গ্রেপ্তার-রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়ন দাবি ব্লাস্টের

ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন মামলায় বিশেষ করে নারীদের গ্রেপ্তার ও রিমান্ড দেওয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট)। গ্রেপ্তার ও রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা উচ্চ আদালতের নির্দেশনা মানছেন না—এমন অভিযোগ করে সংস্থাটি সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছে।

আজ মঙ্গলবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ব্লাস্টের পক্ষ থেকে এই দাবি জানানো হয়। যেকোনো পরিস্থিতিতে গ্রেপ্তার ও রিমান্ডের ক্ষেত্রে সংবিধান ও সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের নির্দেশনা যেন লঙ্ঘিত না হয় এবং বিচার পাওয়ার অধিকার যেন নিশ্চিত হয়, সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার দাবিও জানিয়েছে ব্লাস্ট।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দৈনিক পত্রিকা ও সামাজিক গণমাধ্যমে থেকে জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন–পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন মামলায় নারীদের গ্রেপ্তার ও রিমান্ড দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি দেখা যাচ্ছে গ্রেপ্তার ও রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা উচ্চ আদালতের নির্দেশনা মানছেন না। এ ধরনের কার্যক্রম বাংলাদেশের সংবিধানের ২৭, ৩১, ৩২, ৩৩ ও ৩৫ ধারার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। একই সঙ্গে বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তার ও অভিযুক্তকে রিমান্ডে নেওয়ার বিষয়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং ম্যাজিস্ট্রেট ও বিচারকদের জন্য সুস্পষ্ট নির্দেশনাসংবলিত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের যুগান্তকারী রায়ের সঙ্গে এটি সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক।

বিজ্ঞপ্তিতে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনার মধ্যে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার প্রতি উল্লেখযোগ্য নির্দেশনাগুলো তুলে ধরা হয়। এগুলো হলো: কোনো ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা গ্রেপ্তার ব্যক্তির নিকটাত্মীয়কে গ্রেপ্তারের বিষয়টি যত দ্রুত সম্ভব, কিন্তু অনধিক ১২ ঘণ্টার মধ্যে লিখিতভাবে জানাতে হবে; ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার ব্যক্তিকে রিমান্ড বা হেফাজতে নিতে হলে কিংবা বিচারিক হেফাজত তথা কারাগারে পাঠাতে হলে তাঁর বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট মামলা করা আবশ্যক; কাউকে গ্রেপ্তার করার সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে তাঁর নিজের পরিচয় প্রকাশ করতে হবে; যাঁকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, তিনি বা গ্রেপ্তারের স্থানে যাঁরা উপস্থিত রয়েছেন, তাঁরা দেখতে চাইলে গ্রেপ্তারকারী কর্মকর্তাকে অবশ্যই তাঁর পরিচয়পত্র দেখাতে হবে; গ্রেপ্তার ব্যক্তির শরীরে কোনোরকম আঘাতের চিহ্ন দেখা গেলে গ্রেপ্তারকারী কর্মকর্তা এ ধরনের আঘাতের কারণ ও বিবরণ লিপিবদ্ধ করে তাঁকে নিকটতম হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠাবেন ও দায়িত্বরত চিকিৎসকের সনদ সংগ্রহ করবেন এবং গ্রেপ্তার ব্যক্তিকে তাঁর পছন্দের আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করার কিংবা স্বজন বা নিকটজনের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ দিতে হবে।

বাংলাদেশ পুলিশের নির্দেশিকায় নারীদের গ্রেপ্তারবিষয়ক কিছু বিধানের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নারীদের গ্রেপ্তারের সময় পুলিশকে আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে চলতে হবে ও তদন্তের সময় তাঁদের সম্মান ও গোপনীয়তা রক্ষা করতে হবে।