মেট্রোরেলচালক দলে দুই নারী
মাস পাঁচেকের মধ্যেই দেশে প্রথম মেট্রোরেল চলাচল শুরু হচ্ছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী ১৬ ডিসেম্বর ঢাকাবাসী মেট্রোরেলে চড়বে। এর মধ্যে যদি দেখা যায় প্রথম ট্রেনটি চালাচ্ছেন একজন নারী চালক, তাহলে সেই মুহূর্ত আরও বিশেষ হয়ে উঠবে। দেশের প্রথম মেট্রোরেল চালানোর জন্য নিয়োগ পাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে দুজন নারীও আছেন। তাঁরা এখন পুরোদমে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন।
ঢাকার মেট্রোরেল নির্মাণ ও পরিচালনার দায়িত্বে আছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। আগামী ডিসেম্বরে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেল চালুর পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে ডিএমটিসিএল। এর মধ্যেই ট্রেনের পরীক্ষামূলক চলাচল শুরু হয়েছে।
মেট্রোরেলের চালকের পদটির নাম ‘ট্রেন অপারেটর’। এই পদে ২৫ জনের সঙ্গে নিয়োগ পেয়েছেন মরিয়ম আফিজা। স্টেশন থেকে ট্রেন পরিচালনায় যুক্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে সমন্বয় করবেন স্টেশন কন্ট্রোলার। এই পদে ৩৪ জনের সঙ্গে নিয়োগ পেয়েছেন আসমা আক্তার। ট্রেন অপারেটর কখনো কখনো স্টেশন কন্ট্রোলারের দায়িত্ব পালন করবেন। আবার স্টেশন কন্ট্রোলার প্রয়োজন হলে ট্রেন চালাবেন।
উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেলের দৈর্ঘ্য ২০ দশমিক ১০ কিলোমিটার। এর মধ্যে উত্তরা-আগারগাঁও অংশ আগামী ১৬ ডিসেম্বর চালুর পরিকল্পনা আছে। এই পথে ৯টি স্টেশন আছে। আগারগাঁও-মতিঝিল অংশে ট্রেন চালু হতে পারে আগামী বছর ডিসেম্বরে। এই পথে স্টেশনের সংখ্যা ৭।
মরিয়ম ও আসমা ইতিমধ্যে চট্টগ্রামের হালিশহরে বাংলাদেশ রেলওয়ের ট্রেনিং একাডেমিতে দুই মাসের প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। ঢাকায় ফিরে আরও চার মাস প্রশিক্ষণ নেন। বর্তমানে উত্তরার দিয়াবাড়িতে মেট্রোরেলের ডিপোতে কারিগরি ও প্রায়োগিক প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। এখানে মেট্রোরেলের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান জাপানের মিতসুবিশি-কাওয়াসাকি কোম্পানির বিশেষজ্ঞরা ট্রেন পরিচালনার কারিগরি ও প্রায়োগিক নানা প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। এরপর তাঁরা দিল্লি মেট্রোরেল একাডেমিতে প্রশিক্ষণ নেবেন। প্রয়োজনে ট্রেন পরিচালনায় যুক্ত ব্যক্তিদের জাপানেও প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরিকল্পনা আছে কর্তৃপক্ষের।
‘মেট্রোরেল অনেকের মতো আমার কাছেও একটা স্বপ্ন। আমি নিজে ট্রেন চালাব—এটা ভেবে এখনই বেশ আনন্দ লাগছে। এখন মূল লক্ষ্য সঠিকভাবে সব প্রশিক্ষণ নেওয়া এবং প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন করা।’মরিয়ম আফিজা, মেট্রোরেল অপারেটর পদে নিয়োগ পাওয়া নারী
মরিয়ম আফিজা নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর করেছেন কেমিস্ট্রি অ্যান্ড কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে। লক্ষ্মীপুরের মেয়ে মরিয়ম নিয়োগ পেয়েছেন গত বছরের ২ নভেম্বর। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, মেট্রোরেল বাংলাদেশে প্রথম। এই চাকরির জন্য আবেদন করেছিলেন আগ্রহ থেকেই। তিনি বলেন, ‘মেট্রোরেল অনেকের মতো আমার কাছেও একটা স্বপ্ন। আমি নিজে ট্রেন চালাব—এটা ভেবে এখনই বেশ আনন্দ লাগছে। এখন মূল লক্ষ্য সঠিকভাবে সব প্রশিক্ষণ নেওয়া এবং প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন করা।’
‘মেট্রোরেল ব্যবস্থার প্রতি একটা প্যাশনও কাজ করেছে। এ জন্য প্রশিক্ষণে মেট্রোরেলের খুঁটিনাটি সবই রপ্ত করার চেষ্টা করছি।’আসমা আক্তার, মেট্রোরেলের স্টেশন অপারেটর পদে নিয়োগ পাওয়া নারী
আসমা আক্তার রাজধানীর তিতুমীর কলেজ থেকে পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতক করেন। স্টেশন কন্ট্রোলার পদে নিয়োগ পেয়েছেন ২০১৯ সালের ২১ আগস্ট। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘পত্রিকায় চাকরির বিজ্ঞাপন দেখে একটা চাকরি করব—শুধু এটা ভেবেই এখানে আসিনি। মেট্রোরেল ব্যবস্থার প্রতি একটা প্যাশনও কাজ করেছে। এ জন্য প্রশিক্ষণে মেট্রোরেলের খুঁটিনাটি সবই রপ্ত করার চেষ্টা করছি।’ তিনি বলেন, ‘আমার পদ স্টেশন কন্ট্রোলার হলেও ট্রেন চালাতে হতে পারে। এটা আসলেই একটা রোমাঞ্চকর ব্যাপার।’
মেট্রোরেল প্রকল্পে অর্থায়ন করছে জাপান সরকারের উন্নয়ন সংস্থা জাইকা। প্রকল্পের মূল কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালের আগস্টে। প্রকল্পের কাজের অগ্রগতিসংক্রান্ত প্রতিবেদন অনুসারে, জুন পর্যন্ত কাজের সার্বিক অগ্রগতি ৮১ দশমিক ১৯ শতাংশ।
শুরুতে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল (লাইন-৬) নির্মাণ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা। আরও প্রায় সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকা ব্যয় বাড়ানোর আবেদন করা হয়েছে। অনুমোদন পেলে ব্যয় দাঁড়াবে প্রায় সাড়ে ৩৩ হাজার কোটি টাকা। শুরুতে ২০২৪ সালের জুনে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল। নতুন করে প্রকল্পের বাস্তবায়নকাল আরও দেড় বছর বাড়ানোর আবেদন করা হয়েছে।
উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেলের দৈর্ঘ্য ২০ দশমিক ১০ কিলোমিটার। এর মধ্যে উত্তরা-আগারগাঁও অংশ আগামী ১৬ ডিসেম্বর চালুর পরিকল্পনা আছে। এই পথে ৯টি স্টেশন আছে। আগারগাঁও-মতিঝিল অংশে ট্রেন চালু হতে পারে আগামী বছর ডিসেম্বরে। এই পথে স্টেশনের সংখ্যা ৭। আগারগাঁও পর্যন্ত অংশের স্টেশন নির্মাণসহ যাবতীয় কাজ শেষ হয়েছে। ইতিমধ্যে ১৪ সেট (এক সেটে ছয়টি কোচ) মেট্রোরেল ঢাকায় আছে। এগুলো পরীক্ষামূলকভাবে চলাচল করছে।
জনবল নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ তদারকির দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা (উপসচিব) সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, এখন যেসব লোকবল দরকার, তাঁদেরই নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। কাউকে যাতে বসিয়ে রাখতে না হয়, আবার নিয়োগের পর যাতে পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ দেওয়ার সময় থাকে—এই দুটি বিষয় বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, রোববার পর্যন্ত ট্রেন পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত ২১৮ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। প্রতিদিন-প্রতি সপ্তাহেই নতুন নতুন নিয়োগ হচ্ছে। সঙ্গে চলছে প্রশিক্ষণও।
মেট্রোরেলের উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অংশের স্টেশন নির্মাণসহ যাবতীয় কাজ শেষ হয়েছে। ইতিমধ্যে ১৪ সেট (এক সেটে ছয়টি কোচ) মেট্রোরেল ঢাকায় আছে। এগুলো পরীক্ষামূলকভাবে চলাচল করছে।
সামনে ফ্রন্টলাইন কাস্টমার রিলেশন অফিসার ও টিকিট মেশিন অপারেটর পদে আরও প্রায় ৪০০ লোক নিয়োগ দেওয়া হবে। এঁদের মধ্যে বেশি সংখ্যায় নারী নিয়োগ দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এম এ এন সিদ্দিক প্রথম আলোকে বলেন, আগামী ডিসেম্বরে মেট্রোরেল চালুর লক্ষ্য নিয়ে পুরোদমে কাজ চলছে। তিনি বলেন, মেট্রোরেল পরিচালনায় যোগ্য ও দক্ষ লোকবল নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে নারীরাও যাতে বেশি সংখ্যায় নিয়োগ পান, সে বিষয়টিতেও নজর দেওয়া হচ্ছে।