চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের কমিটি নিয়ে অসন্তোষ, স্থান পেলেন সাইদীকে নিয়ে পোস্ট দেওয়া ব্যক্তিও
জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়া এক ব্যক্তিকে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে পদায়ন করার অভিযোগ উঠেছে। তাঁর নাম মো. শহিদুল কবির। তাঁকে ৭৫ সদস্যের কমিটিতে ২০ নম্বর নির্বাহী সদস্য করা হয়েছে। তিনি ছাড়া আরও অন্তত দুজনের বিরুদ্ধে জামায়াত-বিএনপি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে।
এ নিয়ে ক্ষব্ধ দলের পদবঞ্চিতরা। পদবঞ্চিতদের অভিযোগ, রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় ‘উড়ে এসে জুড়ে বসা’ অনেককে কমিটিতে স্থান দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে অনেক নেতা–কর্মীর মধ্যে ক্ষোভ আছে। তাঁদের একজন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আলী আকবর সিদ্দিকী। চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে স্থান না পাওয়ায় গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকায় অনশন করেন তিনি। পরে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের আশ্বাসে অনশন ভঙ্গ করেন।
উল্লেখ্য, গত সোমবার চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি অনুমোদন করা হয়। ৭৫ সদস্যের কমিটির পাশাপাশি ২৭ সদস্যের উপদেষ্টা পরিষদও অনুমোদন করা হয়।
কমিটিতে স্থান পাওয়া মো. শহিদুল কবিরের বাড়ি লোহাগাড়ায়। তিনি যুদ্ধাপরাধের দায়ে আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুর পর তাঁর ফেসবুক পেজে শোক প্রকাশ করে একটি পোস্ট দেন বলে অভিযোগ। শহিদুলকে দক্ষিণ জেলার কমিটির সদস্য করার পর ওই পোস্টের স্ক্রিনশট এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
১৪ আগস্ট শহিদুলের আইডি থেকে এই পোস্ট দেওয়া হয়। উল্লেখ্য, সাঈদীর মৃত্যুতে পোস্ট দেওয়ায় সাতকানিয়া ও লোহাগাড়ার অন্তত ২০ জন ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। তাই মো. শহিদুল কবিরের আওয়ামী লীগের কমিটিতে আসার বিষয়টি সমালোচিত হচ্ছে। তবে শহিদুল তাঁর ফেসবুক আইডি হ্যাক করা হয়েছিল বলে দাবি করেছেন।
জানতে চাইলে শহিদুল কবির বলেন, ‘সাতকানিয়া লোহাগাড়ায় বন্যা–পরবর্তী সময়ে ১২ আগস্ট থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত আমার মুঠোফোন বন্ধ ছিল। তখন এখানে বিদ্যুৎ ছিল না। ফোন খুলে দেখলাম আমার ফেসবুক একাউন্ট হ্যাক করে কে বা কারা একটা স্ট্যাটাস দিয়েছেন দেলোওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুতে। পরে এ বিষয়ে আমি আইনগত ব্যবস্থা নিয়েছি। জামায়াত শিবিরের হাতে আমি মার খেয়েছি। সাঈদীর মৃত্যুতে আমি স্ট্যাটাস দেওয়ার প্রশ্নই আসে না।’
শহিদুল কবির লোহাগাড়া উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। দলের মধ্যে তাঁর প্রতিপক্ষরা ফেসবুক হ্যাক করে এই কাজ করেছে বলে তাঁর অভিযোগ।
এ বিষয়ে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, শহিদুল ত্যাগী ছেলে। ছাত্রলীগ যুবলীগ করে এ পর্যায়ে এসেছে। তাঁর ফেসুবক হ্যাক করে এই পোস্ট দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে তিনি জিডিও করেছেন।
এদিকে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে ত্রাণ ও সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক করা হয়েছে চন্দনাইশের বরকল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহিমকে। তিনি ২০২২ সালের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকার বিরুদ্ধে নির্বাচন করেছিলেন। তিনি দলে অনুপ্রবেশকারী বলে তৃণমূলের নেতাদের অভিযোগ। স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের দাবি, ২০১৮ সালের আগে তিনি জামায়াত করতেন।
তবে মো. আবদুর রহিম চৌধুরী এসব অভিযোগ অস্বীকার করে গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বিদ্রোহীদের ক্ষমা করা হয়েছে। তাই আমাকে পদে রাখা হয়েছে। জামায়াত করার বিষয়টি ভিত্তিহীন।’
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক আমানুর রশীদের বিরুদ্ধেও শিবির করার অভিযোগ উঠেছে। তিনি সিঙ্গাপুর থাকেন বলেও অভিযোগ। আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য কায়কোবাদ ওসমানী প্রথম আলোকে বলেন, আমানুর রশীদ শিবির করতেন। সাতকানিয়া পুরানগর এলাকায় আমানুর রশীদের পরিবারটি স্বাধীনতাবিরোধী।
এ বিষয়ে সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বলেন, আওয়ামী লীগের রাজনীতি করে আসছেন তিনি। ব্যবসার কাজে মাঝেমধ্যে সিঙ্গাপুর যান।
মফিজুর রহমান আরও বলেন, ‘কমিটি নিয়ে কিছু অভিযোগ একেবারে ভিত্তিহীন। আমার হাত দিয়ে জামায়াত শিবির কিংবা অনুপ্রবেশকারী দলে ঢুকতে পারবে না। কমিটির সদস্য ৭৫ জন। এখানে কীভাবে সবাইকে স্থান দেব? তবে চেষ্টা করেছি, ত্যাগীদের মূল্যায়ন করতে। অনেক সাবেক ছাত্রনেতা এবার কমিটিতে ঢুকেছে।’