চুয়াডাঙ্গায় বিভিন্ন অভিযোগের ভিত্তিতে দুই পরিবেশকের লাইসেন্স বাতিল
চুয়াডাঙ্গায় রাসায়নিক সার নিয়ে কারসাজি, তথ্য ঘষামাজাসহ বিভিন্ন অভিযোগে বিসিআইসির দুই পরিবেশকের লাইসেন্স বাতিল ও বিএডিসির সারের দুই ডিলারের লাইসেন্স স্থগিত করা হয়েছে। এ ছাড়া বীজ নিয়ে কৃষকদের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগে বহুজাতিক কোম্পানি সিনজেনটার সব ধরনের ব্যবসা বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
আজ রোববার দুপুরে জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে জেলা সার-বীজ মনিটরিং কমিটির সভায় সর্বসম্মতিক্রমে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম সভায় সভাপতিত্ব করেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মাসুদুর রহমান সরকারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এ সভায় কৃষকদের সঠিক সময়ে সঠিক জাত ও মানের বীজের নিশ্চয়তাসহ গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
সভায় জীবননগর উপজেলা সার-বীজ মনিটরিং কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী মেসার্স এমএস এন্টারপ্রাইজ ও মেসার্স হক ট্রেডার্সের লাইসেন্স বাতিল করা হয়। তাদের লাইসেন্স বাতিল করার কারণ হিসেবে বলা হয়, মেসার্স এমএস এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মো. নাজমুস সালাম চুয়াডাঙ্গা জেলার স্থায়ী বাসিন্দা নন, ঢাকা শহরের গুলশানের বাসিন্দা। মনোনীত প্রতিনিধির মাধ্যমে ব্যবসা পরিচালনা করেন। অপর দিকে মেসার্স হক ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী প্রবাসী মো. আতাউল হক চুয়াডাঙ্গা জেলার স্থায়ী বাসিন্দা কি না, জীবিত নাকি মৃত এবং নিজে ব্যবসা পরিচালনা করেন কি না, সে বিষয়ে সুস্পষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। অন্যান্য পরিবেশকদের অভিযোগ, ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এই দুটি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারীকে সার-বীজ মনিটরিং কমিটির সভায় দেখা যায়নি।
এদিকে তথ্য ঘষামাজা ও প্রয়োজনীয় গুদাম না থাকার অভিযোগে সদ্য নিবন্ধন পাওয়া বিএডিসির সারের দুই পরিবেশক সদর উপজেলার আলুকদিয়ার আবুল কালাম আজাদ ও জীবননগর উপজেলার খয়েরহুদার আরফান কবীরের লাইসেন্স স্থগিত করা হয়।
এ ছাড়া চলতি উৎপাদন মৌসুমে সিনজেনটা কোম্পানির ফুলকপির বীজ কিনে ৩৭ কৃষকের প্রতারিত হওয়া বিষয়টি সভায় আলোচনা হয়। জেলা বীজ প্রত্যয়ন কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম এ সময় বলেন, সিনজেনটার হাই অফিশিয়ালদের সঙ্গে কথা হয়েছে। তাঁরা ক্ষতিপূরণ হিসেবে সংশ্লিষ্ট কৃষকদের পরপর তিন মৌসুমে প্রয়োজনীয় বীজ ও বালাইনাশক দিতে রাজি হয়েছেন। তবে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা আর্থিক ক্ষতিপূরণ দাবি করায় সিনজেনটা কর্তৃপক্ষ বলেছে, প্রয়োজনে চুয়াডাঙ্গায় বীজের ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাক, তবুও ক্ষতিপূরণ হিসেবে নগদ অর্থ দেওয়া সম্ভব নয়।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম উপস্থিত সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে ঘোষণা দেন, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ভয়ে যদি সিনজেনটা বীজের ব্যবসা বন্ধ করতে চায়, তাহলে তাদের অন্যান্য কৃষি উপকরণের ব্যবসাও বন্ধ করে দেওয়া হবে। জেলা প্রশাসক বলেন, শুধু চুয়াডাঙ্গা জেলা নয়, অন্যান্য জেলাতেও তাদের কৃষক ঠকানো ব্যবসা চলতে দেওয়া হবে না।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের জেলা নেতারা সার নিয়ে ডিলারদের কারসাজি ও কৃষকদের হয়রানির বিষয়টি সভায় তুলে ধরেন। জেলা আহ্বায়ক আসলাম অর্ক বলেন, কৃষিতে বৈচিত্র্যের কারণে এ অঞ্চলে সারের প্রয়োজন বেশি। প্রয়োজনের সময় নানা অজুহাতে সরবরাহ মিলছে না।
জেলা প্রশাসক কৃষি সম্প্রসারণ উপপরিচালকের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনি জেলার ১৪৩ জন সারের ডিলারের তালিকা ও গুদামের ঠিকানা সংগ্রহ করুন, আমি ওই তথ্য সাংবাদিক এবং ছাত্র প্রতিনিধিদের কাছে দিয়ে দেব। গোডাউনে আছে, কৃষক পান না। কেউ যদি মনে করেন, আমার কাছে সার আছে, আমি দেব না, তা হবে না। সরেজমিন ঘুরে নিউজ হবে। তারপর যা করার আমি করব।’