্রি করার ইচ্ছার কথা জানান। হিমালয় পর্বত ও তাজমহলের সৌন্দর্য দেখতে নিজের কিডনি বিক্রি করার ওই আকাঙ্ক্ষার কথা শুনে হতভম্ব হয়ে যান আবুল হায়াত। ২৭ বছর আগের এমন দৃশ্য এখন আর নাটকের মধ্যে সীমাবন্ধ নয়। আধুনিক যেকোনো ব্যবসার মতো কিডনি কেনাবেচার ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা হচ্ছে তথ্যপ্রযুক্তি বা ডিজিটাল মাধ্যম।

দেশের আইনে কিডনি কেনাবেচা অপরাধ। কিন্তু ফেসবুকসহ নানা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কিডনি বিক্রির প্ল্যাটফর্ম বা বাজার বসানো হয়েছে। ফেসবুকে কিডনি বিক্রির জন্য কয়েকটি হাসপাতালের কর্মীরা ঘোষণা দিয়ে মেসেঞ্জারের ইনবক্সে যোগাযোগ করার পরামর্শ দিচ্ছেন বলেও তথ্য বেরিয়ে এসেছে।

কিডনিদাতাদের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা প্রয়োজন। কিডনি কেটে নেওয়ার পর ক্ষতস্থানে কোনো সমস্যা দেখা দিল কি না, একটি কিডনি দেওয়ার পর বাকি কিডনির ওপর চাপ বাড়ছে কি না—এসব দেখার জন্য নিয়মিত ফলোআপ চিকিৎসা দরকার।
অধ্যাপক মুহাম্মদ রফিকুল আলম, সাবেক চেয়ারম্যান, নেফ্রোলজি বিভাগ, বিএসএমএমইউ।

প্রথম আলোর অনুসন্ধানে শুধু ফেসবুকেই কিডনি বিক্রির কয়েক ডজন প্ল্যাটফর্মের খোঁজ পাওয়া গেছে। বিভিন্ন নামে পরিচালিত এসব গ্রুপে শত শত সদস্য রয়েছে। সদস্যরা গ্রুপের পেজের মধ্যে কিডনি কেনাবেচার দরদাম করছেন। বিক্রেতাদের বেশির ভাগই আর্থিক সংকটে পড়ে কিডনি বিক্রি করছেন। তবে দালালদের খপ্পরে পড়ে অনেকে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন বলে অনুসন্ধানে পাওয়া গেছে।

ই–কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালি এবং নিজের পরিবার থেকে নেওয়া ধার করা পুঁজি হারিয়ে ভারতে গিয়ে কিডনি বিক্রি করা এক যুবকের খোঁজ পেয়েছে প্রথম আলো। তিনি রাজধানীতে বৈদ্যুতিক তার প্রস্তুতকারী একটি কোম্পানিতে অল্প বেতনে চাকরি করেন। নিরাপত্তার স্বার্থে ওই যুবকের নাম–পরিচয় প্রকাশ করা হলো না। একদিকে ই–ভ্যালিতে পণ্য কেনাবেচা করতে গিয়ে তিনি নিঃস্ব হয়ে পড়েন, আরেক দিকে সন্তানসম্ভবা স্ত্রীর চিকিৎসা খরচ মেটানোর চাপ ছিল তাঁর ওপর।

এই পরিস্থিতিতে ২০২১ সালের জুলাই মাসে ওই যুবক কিডনি কেনাবেচা হয় এমন একটি ফেসবুক গ্রুপের সদস্য হন। সেখানে দুই দালালের মাধ্যমে ১০ লাখ টাকায় কিডনি বিক্রির ব্যাপারে রাজি হন তিনি। পরে ওই দুই দালালের সঙ্গে তিনি রাজধানীর উত্তরা ও মোহাম্মদপুরে একাধিকবার দেখা করেন। এই দুই দালালের একজন জুলফিকার হাসান। তিনিই মূলত মধ্যস্থতার কাজ করেন থাকেন রাজধানীর বনশ্রী এলাকায়। আর তাঁর সহযোগী ইরফান উদ্দিন থাকেন উত্তরায়।

ওই দুই দালালের মাধ্যমে কিডনি বিক্রেতা যুবকের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয় রাজধানীর একটি অভিজাত এলাকার ব্যয়বহুল বড় হাসপাতালে। পরে রাজধানীর মগবাজারের একটি হাসপাতালের

কিডনি বিভাগেও কিছু পরীক্ষা করা হয়। পরিচয়ের পাঁচ মাস পর জুলফিকারের সঙ্গে ওই যুবক গত বছরের ৯ ডিসেম্বর ভারতে যান। ওই যুবক স্ত্রী ও আত্মীয়দের বলে যান, অফিসের কাজে তাঁকে দিল্লি যেতে হচ্ছে।

তাঁকে রাখা হয় দিল্লির ৭ নম্বর সেক্টরে শারদা রেসিডেন্স নামের একটি হোটেলে। দিল্লির দুয়ারখা এলাকার ভেংকটেশ্বর হাসপাতালে তাঁর সাত–আটবার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। স্বাস্থ্য পরীক্ষা–নিরীক্ষা পর্যন্ত দালালদের কাছ থেকে ভালো ব্যবহার পান এই যুবক। একপর্যায়ে ওই যুবকের কাছ থেকে জোর করে পাসপোর্ট ও জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে নেওয়া হয়।

চলতি বছরের মার্চের প্রথম সপ্তাহের কোনো এক দিন ভেংকটেশ্বর হাসপাতালে ওই যুবকের কিডনি নেওয়া হয়। হাসপাতালটির ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখা যায়, তারা বাংলাদেশের রোগীদের কিডনি প্রতিস্থাপনে বিশেষ সুযোগ–সুবিধা দিচ্ছে।

কাকে কিডনি দেওয়া হয়েছিল, তা ওই যুবক জানেন না। হাসপাতালে তিন দিন থাকার পর দুই লাখ টাকা আর পাসপোর্ট দিয়ে তাঁকে দেশে

পাঠিয়ে দেওয়া হয়। বাকি আট লাখ টাকা চাইলে তাঁকে ভয় দেখানো হয় ও হুমকি দেওয়া হয়। তিনি এ বছরের ১০ মার্চ দেশে ফেরেন। ওই যুবক জানান, হোটেলে ও হাসপাতালে থাকার সময় বেশ কয়েকজন বাংলাদেশির সঙ্গে তাঁর দেখা ও কথা

হয়। তাঁরা গাইবান্ধা, বগুড়া ও কুড়িগ্রাম থেকে গেছেন। তাঁদের অন্তত আটজন গিয়েছিলেন কিডনি বিক্রি করতে।

প্রতারণার শিকার ওই যুবক দেশে ফিরে ভয়ে দ্রুত তাঁর মোবাইল ফোন নম্বর পরিবর্তন করে ফেলেন। বাসাও বদলে ফেলেন। কিডনি বিক্রির কথা নিজের স্ত্রী ও স্বজনদের কাছে গোপন রাখেন। পেটে অস্ত্রোপচারের দাগ দেখা যাবে—এই আশঙ্কায় স্ত্রীর সামনে শার্ট–গেঞ্জি খোলেন না। দালালেরা খুব শক্তিশালী নেটওয়ার্কের অংশ উল্লেখ করে ওই যুবক প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঋণও শোধ হয়নি। আবার কিডনিও গেছে। তার ওপর দালালদের নজরদারির মধ্যে আছি। কী করব, বুঝে উঠতে পারছি না, তাই আপনাদের কাছে আসা।’

ওই যুবকের কিডনি বিক্রির মধ্যস্থতাকারী প্রধান দালাল জুলফিকার আলী কোথায় থাকতেন, তাঁর খোঁজ পেয়েছে প্রথম আলো। তিনি থাকতেন বাসাবোর একটি আবাসিক এলাকায়। বাড়ির মালিক জানান, জুলফিকার গত বছর ওই বাড়ি ছেড়ে রামপুরা এলাকায় চলে গেছেন।

গত রাতে জুলফিকারের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, তিনি দিল্লিতে অবস্থান করছেন। গ্লোবাল হেলথ নেটওয়ার্ক নামে তাঁর একটি প্রতিষ্ঠান আছে। একজন বয়স্ক ব্যক্তি কিডনি সমস্যার সমাধানের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, খরচ পড়বে ২৭–২৯ লাখ টাকা।

কিডনি হারানো ওই যুবককে পরিচয়ের শুরুর দিকে দালালচক্রটি রাজধানীর মগবাজারের একটি হাসপাতালের চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যায়। হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সরা তাঁকে এটি বুঝিয়েছিলেন যে একটি কিডনি দিলে কোনো ক্ষতি হবে না। প্রথম আলোর দুজন প্রতিনিধি ওই হাসপাতালে গিয়ে সেখানকার দুজন কর্মচারীর কাছে একটি কিডনি কেনার ব্যাপারে আলাপ করেন। কর্মচারীরা একটি টেলিফোন নম্বর দিয়ে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন।

জানা যায়, ঢাকা শহরের একাধিক হাসপাতালে কিডনি কেনাবেচার তথ্য পাওয়ার সুযোগ আছে। এমন একটি হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের টয়লেটের দেয়ালে কিডনি কেনাবেচার বিজ্ঞাপন। তাতে বেশ কিছু মুঠোফোন নম্বর দেওয়া। এগুলো মূলত দালালদের নম্বর। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি জানে।

পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞ কিডনি চিকিৎসক বলেছেন, কিডনি ক্রেতা বা রোগী, বিক্রেতা ও মধ্যস্থতাকারী দালালেরা একসঙ্গে ভারতের কলকাতা, দিল্লিসহ কয়েকটি বড় শহরের নির্দিষ্ট কিছু হোটেল ও হাসপাতালে গিয়ে কিডনি কেনাবেচার কাজ করছেন। তাঁদের পরিচয় ঘটছে মূলত ফেসবুকে।

ফেসবুক গ্রুপ কিডনি ডোনেট ফর বাংলাদেশ, কিডনি লাইভ ট্রান্সপ্ল্যান্ট সার্ভিস, বিডি কিডনি পেশেন্ট বাংলাদেশ, ব্লাড ডোনার–কিডনি ডোনার পেশেন্ট গাইড, কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্ট অ্যান্ড ডোনার কমিউনিকেশন ইন্ডিয়ান হাসপাতাল, কিডনি নেটওয়ার্ক, কিডনি বাংলাদেশ, কিডনি পেশেন্ট বাংলাদেশ, সলিউশন ফর কিডনি প্রবলেম, লুকিং ফর এ কিডনি ডোনারসহ এসব গ্রুপের সদস্য হতে হলে অবশ্য অ্যাডমিনের কাছে জাতীয় পরিচয়পত্র এবং ফোন নম্বর দিয়ে সদস্য হওয়ার আবেদন করতে হয়। এসব গ্রুপের বেশির ভাগ সংগঠক মূলত কিডনি দালাল।

দাতা থেকে দালাল

জয়পুরহাট জেলার কালাই উপজেলার ভেরেন্ডি গ্রামের একই পরিচারের চারজন ২০০৯ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে কিডনি বিক্রি করেছিলেন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন বাবা, দুই ছেলে ও এক ছেলের স্ত্রী।

ওই দুই ছেলের একজনসহ ছয়জনকে ১৩ মে গ্রেপ্তার করেছে জয়পুরহাটের গোয়েন্দা পুলিশ। পুলিশ বলছে, তাঁদের বিরুদ্ধে কিডনি কেনাবেচার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ আছে। জয়পুরহাটের পুলিশ সুপার মাছুম আহাম্মদ ভূইয়া প্রথম আলোকে বলেন, ওই পরিবারের একজন কিডনি বিক্রি করেছিলেন ২০০৯ সালে। এখন তিনি এলাকার মানুষকে কিডনি বিক্রির জন্য প্রলুব্ধ করেন। এখন তিনি দালাল, মধ্যস্বত্বভোগী।

এলাকায় কত মানুষ ইতিমধ্যে কিডনি বিক্রি করেছেন, কিডনি বিক্রি করা কত মানুষ এখন দালালের কাজ করছেন—এমন প্রশ্নের উত্তরে মাছুম আহাম্মদ ভূইয়া প্রথম আলোকে বলেন, কত মানুষ কিডনি বিক্রি করেছেন, তার হিসাব সংগ্রহ করা হয়নি। তবে একসময় কিডনি বিক্রি করে এখন দালালি করছেন—এমন কিছু ব্যক্তির সন্ধান পুলিশ পেয়েছে। সুনির্দিষ্টভাবে আট–নয়জনের তথ্য পুলিশের কাছে আছে। সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে।

১৩ মে গ্রেপ্তার হওয়া ছয়জনের মধ্যে একজন জয়পুরবহুতি গ্রামের বাসিন্দা। তিনি ২০০৬ সালে, একই গ্রামের আরেকজন ২০০৯ সালে এবং দুর্গাপুর গ্রামের একজন ২০১৬ সালে কিডনি বিক্রি করেন। পুলিশ সুপার বলছেন, তাঁরা প্রত্যেকেই এখন কিডনি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত।

তাঁদের একজনের বাবার সঙ্গে ৩০ মে কথা হয়। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর ছেলে পাঁচ–ছয় বছর আগে কিডনি বিক্রি করেছিলেন। এখন ঢাকার আশুলিয়া এলাকায় থাকেন। পবিত্র ঈদুল ফিতরের সময় বাড়ি এসেছিলেন। ছেলে ঢাকায় থেকে কী করেন, তা তিনি স্পষ্ট জানেন না। শুনেছেন ছেলে রিকশা চালান। তবে পুলিশ বলছে অন্য কথা। তাঁর ছেলেকে ৩০ মে ঢাকার আশুলিয়া থেকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ।

পরদিন ৩১ মে জয়পুরহাট পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার মাছুম আহাম্মদ ভূইয়া বলেন, গ্রেপ্তার হওয়া ওই ব্যক্তি কিডনি ক্রয়–বিক্রয় কাজের সঙ্গে জড়িত।

সংবাদ সম্মেলনে মাছুম আহাম্মদ ভূইয়া আরও বলেন, গোয়েন্দা তথ্য ছিল যে কালাই উপজেলার কয়েকটি গ্রামের কয়েকজন মানুষ বেশ কিছুদিন ধরে এলাকায় নেই। তাঁদের পরিবারের কাছ থেকে জানা যায়, তাঁরা ঢাকায় থাকেন, তবে ঠিক কী কাজ করেন, তা পরিবারের সদস্যরা বলতে পারেন না। সুনির্দিষ্টভাবে দু–একজনের তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে জানা যায়, তাঁরা ঢাকায় থেকে কিডনি কেনাবেচার চক্রের সঙ্গে জড়িত।

বীর মুক্তিযোদ্ধা ও কালাই উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সভাপতি মনীশ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘যাঁরা আগে কিডনি বিক্রি করেছেন, তাঁরা পথঘাট–ফন্দিফিকির জানেন। তাঁদের অনেকে এলাকায় এসে দরিদ্র মানুষকে ভুল বোঝাচ্ছেন। বলছেন, একটি কিডনি দিলে ক্ষতি হয় না, একটি কিডনি দিয়ে তিনি সুস্থ আছেন।’

মনীশ চৌধুরী আরও বলেন, ২০১২–১৩ সালের পর থেকে এলাকার মানুষের কিডনি বিক্রির খবর কমে আসতে থাকে। গত এক বছরে হঠাৎ তা বেড়ে গেছে।

৩০ ও ৩১ মে প্রথম আলোর দুজন প্রতিবেদক কালাই উপজেলার ভেরেন্ডি, জয়পুরবহুতি, উলিপুর, বৈরাগীরবাজার গ্রাম ঘুরে নানা বয়সী মানুষের সঙ্গে কথা বলেন। একজন কিশোর বলেছে, এলাকায় কারা কিডনি বিক্রি করেছে, তা সবাই জানে, পথ দিয়ে হাঁটলে কিডনি দিয়েছে এমন দু–একজন চোখে পড়ে। একজন ব্যবসায়ী বলেছেন, কারা ঢাকা থেকে এসে কিডনি বিক্রির জন্য মানুষকে প্ররোচিত করছে, তা–ও প্রতিবেশীরা জানে।

* ফেসবুকে কিডনি কেনাবেচার রয়েছে অনেক সক্রিয় গ্রুপ।

* জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার পর কিডনি ব্যবসা ছড়িয়েছে পাঁচবিবিতে।

* পুলিশ রাজধানীর একাধিক হাসপাতালের সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে। একটি হাসপাতালের শৌচাগারে কিডনি বেচাকেনার বিজ্ঞাপন দেখা গেছে।

* কিডনি বিক্রেতারা গ্রাম থেকে ঢাকা, ঢাকা থেকে বিদেশ যান। তিন স্তরেই আছে দালাল।

কালাই উপজেলা সদরের একাধিক ব্যক্তি বলেছেন, অন্য দু–একটি পেশার মানুষও সুযোগমতো কিডনি বিক্রিতে মধ্যস্থতা করছেন। জয়পুরহাটের একটি থানায় কাজ করতেন এমন একজন পুলিশ কর্মকর্তার কিডনি প্রতিস্থাপন হয়েছে। ওই পুলিশ কর্মকর্তাকে ‘কিডনিদাতা’ সংগ্রহে সহায়তা করেছিলেন কালাইয়ের একজন ব্যবসায়ী।

এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার মাছুম আহাম্মদ ভূইয়া প্রথম আলোকে বলেন, ব্যবসায়ী বা অন্য পেশার মানুষও কিডনির ব্যবসায় জড়িত কি না, তা–ও অনুসন্ধান করে দেখা শুরু হয়েছে।

দুজন রক্ষা পেয়েছে

টাকাহুত জগন্নাতপুর গ্রামের একজন দরিদ্র বাসিন্দা কিডনি বিক্রির জন্য ভারতে যাওয়ার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। পুলিশি তৎপরতায় তিনি এ যাত্রা রক্ষা পেয়েছেন। ৩০ মে কালাই মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কার্যালয়ে তাঁর সঙ্গে প্রথম আলোর কথা হয়।

ওই ব্যক্তির সেলুনে নিয়মিত চুল কাটাতে আসতেন একই গ্রামের এক সচ্ছল ব্যক্তি। চুল কাটার পারিশ্রমিক ছাড়াও তাঁকে নিয়মিতভাবে ২০০ থেকে ৫০০ টাকা বকশিশ দিতেন তিনি। ওই ব্যক্তির কাছ থেকে টাকাও ধার নিতেন দরিদ্র ব্যক্তিটি। একসময় ঋণের পরিমাণ পাঁচ হাজার টাকা ছাড়িয়ে যায়। একপর্যায়ে ওই সচ্ছল ব্যক্তি বলেন, কিডনি বিক্রি করলে ক্ষতি নেই। কিডনি বিক্রি করে যে টাকা ওই দরিদ্র ব্যক্তি পাবেন, তা দিয়ে ঋণের টাকা শোধ করেও বাড়তি টাকা থেকে যাবে। দরিদ্র ব্যক্তিটি প্রথম আলোকে বলেন, তাঁকে প্রথমে ঢাকায় নেওয়া হয়। আশুলিয়ায় থাকার ব্যবস্থা করা হয়। কলাবাগানের একটি ক্লিনিকে রক্ত পরীক্ষা করা হয়। এরপর ২ হাজার টাকা হাতে ধরিয়ে দিয়ে কালাই পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ওই সচ্ছল ব্যক্তি বলেছিলেন, তাঁকে ও তাঁর স্ত্রীর পাসপোর্ট করতে হবে বিদেশ যাওয়ার জন্য। পাসপোর্ট করার জন্য বাড়তি টাকাও দেওয়া হয়।

ওই দরিদ্র দম্পতি নিজেদের কাগজপত্র জমা দেন জয়পুরহাট জেলা পাসপোর্ট কার্যালয়ে। তথ্য যাচাই করতে এসে পুলিশের সন্দেহ হয়। তাঁরা কেন সাপপোর্ট করবেন, কেন ভারত যাবেন—এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে আসল তথ্য বেরিয়ে পড়ে। জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ জানতে পারে, ওই ব্যক্তি পাসপোর্ট করে বিদেশ গিয়ে কিডনি বিক্রি করতে চান। তাঁর দেওয়া তথ্যের সূত্র ধরে গোয়েন্দা পুলিশ জানতে পারে, ওই সচ্ছল ব্যক্তিসহ টাকাহুত গ্রামের আরও দুজন কিডনি বেচাকেনা চক্রের দালাল।

ওই দরিদ্র ব্যক্তির ভারত যাওয়া হয়নি। কিন্তু ভারত পর্যন্ত গিয়েছিলেন পাঁচবিবি উপজেলার গোরনা গ্রামের একজন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, চার লাখ টাকায় একটি কিডনি বিক্রি করবেন এমন চুক্তি হয়েছিল। পাসপোর্ট তৈরি, ভিসা সংগ্রহ, ভারতে যাওয়া, কিডনির দাম ঠিক করা—সবকিছুর ব্যবস্থা করেছিলেন দুই ব্যক্তি। ২০২১ সালে তিনি ভারতের বেঙ্গালুরু যান। তিনি বলেন, ‘আমি একপর্যায়ে ভয় পেয়ে যাই। স্থানীয় পুলিশকে জানাই। ভারতের পুলিশের সহায়তায় আমি দেশে ফিরে আসি।’

কালাই থেকে পাঁচবিবি

কিডনি বিক্রির জন্য কালাই বারবার সংবাদের শিরোনাম হয়েছে। অনেকের মনে ধারণা জন্মেছে যে সহজে কিডনি পাওয়া যায় কালাইয়ের গ্রামগুলোতে। ছোট একটি এলাকা থেকে কত মানুষ এ পর্যন্ত কিডনি দিয়েছে, তার কোনো অনুসন্ধান কেউ করেনি।

কালাইয়ের মানুষের কিডনি বেচাকেনা নিয়ে ২০১১ সালের ৩০ আগস্ট প্রথম আলোতে প্রথম প্রতিবেদন ছাপা। তারপর বেশ কয়েক দিন পরপর প্রতিবেদন ছাপা হতে থাকে। তখন প্রথম আলোর অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, কালাইয়ের বিভিন্ন গ্রামের প্রায় ২০০ মানুষ একটি করে কিডনি বিক্রি করেছেন।

কালাই উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সভাপতি মনীশ চৌধুরী বলেন, ‘আমি যখন বলি আমার বাড়ি কালাই, তখনই কারও মনে হতে পারে আমার একটি কিডনি নেই। বিক্রি করে দিয়েছি। শুধু আমি না, অনেকেই কালাইয়ের পরিচয় দিতে লজ্জা বোধ করে।’

কিন্তু কেন কালাইয়ের মানুষ কিডনি বিক্রি করছে। শুধু কি দারিদ্র্যের কারণে মানুষ এই পথে গেছেন? একই রকম দারিদ্র্য পরিস্থিতি দেশের আরও অনেক এলাকায় আছে। সেখানে কেন এমন হচ্ছে না। এই প্রশ্নের উত্তর কারও জানা নেই।

তবে পাশের উপজেলা পাঁচবিবির একজন বাসিন্দা ভারতে কিডনি দিতে গিয়ে ফিরে এসেছেন। তা হলে কিডনি কেনাবেচার জাল কি আরও বিস্তৃত হয়ে পড়েছে?

কিডনি বিক্রির বাজার বড় হওয়া প্রসঙ্গে জয়পুরহাটের পুলিশ সুপার মাছুম আহাম্মদ ভূইয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘কালাই থানা এলাকার পাশাপাশি পাঁচবিবি থানা এলাকাতেও কিডনি বিক্রির জন্য অসহায় গরিব মানুষকে প্রলুব্ধ করা হচ্ছে—এমন গোয়েন্দা তথ্য আছে। আমরা একটি ঘটনা জানতে পেরেছি। হয়তো আরও ঘটনা আছে।’

তিন স্তরের চক্র

জয়পুরহাটের পুলিশ প্রশাসন মনে করে, কিডনি কেনাবেচার চক্রটি তিন স্তরের। প্রথম স্তরে আছেন স্থানীয় কিছু অর্থলোভী মানুষ। তাঁরা এলাকার দরিদ্র মানুষকে লক্ষ্যবস্তু করেন। মোটা অঙ্কের টাকার লোভ দেখিয়ে দরিদ্র মানুষকে প্রলুব্ধ করেন। তাঁদের নানা ধরনের ফাঁদে ফেলেন, বিশেষ করে ঋণের ফাঁদে। একপর্যায়ে কিডনি বিক্রি করতে রাজি করান। যাঁদের রাজি করাতে পারেন, তাঁদের প্রথমে নিয়ে যান ঢাকায়।

ঢাকায় যাওয়া মানে চক্রের দ্বিতীয় স্তরে ঢোকা। দ্বিতীয় স্তরের চক্রের সদস্যরা গ্রাম থেকে আসা ব্যক্তিদের ঢাকা শহরে থাকা–খাওয়ার ব্যবস্থা

করেন, বিভিন্ন পরীক্ষা–নিরীক্ষার ব্যবস্থা করেন, পাসপোর্ট–ভিসা ও বিদেশ যাওয়ার ব্যবস্থা করেন। এই স্তরে ঢাকার কিছু হাসপাতাল ও তাদের কর্মীরা জড়িত বলে জানিয়েছে পুলিশ। তবে তদন্তের স্বার্থে এসব হাসপাতাল ও ব্যক্তিদের নাম প্রকাশ করতে চায় না পুলিশ।

এরপর গ্রামের মানুষ চক্রের তৃতীয় স্তরে ঢোকেন। ঢাকা থেকে তাঁরা চলে যান ভারত, দুবাই, সিঙ্গাপুর। সেখানে হোটেলে থাকা, হাসপাতালে নেওয়ার কাজটি করেন তৃতীয় স্তরের সদস্যরা। কালাইয়ের বহুতি গ্রামের মো. আ. সাত্তার এখন ভারতে এই কাজ করছেন বলে পুলিশ প্রথম আলোকে বলেছে। কিডনি কেনাবেচার বিষয়ে দায়ের করা প্রথম মামলার আসামি এই সাত্তার। ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে কালাই থানায় ওই মামলা হয়েছিল।

তারে চোখে দেখিনি

যখন প্রিয়জনের জীবন রক্ষায় কেউ কিডনি দান করেন, তখন দাতা জানতে পারেন তিনি কাকে কিডনি দিচ্ছেন। অন্যদিকে কিডনিগ্রহীতাও জানতে পারেন, কার কিডনি তাঁর জীবন রক্ষা করছে। কিন্তু কিডনি যখন বিক্রি হয়, তখন এই পরিচয়ের আর প্রয়োজন থাকে না।

উলিপুর গ্রামের একজন বাসিন্দা যাঁকে কিডনি দিয়েছেন, তাঁকে চোখে দেখেননি। তিনি গ্রামে ভ্যান চালাতেন। এলাকার এক ব্যক্তি তাঁকে পরামর্শ দেন কিডনি বিক্রি করার। ২০১৯ সালে দিল্লিতে গিয়ে তিনি ঠাকুরগাঁওয়ের এক কিশোরকে কিডনি দেন। একটি কিডনি বিক্রি করে তিনি ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা পেয়েছিলেন।

কাকে কিডনি দিয়েছিলেন—এমন প্রশ্নের উত্তরে ওই ভ্যানচালক বলেন, ‘আমি তাকে দেখিনি। ছেলেটার বাড়ি ঠাকুরগাঁওয়ে। মোবাইলে কথা হয়।’

ওই ভ্যানচালকের কাছ থেকে মুঠোফোন নম্বর নিয়ে কথা হয় ছেলেটার সঙ্গে। সে বলে, সে ভালো আছে। এক বছর আগে তার বাবা মারা গেছে। সে প্রতিবছর ভারতে গিয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে আসে। ওই ভ্যানচালকের সঙ্গে পরিচয় কী করে—এমন প্রশ্নের উত্তরে ওই কিশোর বলে, ‘আমি জানি না। জানে আমার দুলাভাই। দুলাভাই বিদেশ থাকেন।’

তাঁরা ভালো নেই

মানুষের দুটি কিডনি থাকে। দুটি কিডনিই শরীরের জন্য প্রয়োজন। একটি কিডনি থাকলেও মানুষ চলতে পারে। যেমন মানুষের দুটি চোখ আছে। এক চোখ বন্ধ করেও মানুষ চলতে পারে। তবে সমস্যা হয়। ঠিক তেমনি একটি কিডনি না থাকলে নানা ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি দেখা দেয়।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের নেফ্রোলজি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক মুহাম্মদ রফিকুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘কিডনিদাতাদের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রয়োজন। কিডনি কেটে নেওয়ার পর ক্ষতস্থানে কোনো সমস্যা দেখা দিল কি না, একটি কিডনি দেওয়ার পর বাকি কিডনির ওপর চাপ বাড়ছে কি না—এসব দেখার জন্য নিয়মিত ফলোআপ চিকিৎসা দরকার।’

সাধারণত যে প্রতিষ্ঠানে বা যে চিকিৎসকের কাছে কিডনি প্রতিস্থাপিত হয়, সেখানেই কিডনিদাতা ও গ্রহীতার ফলোআপ চিকিৎসা হয়। কালাইয়ের যেসব মানুষ ভারতে কিডনি দিয়ে এসেছেন, তাঁদের পক্ষে সেখানে যাওয়া আর সম্ভব নয়। আবার অনেকে গোপনে কিডনি দিয়েছেন, তাঁরা সমস্যা হলেও বিষয়টি গোপন রাখতে চান। অনেকে জানেন না, কোথায় গিয়ে চিকিৎসা নিতে হবে। অনেকের আর্থিক সামর্থ্য নেই। তাই কিডনিদাতাদের একটি অংশ চিকিৎসার বাইরে থেকে যাচ্ছে।

কালাই উপজেলার বোড়াই গ্রামের একজন বাসিন্দা ২০১০ সালে কিডনি বিক্রি করেছিলেন। তিনি বলেন, তাঁর কোমরে ব্যথা। নিয়মিত ব্যথানাশক সেবন করতে হয়। কালাইয়ের ভেরেন্ডি গ্রামের আরেকজন বাসিন্দা একটি কিডনি ঢাকায় গিয়ে বিক্রি করেছিলেন ১১ বছর আগে। তিনি বলছেন, তাঁকে নিয়মিত ওষুধ খেতে হচ্ছে। আরও অন্তত পাঁচজন কিডনি বিক্রেতা বলেছেন, তাঁরা ভারী কাজ করতে পারেন না। ফেসবুকের মাধ্যমে দালালদের সঙ্গে পরিচিত হয়ে দিল্লিতে কিডনি বিক্রি করে আসা বৈদ্যুতিক কারখানার কর্মী ওই যুবক ১১ জুন প্রথম আলোকে বলেন, কাজ করতে গিয়ে অল্প সময়ের মধ্যে তিনি হাঁপিয়ে ওঠেন। মানসিক অশান্তির শেষ নেই। শরীরের একটি অঙ্গ নেই, এটা তিনি কিছুতেই ভুলে থাকতে পারছেন না।