সংখ্যালঘুদের নতুন ১৩টি প্ল্যাটফর্ম, নেপথ্যে কী

হিন্দু সম্প্রদায়ের অধিকার আদায়ে দেশে ৫০টির বেশি সংগঠন সক্রিয়। নতুন যে ১৩টি প্ল্যাটফর্ম আত্মপ্রকাশ করেছে, তার ১১টিই হিন্দু সম্প্রদায়কেন্দ্রিক।

গত ২৫ অক্টোবর আট দফা দাবিতে চট্টগ্রাম নগরের লালদীঘি মাঠে বড় সমাবেশ করে সনাতন জাগরণ মঞ্চছবি: প্রথম আলো

গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এখন পর্যন্ত ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের ১৩টি নতুন প্ল্যাটফর্ম (মোর্চা বা জোট) তৈরি হয়েছে। এসব প্ল্যাটফর্মের উদ্যোগে গত পাঁচ মাসে কখনো এককভাবে, কখনো যৌথভাবে বেশ বড় জমায়েত করা হয়েছে চট্টগ্রাম, রংপুর ও ঢাকায়, যা দেশ-বিদেশে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষার দাবিতে হঠাৎ এত প্ল্যাটফর্ম তৈরি করার নেপথ্যে কারা, তা নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্ন উঠেছে।

সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা বিভিন্ন পুরোনো সংগঠনের নেতারা বলছেন, ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পরবর্তী সময় থেকেই বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায় জটিল পরিস্থিতিতে আছে। কিন্তু সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার প্রতিবাদে এবারের মতো এত বড় আন্দোলন আর হয়নি। এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছে নতুন প্ল্যাটফর্মগুলো।

যেকোনো জাতিগোষ্ঠীর দুঃখ-বেদনা তুলে ধরার অধিকার আছে। এ ধরনের সমস্যা তুলে না ধরা গেলে সেটা আরও জটিল আকার ধারণ করে।
নির্মল রোজারিও, অন্যতম সভাপতি, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ

গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর দেশের বিভিন্ন এলাকায় ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। এ রকম হামলার ঘটনা এর আগেও দেশে বিভিন্ন সময় ঘটেছে। তবে এসব হামলার প্রতিবাদে এবার যে মাত্রায় আন্দোলন গড়ে তোলা হয়েছে, তা বিগত কয়েক দশকে দেখা যায়নি।

নতুন যেসব প্ল্যাটফর্ম তৈরি হয়েছে, এর মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোট। এই জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী। মূলত তাঁর ডাকে গত অক্টোবর ও নভেম্বরে চট্টগ্রামে এবং রংপুরে বিশাল দুটি সমাবেশ করা হয়, যা দেশের বাইরেও আলোচনার জন্ম দেয়। চিন্ময় কৃষ্ণ একসময় ইসকন (আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ) বাংলাদেশের সঙ্গে ছিলেন। রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় গ্রেপ্তারের পর তাঁকে গত ২৬ নভেম্বর চট্টগ্রাম আদালতে হাজির করা হলে পুলিশের সঙ্গে তাঁর অনুসারীদের সংঘর্ষ হয়। ওই সময় চট্টগ্রামের আইনজীবী সাইফুল ইসলামকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়।

চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোট ছাড়াও সংখ্যালঘুদের আরেকটি নতুন প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চেরও মুখপাত্র। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর এই দুটি প্ল্যাটফর্মের জন্ম হয়। কাছাকাছি সময়ে আত্মপ্রকাশ করা অন্য প্ল্যাটফর্মগুলো হলো বাংলাদেশ সচেতন সনাতনী নাগরিক, বাংলাদেশ সনাতনী সচেতন ছাত্রসমাজ, সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলন, সনাতনী অধিকার আন্দোলন, বাংলাদেশ সম্মিলিত সংখ্যালঘু জোট, সনাতন অধিকার মঞ্চ, সনাতনী ছাত্রসমাজ, বিক্ষুব্ধ জুম্ম ছাত্র-জনতা, বাংলাদেশ হিন্দু জাগরণ মঞ্চ, বাংলাদেশ বৌদ্ধ সমাজ সুরক্ষা কমিটি এবং সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এসব প্ল্যাটফর্ম ও সংগঠনের একটি বৈশিষ্ট্য হলো, নেতৃত্বে রয়েছেন মূলত সাধু-সন্ন্যাসী (মন্দির-মঠের পুরোহিত) ও শিক্ষার্থীরা।

জাস্টিস ফর সনাতনী নামের গ্রুপটি তৈরি করেছিলেন ঢাকার একটি কলেজের একজন শিক্ষার্থী। তাঁর নেতৃত্বে গত ৯ আগস্ট শাহবাগে যে সমাবেশ হয়, তাতে ব্যানারে লেখা ছিল ‘সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলন’।

বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অধিকার রক্ষায় ঠিক কতটি সংগঠন কাজ করছে, তার সুনির্দিষ্ট তথ্য কারও কাছে নেই। তবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দেশে বিভিন্ন নামে হিন্দু সম্প্রদায়ের অধিকার আদায়ে ৫০টির বেশি সংগঠন সক্রিয় রয়েছে। নতুন যে ১৩টি প্ল্যাটফর্ম ও সংগঠনের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে, তার মধ্যে হিন্দু সম্প্রদায়কেন্দ্রিক সংগঠনই ১১টি।

৫০টির বেশি সক্রিয় সংগঠন থাকার পরও হঠাৎ কেন নতুন প্ল্যাটফর্ম গড়ে উঠল, এমন প্রশ্নে বাংলাদেশ পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর প্রথম আলোকে বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হিন্দু সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীরাও অংশগ্রহণ করেছিলেন। সরকার পতনের পর দেখা গেল, বিভিন্ন এলাকায় হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষও আক্রান্ত হচ্ছেন। তখন শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ শুরু করেন। তাঁদের কর্মসূচিতে মানুষের ব্যাপক অংশগ্রহণ হয়। ঢাকা থেকে সেই আন্দোলন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। এটা স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন। স্বতঃস্ফূর্তভাবে এসব প্ল্যাটফর্ম, সংগঠন হয়েছে।

এবারের আন্দোলন শুরু যেভাবে

সংখ্যালঘুদের ওপর হামলায় জোরালো প্রতিবাদ করার উদ্যোগ প্রথমে নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকার বড় সাত কলেজের সনাতন সম্প্রদায়ের কিছু শিক্ষার্থী। তাঁরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে আন্দোলনের ডাক দেন। সেই সময় তৈরি হওয়া একটি মেসেঞ্জার গ্রুপের নাম ‘জাস্টিস ফর সনাতনী’। সংখ্যালঘুদের সুরক্ষার দাবিতে সেই গ্রুপে একটি বার্তা পোস্ট করা হয়। তাতে বলা হয়, ‘৯ আগস্ট বেলা ২টায় ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবে জমায়েত করা হবে। সেখান থেকে শাহবাগে অবস্থান নেওয়া হবে।’

প্রেসক্লাবে কর্মসূচি পালনের পর ৯ আগস্ট বিকেলে শাহবাগে সড়ক অবরোধ করা হয়। পরদিন ১০ আগস্ট হাজারো মানুষের সমাগমে আবার শাহবাগ অবরোধ করা হয়। ওই সময় চট্টগ্রাম শহরেও বড় সমাবেশ হয়।

জাস্টিস ফর সনাতনী নামের গ্রুপটি তৈরি করেছিলেন ঢাকার একটি কলেজের একজন শিক্ষার্থী। তাঁর নেতৃত্বে গত ৯ আগস্ট শাহবাগে যে সমাবেশ হয়, তাতে ব্যানারে লেখা ছিল ‘সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলন’।

ওই শিক্ষার্থী প্রথম আলোকে বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে বিভিন্ন জায়গায় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার খবর পাচ্ছিলেন। তখন ঢাকার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করে ঠিক করেন, প্রতিবাদ জানাতে হবে। ঘটনার প্রতিক্রিয়া হিসেবে তখন তাঁরা আন্দোলনে নেমেছিলেন।

শাহবাগে ৯ ও ১০ আগস্টের সমাবেশে ‘বাংলাদেশ সচেতন সনাতনী নাগরিক’ নামেরও একটি প্ল্যাটফর্ম অংশ নেয়। এর নেতৃত্বে আছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী। আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের যুক্ত করার জন্য বাংলাদেশ সচেতন সনাতনী নাগরিক প্ল্যাটফর্ম থেকে আরেকটি প্ল্যাটফর্ম করা হয়, যার নাম ‘বাংলাদেশ সনাতনী সচেতন ছাত্রসমাজ’। এই দুটি প্ল্যাটফর্ম পরে বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের সঙ্গে যুক্ত হয়।

এ ছাড়া ১২ আগস্ট আত্মপ্রকাশ করে সনাতন অধিকার মঞ্চ নামের আরেকটি প্ল্যাটফর্ম। এর নেতৃত্বে আছেন ঢাকার আইনজীবী সুমন কুমার রায়। তিনি বাংলাদেশ সনাতন পার্টি (বিএসপি) ও বাংলাদেশ হিন্দু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক। সুমন কুমার গত শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, এসব প্ল্যাটফর্ম স্থায়ী নয়। আপৎকালীন সময়ে দাবি আদায়ের জন্য বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম করা হয়েছে। সনাতন অধিকার মঞ্চ প্ল্যাটফর্ম এখন আর নেই। এটি সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে।

চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের ‘আগমন’

সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলন ও বাংলাদেশ সচেতন সনাতনী নাগরিক—নতুন এই দুটি প্ল্যাটফর্মে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের পুরোনো সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীরাও যুক্ত হন। আন্দোলনে যুক্ত থাকা বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মকে একই ছাতার নিচে আনার জন্য ‘সনাতনী অধিকার আন্দোলন’ নামে আরেকটি প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলা হয়। তারা গত ২২ আগস্ট ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে আত্মপ্রকাশ করে।

আগস্টের শেষের দিকে হিন্দু বা সনাতন সম্প্রদায়ের বাইরে থাকা অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে আন্দোলনে আনার জন্য ‘বাংলাদেশ সম্মিলিত সংখ্যালঘু জোট’ নামে নতুন প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা হয়। এই জোট গঠনের পেছনে যারা কাজ করেছে, তাদের মধ্যে সনাতনী অধিকার আন্দোলনও ছিল।

বাংলাদেশ সম্মিলিত সংখ্যালঘু জোটের প্রধান উপদেষ্টা করা হয় হীরেন্দ্র নাথ বিশ্বাসকে। তাদের প্রথম কর্মসূচি ছিল ২০ সেপ্টেম্বর ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। এরপর ৪ অক্টোবর একই স্থানে গণসমাবেশ করে তারা। তাদের সেই কর্মসূচি থেকেই চট্টগ্রাম শহরে ২৫ অক্টোবর সমাবেশ করার ঘোষণা দেওয়া হয়। তবে চট্টগ্রামের সেই সমাবেশ হয়েছিল ‘বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চ’-এর প্ল্যাটফর্মে। এই নামে এটিই ছিল চট্টগ্রামে সনাতন জাগরণ মঞ্চের প্রথম কর্মসূচি। এই সমাবেশ বেশ বড় হয়, যা আলোচনা তৈরি করে। এর আগে সনাতন জাগরণ মঞ্চের নেতা-কর্মীরা ‘বাংলাদেশ হিন্দু জাগরণ মঞ্চ’ নামে কর্মসূচি পালন করতেন।

ভারতের রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) একটি অঙ্গসংগঠনের নাম ‘হিন্দু জাগরণ মঞ্চ’ হওয়ায় নাম পরিবর্তন করে ‘সনাতন জাগরণ মঞ্চ’ রাখা হয়। এই ‘সনাতন জাগরণ মঞ্চের’ মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী।

২৫ অক্টোবর চট্টগ্রামে সমাবেশ করার পরপরই চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের বিরুদ্ধে জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগ এনে চট্টগ্রামে একটি রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করেন বিএনপি নেতা ফিরোজ খান (পরে বহিষ্কৃত)। মামলার পর সনাতন জাগরণ মঞ্চ ও সম্মিলিত সংখ্যালঘু জোট—এই দুটি প্ল্যাটফর্ম গত ১৭ নভেম্বর ‘বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোট’ নামে আত্মপ্রকাশ করে। নতুন এই জোটের মুখপাত্র করা হয় চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে। এই জোট আট দফা দাবিতে রংপুরে বিশাল সমাবেশ করার পরপরই চিন্ময় কৃষ্ণকে গ্রেপ্তার করা হয়।

জাতিগত সংখ্যালঘুদের নতুন প্ল্যাটফর্ম

খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে হামলার প্রতিবাদে ‘বিক্ষুব্ধ জুম্ম ছাত্র-জনতা’ নামে জাতিগত সংখ্যালঘুদের নতুন প্ল্যাটফর্ম আত্মপ্রকাশ করে। পার্বত্য এলাকার পাশাপাশি তারা ঢাকায়ও কর্মসূচি পালন করে।

পাহাড়ে হামলার প্রতিবাদে বিক্ষুব্ধ জুম্ম ছাত্র-জনতা রাঙামাটি ও খাগড়াছড়িতে গত ২১ ও ২২ সেপ্টেম্বর অবরোধ করে। এই প্ল্যাটফর্মের একজন নেতা প্রথম আলোকে বলেন, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে তাঁরা এই প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছিলেন। এখন আর এটি সক্রিয় নয়।

এ ছাড়া গত ২৮ সেপ্টেম্বর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলন করে ‘বাংলাদেশ বৌদ্ধ সমাজ সুরক্ষা কমিটি’ নামের একটি মোর্চার আবির্ভাব ঘটে। এর চেয়ারম্যান ভদন্ত বুদ্ধপ্রিয় মহাথের এবং সদস্যসচিব অশোক কুমার বড়ুয়া। সমতলের বৌদ্ধদের চার সংগঠন বাংলাদেশ বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘ, বাংলাদেশ বুড্ডিস্ট ফেডারেশন, বাংলাদেশ বৌদ্ধ সমিতি ঢাকা অঞ্চল ও বাংলাদেশ বৌদ্ধ যুব পরিষদের সমন্বয়ে এই মোর্চা গঠন করা হয়। তবে তারা সংবাদ সম্মেলনের বাইরে এখন পর্যন্ত কোনো সমাবেশ করেনি।

হঠাৎ বড় আন্দোলন কেন

নতুন প্ল্যাটফর্মগুলো থেকে আট দফা দাবি তোলা হয়েছে। এর প্রথম দফা হলো ৫ আগস্টের পর সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনায় ‘দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল’ গঠন করে দোষীদের দ্রুততম সময়ে উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া, ক্ষতিগ্রস্তদের যথোপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদান ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা। এ ছাড়া সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, সংখ্যালঘুবিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠনসহ অন্যান্য দাবিও রয়েছে।

এসব দাবির বিষয়ে গত ১৩ আগস্ট সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে দাবি বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দেন প্রধান উপদেষ্টা।

রাজনৈতিক অঙ্গনে এমন আলোচনা আছে, বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মের ডাকা সমাবেশে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের অনেকে অংশ নিয়েছেন।

গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ প্রথম আলোকে বলেন, হিন্দু জনগোষ্ঠীর মধ্যে নিরাপত্তাহীনতার বোধটা বেশ আগে থেকেই চলে আসছে। সেটা উল্লেখযোগ্য মাত্রায় গত কিছুদিনে বৃদ্ধি পাওয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে ভারতের বিভিন্ন মিডিয়ার উসকানি। সেই উসকানির রাজনৈতিক মাত্রা আছে। কারণ, ভারতের বিজেপি সরকার এটা চাইছে। উসকানির মাধ্যমে তারা একটা চাপ সৃষ্টি করতে চাইছে।

অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, মনে রাখতে হবে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর মধ্যে যারা নিরাপত্তাহীনতার বোধ তৈরি করছে বা হামলার মতো ঘটনা ঘটাচ্ছে, তাদের কাজ আসলে বিজেপির পক্ষে যাচ্ছে। এখানে যদি একটা ঘটনা ঘটে, ওইখানে (ভারতে) ১০০টা প্রকাশ করছে বা নতুন নতুন গল্প বানাচ্ছে। এর ফলে এখানে নতুন করে নিরাপত্তাহীনতার সৃষ্টি হচ্ছে। সেটাকে আবার রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে ব্যবহার করছে বিজেপি।

তবে নতুন প্ল্যাটফর্মগুলোকে ইতিবাচকভাবেই দেখেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের অন্যতম সভাপতি নির্মল রোজারিও। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, যেকোনো জাতিগোষ্ঠীর দুঃখ-বেদনা তুলে ধরার অধিকার আছে। এ ধরনের সমস্যা তুলে না ধরা গেলে সেটা আরও জটিল আকার ধারণ করে। তিনি বলেন, যেকোনো প্ল্যাটফর্মই গড়ে ওঠে সমাজ, সম্প্রদায় বা দেশের প্রয়োজনে। বিদ্যমান প্ল্যাটফর্মগুলো থেকে যখন দুঃখ, বেদনা, কষ্টের কথা বলা হয় না বা বলা যায় না, তখন মানুষ নতুন প্ল্যাটফর্মের প্রয়োজন বোধ করে। সেভাবেই ৫ আগস্টের পর কিছু নতুন প্ল্যাটফর্ম গড়ে উঠেছে।