ডেঙ্গু নিয়ে একসঙ্গে হাসপাতালে ভর্তি হন স্বামী-স্ত্রী, স্বামীকে রেখে চলে গেলেন অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী

ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে স্ত্রীকে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন মো. জুয়েল। তিনি সুস্থ হলেও অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে বাঁচানো যায়নিছবি: সংগৃহীত

প্রথমবার মা হওয়ার স্বপ্নে বিভোর ছিলেন নার্সিং কলেজের ছাত্রী উম্মে হানি আকতার (২২)। একটু একটু করে এগিয়ে যাচ্ছিলেন কাঙ্ক্ষিত সেই দিনের দিকে। ১৪ অক্টোবর ছিল সম্ভাব্য সেই ক্ষণ; কিন্তু তার আগেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে আজ সোমবার ভোররাতে পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে হয়েছে অন্তঃসত্ত্বা এই নারীকে।

উম্মে হানির বাড়ি খাগড়াছড়ির গুইমারা এলাকায়। স্বামী মোহাম্মদ জুয়েলসহ চট্টগ্রামের লালখান বাজারে থাকতেন। নিজ বাসাতেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন তাঁরা। এরপর বৃহস্পতিবার নগরের পার্কভিউ হাসপাতালে ভর্তি হন।

স্বামী মো. জুয়েল এখনো পুরোপুরি সুস্থ হননি। এর মধ্যেই স্ত্রীর লাশ নিয়ে তিনি আজ হাসপাতাল থেকে গুঁইমারার বাড়িতে গেছেন। দুপুরে সেখানে উম্মে হানির দাফন হয়েছে। এরপর তাঁর সঙ্গে ফোনে কথা হয় এই প্রতিবেদকের।

জুয়েল বলেন, তাঁদের বিয়ে হয়েছে দুই বছর। প্রথম সন্তানের জন্ম দিতে যাচ্ছিলেন স্ত্রী। আগামী মাসের ১৪ তারিখ সন্তান জন্মদানের সম্ভাব্য দিন ছিল। এর মাঝে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে সব শেষ হয়ে গেল।

দুজনে পাশাপাশি শয্যায় ছিলাম। তাঁর (স্ত্রীর) সবকিছু ঠিকঠাক ছিল; কিন্তু শনিবার রাত থেকে হঠাৎ রক্তচাপ কমে যাচ্ছিল। তখন রাতে আইসিইউতে নেওয়া হয়। সেখানেই সোমবার ভোররাতে মারা যায়।
মো. জুয়েল, উম্মে হানির স্বামী

কয়েক দিন ধরে দুজনের জ্বর ছিল। বুধবার জুয়েলের রক্ত পরীক্ষা করা হয়। তাতে ডেঙ্গু পজিটিভ আসে। এরপর বৃহস্পতিবার দুজনেই পার্কভিউ হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখানে রক্ত পরীক্ষায় তাঁর স্ত্রীর ডেঙ্গু পজিটিভ আসে। একই কেবিনের দুটি শয্যায় চলছিল ডেঙ্গুতে আক্রান্ত স্বামী–স্ত্রীর চিকিৎসা। এর মধ্যে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে শনিবার রাতে উম্মে হানিকে আইসিইউতে নেওয়া হয়। জুয়েল কেবিনে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন।

বৃহস্পতিবার নগরের পার্কভিউ হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন উম্মে হানি আকতার
ছবি: সংগৃহীত

জুয়েল বলেন, ‘দুজন পাশাপাশি শয্যায় ছিলাম। তাঁর (স্ত্রীর) সবকিছু ঠিকঠাক ছিল; কিন্তু শনিবার রাত থেকে হঠাৎ রক্তচাপ কমে যাচ্ছিল। তখন রাতে আইসিইউতে নেওয়া হয়। সেখানেই সোমবার ভোররাতে মারা যায়। অসুস্থ শরীরে এখন বাড়ি চলে এলাম লাশ নিয়ে।’

উম্মে হানি আকতার চট্টগ্রামের সাউথ এশিয়ান নার্সিং কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন। অন্তঃসত্ত্বা হওয়ায় কয়েক দিন ধরে বাসায় ছিলেন। জুয়েল ব্যবসা করেন। তাঁদের ছোট্ট সংসার; কিন্তু ডেঙ্গুতে সব এলোমেলো হয়ে গেল।

আজ সোমবার দুপুরে চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে পাঠানো ২৪ ঘণ্টার ডেঙ্গু–সংক্রান্ত প্রতিবেদনে উম্মে হানির মৃত্যুর বিষয় নিশ্চিত করা হয়। এতে বলা হয়, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ৩৭ জন ডেঙ্গু নিয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

চট্টগ্রামে এক দিনে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তির এই সংখ্যা চলতি বছর প্রথম। এ বছর এখন পর্যন্ত ৮৬৫ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে চলতি মাসের প্রথম ১৫ দিনে সবচেয়ে বেশি ২৬৭ জন বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

এর আগে ৯ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সন্তান জন্ম দিয়ে মারা যান ডেঙ্গুতে আক্রান্ত শান্তা সূত্রধর নামের এক নারী।

আরও পড়ুন