ভুটানে উঁচু পর্বতে স্নোম্যান দৌড়ে সফল আয়রনম্যান আরাফাত

ভুটানে হিমালয় পর্বতমালায় স্নোম্যান রেসের একমুহূর্তে আরাফাতছবি: সংগৃহীত

ভিডিও চিত্রের ছোট এক দৃশ্য: পাঁচ দিনের দৌড়ের শেষ প্রান্তে এলেন বাংলাদেশের দৌড়বিদ। যথেষ্টই ক্লান্ত। ফিনিশিং লাইনে পৌঁছানোর অনেক দূর থেকেই পার্বত্য ট্র্যাকের দুপাশে অনেক মানুষের ভিড়, সবাই ভুটানি। হাত নাড়িয়ে তাঁকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। করতালি দিচ্ছেন। দৌড়বিদ ফিনিশিং লাইনে এসে হাঁটু গেড়ে চুমু খেলেন মাটিতে। সৃষ্টিকর্তার প্রতি জানালেন কৃতজ্ঞতা। আয়োজকেরা বাংলাদেশের লাল–সবুজ বড়সড় এক পতাকা জড়িয়ে দিলেন দৌড়বিদের শরীর।

দৌড়বিদের নাম মোহাম্মাদ সামছুজ্জামান আরাফাত। আয়োজনটি ছিল ভুটানে, হিমালয় পর্বতমালায়। রাজার উদ্যোগে ভুটানের সরকার ‘স্নোম্যান রেস নামের’ এ দৌড় প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। ভুটানের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন দেশের আন্তর্জাতিক দৌড়বিদদের আমন্ত্রণ জানান এই রেসে। ভুটানের বাইরে দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র প্রতিযোগী ছিলেন বাংলাদেশের সবচেয়ে অভিজ্ঞ আয়রনম্যান মোহাম্মাদ সামছুজ্জামান আরাফাত। ৮ জন পুরুষ ও ৮ জন নারী দৌড়বিদ অংশ নেনে স্নোম্যান রেসে। আরাফাত ছাড়া অন্যান্য দৌড়বিদ ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, সুইজারল্যান্ড, জাপান, তানজানিয়া ও ভুটানের দৌড়বিদ।

স্নোম্যান রেস সম্পন্ন করে পুরস্কার নিচ্ছেন আরাফাত
ছবি: সংগৃহীত

২৪ অক্টোবর থেকে শুরু স্নোম্যান রেস শেষ হয়েছে আজ ২৮ অক্টোবর সন্ধ্যায়। এই পাঁচ দিনে সম্পন্ন করতে হয়েছে ১৮৬ কিলোমিটার দৌড়। হিমালয় পর্বতমালার ৪ হাজার মিটার থেকে ৫ হাজার ৪৭০ মিটার পর্যন্ত উচ্চতায় দৌড়াতে হয়েছে অংশগ্রহণকারীদের। আজ দৌড় সম্পন্ন হয়েছে ২ হাজার ৪০০ মিটার উচ্চতায়। সফলভাবে স্নোম্যান রেস শেষ করার পর আজ রাতে মোহাম্মাদ সামছুজ্জামান আরাফাত হোয়াটসঅ্যাপে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার জন্য এটা ছিল সবচেয়ে কঠিনতম দৌড়। দূরত্বের থেকে বড় ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছিল পর্বতের উচ্চতা। ফলে আমরা যারা সমতলের বাসিন্দা, তাদের জন্যও সত্যিই এক কঠিন। দৌড়ের ট্র্যাকও বরফ, কাদা, পাথরময়। আয়োজকেরা ভেবেছিলেন, আমি মনে হয় শেষ করতে পারব না। আজ (মঙ্গলবার) দৌড়ের শেষ ১০ কিলোমিটারে রাস্তার দুই পাশে বিভিন্ন স্কুলের ছেলেমেয়েরা বাংলাদেশের পতাকা হাতে যেভাবে আমাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছে, তাতে আমি মুগ্ধ হয়েছি।’

স্নোম্যান রেসের একমাত্র বাংলাদেশি প্রতিযোগী আরাফাত
ছবি: সংগৃহীত

স্নোম্যান রেসের ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, এটি ছিল দ্বিতীয়বারের মতো আয়োজন। এতে অংশগ্রহণকারীদের প্রতিদিন নির্দিষ্ট দূরত্বে দৌড়াতে হয়। সকাল ৬টায় শুরু করে দৌড় শেষ করতে হয় রাত ১০টার মধ্যে। আরাফাত প্রতিদিন ২৯ থেকে ৪৩ কিলোমিটার পর্যন্ত দৌড়েছেন। স্নোম্যান রেসের মাধ্যমে ভুটান জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে বৈশ্বিক সচেতনতা তৈরি করে। হিমালয়ের এই ট্রেইলটির নাম স্নোম্যান। তাই এ আয়োজনের নাম স্নোম্যান রেস।

১৩ অক্টোবর মালয়েশিয়ার লাংকাউইতে নিজের নবম আয়রনম্যান প্রতিযোগিতা সম্পন্ন করেন আরাফাত। এ ছাড়া অর্ধদূরত্বের আয়রনম্যান ৭০.৩ প্রতিযোগিতা সম্পন্ন করেছেন পাঁচবার। বঙ্গোপসাগরে বাংলা চ্যানেল সাঁতারে সফল হয়েছেন নয়বার। গত বছর নেপালে হিমালয় পর্বতমালায় এক্সট্রিম টায়াথলনও সম্পন্ন করেন আরাফাত। পেশাগত জীবনে বাংলাদেশ ব্যাংকের উপপরিচালক।

আরও পড়ুন