সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার দ্রুত বিচার দাবিতে শাহবাগ অবরোধ
দেশের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনাগুলো বিচার ‘দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের’ মাধ্যমে করার দাবিতে আজ সোমবার শাহবাগ অবরোধ করে বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে। বাংলাদেশ হিন্দু জাগরণ মঞ্চ এবং সনাতন ছাত্র ও নাগরিক সমাজের ব্যানারে এই কর্মসূচি পালন করা হয়। এ সময় তাঁরা সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করার দাবি জানানো হয়।
আজ বেলা ৩টায় শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের সামনে মানববন্ধনের মাধ্যমে আন্দোলনকারীরা কর্মসূচি শুরু করেন। সেখানে দেড় ঘণ্টা অবস্থানের পর বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন তাঁরা। এতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দেন। এর মধ্যে ছিল ‘আমার মন্দিরে হামলা কেন, জবাব চাই জবাব চাই’, ‘হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা কেন, জবাব চাই জবাব চাই’, ‘জাস্টিস জাস্টিস, উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ প্রভৃতি। আন্দোলনকারীদের হাতে ‘আমার মাটি আমার মা, এই দেশ ছাড়ব না’, ‘ধর্ম যার যার রাষ্ট্র সবার’, ‘সেভ বাংলাদেশি হিন্দুস’, ‘হিন্দুস হেভ রাইট টু লিভ’সহ নানা ধরনের প্ল্যাকার্ডও ছিল।
দুই ঘণ্টা শাহবাগ অবরোধের পর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে তাঁরা সরে গেলে যান চলাচল শুরু হয়।
সাম্প্রদায়িক সহিংসতার বিচার-ক্ষতিপূরণ-পুনর্বাসনসহ মোট আট দফা দাবিতে গত শুক্রবার প্রথম শাহবাগ অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন আন্দোলনকারীরা। একই দাবিতে পরদিন শনিবারও শাহবাগে অবরোধ করেন তাঁরা। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গতকাল রোববার তাঁরা প্রদীপ প্রজ্বালন করেন। যদিও তাঁরা একেক দিন একেক ব্যানার ব্যবহার করছেন। এই ৮ দফা দাবিতে আন্দোলন রাজধানীর বাইরেও বিভিন্ন জায়গায় হচ্ছে।
বিচার-ক্ষতিপূরণ-পুনর্বাসন ছাড়াও তাঁদের ৮ দফার মধ্যে রয়েছে সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, সংখ্যালঘুবিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠন, হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টকে হিন্দু ফাউন্ডেশনে উন্নীত করা, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টকেও ফাউন্ডেশনে উন্নীত করা, দেবোত্তর সম্পত্তি পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণ আইন প্রণয়ন, অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন যথাযথ বাস্তবায়ন, দুর্গাপূজায় পাঁচ দিন ছুটি করা।
নতুন কর্মসূচি ঘোষণার মধ্য দিয়ে গতকাল শাহবাগের বিক্ষোভ সমাবেশ শেষ করেন এই আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নিহার হালদার। তিনি বলেন, দাবি আদায়ে হিন্দু জাগরণ মঞ্চ, ছাত্র-যুবক ও সব অভিভাবকেরা আজ মঙ্গলবার বেলা ৩টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে লাল কাপড় বেঁধে উপস্থিত হবেন।
এসব দাবির বিষয়ে হিন্দু জাগরণ মঞ্চ, তাদের বিভিন্ন জেলার প্রতিনিধি, অভিভাবক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের অভিভাবকদের সমন্বয়ে সরকার ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের সঙ্গে বসতে চান বলেও জানান নিহার হালদার।
এদিকে গতকাল স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন আন্দোলনকারীদের একটি অংশ। তাতে অংশ নেন বাংলাদেশ হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব পলাশ কান্তি দে। আজ শাহবাগের সমাবেশে পলাশ কান্তি জানান, এই ৮ দফার সঙ্গে দেশবাসী একমত বলে তিনি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে জানিয়েছেন। পলাশ কান্তি বলেন, ‘প্রতিটি রাজনৈতিক দল সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার করেছে। এই রাজনৈতিক দলগুলো আমাদের ব্যবহার করেছে। আমরা ব্যবহার হতে চাই না।’
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনায় অংশ নিয়েছিলেন জাতীয় হিন্দু ছাত্র মহাজোটের সভাপতি অনুপম দাস। সেখানে যা আলোচনা হয়েছে, এ প্রসঙ্গে গতকাল জাতীয় জাদুঘরের সামনে মানববন্ধনে অনুপম দাস বলেন, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কাছে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের একটা সংক্ষিপ্ত তালিকা তুলে ধরা হয়েছে।
অনুপম দাস বলেন, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা দুর্গাপূজায় তিন দিনের সরকারি ছুটি দেবেন বলে জানিয়েছেন। সংখ্যালঘু কমিশন ও মন্ত্রণালয় গঠনের ব্যাপারেও তিনি দ্রুততম সময়ে পদক্ষেপ নেবেন। আসন্ন জন্মাষ্টমী ও দুর্গাপূজা নির্ভয়ে যেন পালন করা যায়, সেই ব্যবস্থা করার প্রতিশ্রুতিও তিনি দিয়েছেন। সারা দেশে কোথায় কোথায় হামলা হয়েছে, তার তালিকা তৈরির জন্য বলা হয়েছে। সংখ্যালঘুদের সব সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও বসতে চেয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।