উন্নয়নকে ম্লান করে দিচ্ছে দুর্নীতি: পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী
দুর্নীতি দেশের উন্নয়নকে ম্লান করে দিচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম। তিনি বলেছেন, দেশে পর্যাপ্ত আইন আছে, প্রতিষ্ঠান আছে। অভাব হচ্ছে আইনের বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ।
জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে আজ বুধবার এক সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রতিমন্ত্রী এসব কথা বলেন। ‘খাদ্যনিরাপত্তাকে শক্তিশালী করে পুষ্টি পরিস্থিতির উন্নয়নে সংসদ সদস্যদের সম্পৃক্তকরণ’ শীর্ষক এই সেমিনারের আয়োজন করে বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি ফোরাম ফর হেলথ অ্যান্ড ওয়েল বিয়িং।
সংসদ সদস্য মো. হাবিবে মিল্লাতের সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। নারী ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ, সংসদ সদস্য সিমিন হোসেন প্রমুখ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
একজন দুর্নীতি করে বেশি সুযোগ-সুবিধা নেবে, রাস্তার অর্ধেক কাজ করে টাকা নিয়ে যাবে, দুর্নীতির কারণে আমি আমার প্রাপ্য পাচ্ছি না—এই বিষয়গুলো কেন সংসদে সোচ্চার কণ্ঠে শুনতে পাই না, তা বুঝতে পারি না।শামসুল আলম, প্রতিমন্ত্রী
পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম বলেন, দেশে আইন আছে, কিন্তু বাস্তবায়িত হচ্ছে না। এ ঘাটতি থেকে কীভাবে উন্নতি ঘটবে? এ বিষয়ে সংসদ সদস্যদের দায়িত্ব হচ্ছে সংসদে বিষয়গুলো তুলে ধরা।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমার সামনে একজন দুর্নীতি করে বেশি সুযোগ-সুবিধা নেবে, রাস্তার অর্ধেক কাজ করে টাকা নিয়ে যাবে, দুর্নীতির কারণে আমি আমার প্রাপ্য পাচ্ছি না—এই বিষয়গুলো কেন সংসদে সোচ্চার কণ্ঠে শুনতে পাই না, তা বুঝতে পারি না।’
দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআই) পরিচালিত ‘দুর্নীতির ধারণা সূচক ২০২১’ শীর্ষক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশগুলোর তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ১৩তম। কম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ১৮০টি দেশের মধ্যে ১৪৭তম।
প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম অনুষ্ঠানে বলেন, ‘আমি মন্ত্রী। তবু সংসদ সদস্যদের কাছ থেকে সংসদে শুনতে চাই কীভাবে দুর্নীতি কমানো যায়। উন্নয়ন খুবই উপাদেয়, যদি সেটাকে দুর্নীতিমুক্ত করা যায়। জনগণকে বাস্তবে দেখাতে হবে আমরা দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিচ্ছি না, তখন উন্নয়ন কথাটা ভালো শোনাবে।’ তিনি বলেন, ‘আর না হয় আপনারা পারসেন্টেজ (ভাগ) নেবেন, আপনার জন্য ১০ শতাংশ রাখতে হবে, সংসদে অনেকেই সম্মানিত এবং ভালো ব্যক্তি রয়েছেন সন্দেহ নেই। আবার অনেকেই আছেন নির্বাচিত হয়েও অনেক ধরনের ভাগবাঁটোয়ারার সঙ্গে জড়িত, এটা অস্বীকার করা যাবে না। সুন্দর ও মানসম্মত জীবনের জন্য দুর্নীতিমুক্ত দেশ প্রয়োজন।’
এর আগে ২০২০ সালের নভেম্বরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন দুর্নীতি ও টাকা পাচার নিয়ে কথা বলেছিলেন। এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, রাজনীতিবিদেরা নন, বিদেশে বেশি অর্থ পাচার করেন সরকারি চাকুরেরা। তিনি আরও বলেন, ‘আমার ধারণা ছিল রাজনীতিবিদের সংখ্যা বেশি হবে, কিন্তু আমার কাছে যে তথ্য এসেছে, যদিও এটি সামগ্রিক তথ্য নয়, সেটিতে আমি অবাক হয়েছি। সংখ্যার দিক থেকে আমাদের অনেক সরকারি কর্মচারীর বাড়িঘর সেখানে বেশি আছে এবং তাঁদের ছেলেমেয়েরা সেখানে থাকে।’
২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটি (জিএফআই) এক প্রতিবেদনে জানায়, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর গড়ে ৭৫৩ কোটি ৩৭ লাখ ডলার পাচার হয়, তখনকার বাজারদরে (৮৫ টাকায় প্রতি ডলার) এর পরিমাণ ৬৪ হাজার কোটি টাকা।
এদিকে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) গত জানুয়ারিতে ‘সেবা খাতে দুর্নীতি: জাতীয় খানা জরিপ ২০২১’ শীর্ষক প্রতিবেদনে জানায়, সেবা খাতে দুর্নীতির শিকার হচ্ছে প্রায় ৭১ শতাংশ খানা (পরিবার)। বিভিন্ন সেবা পেতে প্রতিটি পরিবারকে গড়ে ৬ হাজার ৬৩৬ টাকা ঘুষ দিতে হয়েছে।