আইসিডিডিআরবির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী
স্বাস্থ্যসম্মত শহর গড়তে প্রয়োজন প্রকৃতির সঙ্গে স্থাপত্য কাঠামোর সমন্বয়: স্থপতি কাজী খালিদ
স্বাস্থ্যসম্মত শহর গড়তে স্থাপত্য কাঠামো তৈরির নকশা ও পরিকল্পনাকে প্রকৃতির সঙ্গে সমন্বয় করতে হবে। ভবন-অবকাঠামো এমনভাবে তৈরি করতে হবে, যাতে ভবনটাই হয় রোগ নিরাময়ের উপকরণ। যেখানে প্রকৃতি সুরক্ষিত থাকবে, মানুষ নিশ্বাস নিতে পারবে।
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর মহাখালীতে আইসিডিডিআরবির ক্যাম্পাসে ‘স্থাপত্যের চেয়ে স্থাপত্য বড়: স্বাস্থ্যকর শহর গড়ে তোলার প্রক্রিয়া’ শীর্ষক বিষয়ে বক্তব্যে স্থপতি কাজী খালিদ আশরাফ এ কথা বলেন। প্রতিষ্ঠানটির ৬৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে (আইসিডিডিআরবি দিবস) এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
কাজী খালিদ আশরাফ বেঙ্গল ইনস্টিটিউট ফর আর্কিটেকচার, ল্যান্ডস্কেপস অ্যান্ড সেটেলমেন্টের মহাপরিচালক। স্বাস্থ্যকর শহর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ঢাকায় উন্নয়নের নামে পর্যায়ক্রমে বন্যার পানিপ্রবাহের জায়গা, কৃষিজমি, জলাভূমি দখল হয়ে যাচ্ছে। এ ধরনের কার্যক্রম মারাত্মক ভুল। ঢাকায় অবকাঠামো তৈরি ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার নীতিমালার মধ্যে ভারসাম্য রাখতে হলে নদী, খাল, জলাভূমিগুলোর তীরে জায়গা রেখে অবকাঠামো নির্মাণ করতে হবে।
নদী-খাল-জলাশয়ের তীরভূমি প্রাকৃতিক জনপরিসর উল্লেখ করে খালিদ আশরাফ বলেন, ‘ঢাকার পরিকল্পনায় পানির প্রবাহকে এক নম্বরে গুরুত্ব দিতে হবে। কিন্তু আমাদের পরিকল্পনায় হয় এর উল্টোটা।’
শহরের সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পের মানে শুধু টাকার অপচয় উল্লেখ করে কাজী খালিদ আশরাফ বলেন, সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পের নামে কিন্তু বাসযোগ্য কিংবা স্বাস্থ্যসম্মত শহর করা হয় না। স্বাস্থ্যসম্মত শহরকে সুন্দর হতে হবে এমন নয়। স্বাস্থ্যসম্মত শহর করতে মৌলিক চিকিৎসাসেবা, খাদ্য সুরক্ষা, নাগরিকদের নিরাপত্তা এবং তাদের জন্য প্রাকৃতিক খোলামেলা জায়গা রাখতে হবে।
পরিবেশদূষণের বিষয়ে পানির উদাহরণ টেনে স্থপতি খালিদ আশরাফ বলেন, আগে পানিকে বিভিন্ন জিনিস বিশুদ্ধ বা পরিষ্কারের কাজে ব্যবহার করা হতো। আর এখন পানিকেই আগে বিশুদ্ধ করতে হচ্ছে। স্বাস্থ্যসম্মত থাকার মানে এখন শুধু হাসপাতাল, ওষুধের ব্যবহার এবং নানা স্বাস্থ্যগত পরীক্ষা-নিরীক্ষা বোঝায়।
শহরে ফুটপাতে কিংবা মানুষের হাঁটাচলার জায়গার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে কাজী খালিদ বলেন, দেশের কোনো সিটি করপোরেশনেই ফুটপাত নিয়ে কোনো দিকনির্দেশনা তৈরি করা হয়নি। জনপরিসর কিংবা মানুষের হাঁটাচলার জায়গা না রেখে যদি গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গা করা হয়, সেটা কখনো সমস্যার সমাধান নয়। দিনের পর দিন গাড়ির সংখ্যা বাড়ছে, ফুটপাতের জায়গা দিনকে দিন কমছে, রাস্তা বড় করা হচ্ছে। এটা যানজট সমস্যার সমাধান করতে পারবে না। এ সিদ্ধান্ত শহরকে মানুষের জন্য বসবাসের আরও অযোগ্য করে তুলছে।
শহরকেন্দ্রিক নতুন আবাসন প্রকল্পের বিষয়ে স্থপতি কাজী খালিদ বলেন, আবাসন ও ভবন নির্মাণ প্রতিষ্ঠানগুলো একের পর এক জলাভূমি ভরাট করে প্লট, উঁচু ভবন কিংবা অ্যাপার্টমেন্ট তৈরি করছে; যেগুলোকে আবাসন প্রকল্প হিসেবে নামকরণের চেষ্টা করা হয়। বাস্তবে এগুলো শুধু একের পর এক ভবনই। জলাভূমি, ধান চাষ বা কৃষিকাজের জায়গা রেখেও যে আবাসন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব, এ ধারণা দেশের আবাসন প্রতিষ্ঠানগুলোর নেই।
গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স কানাডার ফার্স্ট সেক্রেটারি (উন্নয়ন-স্বাস্থ্য) এডওয়ার্ডস ক্যাব্রেরাও অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। তিনি বিশ্ব স্বাস্থ্যে আইসিডিডিআরবির অবদানের প্রশংসা করেন।
অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন আইসিডিডিআরবির নির্বাহী পরিচালক তাহমিদ আহমেদ। তিনি স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন অবদান তুলে ধরেন। বলেন, সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সার্ভিক্যাল ক্যানসারের বিরুদ্ধে চতুর্থ একক-ডোজ এইচপিভি ভ্যাকসিন সেকোলিনের অনুমোদন দেয়। সেখানে আইসিডিডিআরবির ভূমিকা ছিল। এ রোগে প্রতি দুই মিনিটে একজন নারী মৃত্যুবরণ করেন। এর মধ্যে ৯০ শতাংশ নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশে মারা যান।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্যাপনে আইসিডিডিআরবি প্রাঙ্গণে প্রাণবন্ত একটি আনন্দমেলার আয়োজন করা হয়। এতে প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা বিভিন্ন পণ্যের স্টল দেন। বিকেলে নাটক থেকে শুরু করে ম্যাজিক শো, গান ও বাদ্যযন্ত্রের পরিবেশনাসহ মনোজ্ঞ এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। অনুষ্ঠানে প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের পাশাপাশি দাতা সংস্থা ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা উপস্থিত ছিলেন।