ফ্রান্সে আয়রনম্যানের বিশ্ব আসরে একসঙ্গে সফল ৪ বাংলাদেশি

নিশে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ সম্পন্ন করার পর তিন বাংলাদেশি (বাঁ থেকে) মোহাম্মদ সামছুজ্জামান আরাফাত, শুভ কুমার দে ও আরিফুর রহমান
ছবি: সংগৃহীত

খেলার ভাষায় এক দিনের মধ্যে কঠিনতম ট্রায়াথলন হলো ‘আয়রনম্যান’ প্রতিযোগিতা। এর সর্বোচ্চ আসর ‘আয়রনম্যান বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ ২০২৩’-এ এই প্রথমবারের মতো এবার পাঁচ বাংলাদেশি ক্রীড়াবিদ অংশগ্রহণের যোগ্যতা অর্জন করেছিলেন। গতকাল রোববার ফ্রান্সের নিশে অনুষ্ঠিত আয়রনম্যান বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশের চারজন ট্রায়াথলেট নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই আয়রনম্যানের চ্যালেঞ্জ সম্পন্ন করেন।

বাংলাদেশের মোহাম্মদ সামছুজ্জামান আরাফাত, আরিফুর রহমান, মিশু বিশ্বাস ও শুভ কুমার দে আয়রনম্যান বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নিয়ে সফল হয়েছেন। পবিত্র কুমারকে সাঁতার সম্পন্ন করলেও অসুস্থ হয়ে পড়ায় প্রতিযোগিতা থেকে বিদায় নিতে হয়।

নিয়ম অনুযায়ী, পূর্ণদৈর্ঘের এই আয়রনম্যান বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে প্রত্যেক প্রতিযোগীকে ১৭ ঘণ্টা সময়ের মধ্যে সমুদ্রে ৩ দশমিক ৮ কিলোমিটার সাঁতার, পাহাড়ি রাস্তায় ১৮০ কিলোমিটার সাইক্লিং এবং উঁচু–নিচু পথে ৪২ দশমিক ২ কিলোমিটার দৌড় সম্পন্ন করতে হয়েছে। গতকাল স্থানীয় সময় সকাল সাতটায় সাঁতারের মাধ্যমে শুরু হয় এই প্রতিযোগিতা। আয়রনম্যান কর্তৃপক্ষের ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, এবারের আসরে ৯৩টি দেশ থেকে ২ হাজার ৮০ জন ট্রায়াথলেট বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নেন।

মিশু বিশ্বাস প্রথমবারের মতো বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নিয়ে সফল হলেন
সংগৃহীত

চার বাংলাদেশি আয়রনম্যানের মধ্যে সবার আগে মোহাম্মদ সামছুজ্জামান আরাফাত সাঁতার, সাইক্লিং ও দৌড় শেষ করেন। তাঁর সময় লেগেছ ১১ ঘণ্টা ৩১ মিনিট ৮ সেকেন্ড। প্রতিযোগিতা সম্পন্ন করা ১ হাজার ৯৯৮ জনের মধ্যে আরাফাতের অবস্থান ৬৩৯তম। ৩০ থেকে ৩৪ বছর বয়স গ্রুপে ২২২ জনের মধ্যে তিনি অর্জন করেছেন ১২৯তম স্থান।

বাংলাদেশের আরিফুর রহমানের সময় লেগেছে ১৩ ঘণ্টা ১২ মিনিট ২৩ সেকেন্ড। তাঁর অবস্থান ১ হাজার ৪১১তম। নিজের বয়স গ্রুপে (৩৫–৩৯ বছর) ২৬৮ জনের মধ্যে আরিফুর হয়েছেন ২৩২তম। ১৩ ঘণ্টা ৪১ মিনিট ১৮ সেকেন্ড সময় নিয়ে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ সম্পন্ন করেছেন মিশু বিশ্বাস। তাঁর অবস্থান ১ হাজার ৫৪৬তম। ৩০–৩৪ বয়স গ্রুপে ২২২ জনের মর্ধে মিশুর স্থান ২০৭ নম্বরে। সাঁতার, সাইক্লিং ও দৌড় শেষ করতে বাংলাদেশের শুভ দে সময় নিয়েছেন ১৫ ঘণ্টা ২৮ মিনিট ৩৪ সেকেন্ড। তাঁর অবস্থান ১ হাজার ৮৭৬তম। নিজের বয়স গ্রুপে (৩৫-৩৯ বছর) ২৬৮ জনের মধ্যে শুভ হয়েছেন ২৬৩তম।

এবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে শীর্ষস্থান অর্জন করেছেন ডেনমার্কের লারস লমহল্ট। তিনি ৮ ঘণ্টা ৫৫ মিনিট ২৬ সেকেন্ডে সাঁতার, সাইক্লিং ও দৌঁড় সম্পন্ন করেছেন। দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে আছেন যথাক্রমে সুইজারল্যান্ডের ইয়ারি ক্লেইস (৯ ঘণ্টা ২ মিনিট ১৭ সেকেন্ডে) ও চীনের মিয়াও হাও (৯ ঘণ্টা ৯ মিনিট ৫৯ সেকেন্ডে)।

আরও পড়ুন

নিশ থেকে মুঠোফোনে মোহাম্মদ সামছুজ্জামান আরাফাত বলেন, ‘আয়রনম্যানের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে কঠিন চ্যালেঞ্জই দেওয়া হয়। একসঙ্গে চারজন আমরা বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশের পতাকা ওড়াতে পারলাম, এটা অনেক বড় কথা। প্রতিবারই আয়রনম্যান শেষ করার পর নতুন আত্মবিশ্বাস পাই। এবার আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে আনন্দটাও অনেক বেশি।’

এবারের আয়রনম্যান বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে সফল হয়ে বাংলাদেশি হিসেবে রেকর্ড সৃষ্টি করলেন আরাফাত। আরাফাতের এটি দ্বিতীয় আয়রনম্যান বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ অর্জন। দুই সপ্তাহ আগে দ্বিতীয়বারের মতো অর্ধ দূরত্বের আয়রনম্যান ৭০ দশমিক ৩ বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ সম্পন্ন করেছেন ফিনল্যান্ডের লাহটিতে। দুই ঘরানা মিলিয়ে আয়রনম্যানের চারটি আয়রনম্যান বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের পদক এখন আরাফাতের ঝুলিতে। পেশাগত জীবনে বাংলাদেশ ব্যাংকের উপপরিচালক মোহাম্মদ সামছুজ্জামান আরাফাত ২০১৬ সাল থেকে আয়রনম্যান আয়োজনে অংশ নিচ্ছেন। এ পর্যন্ত পূর্ণ ও অর্ধ দূরত্বের ১০টি আয়রনম্যান প্রতিযোগিতা সম্পন্ন করেছেন তিনি।
আয়রনম্যান বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে এই প্রথম সফল হলেন আরিফুর রহমান। গত বছর তিনি আয়রনম্যান মালয়েশিয়া সম্পন্ন করেন। বাংলা চ্যানেল সাঁতার সম্পন্ন করেছেন একবার। পেশাগত জীবনে ব্যাংকার আরিফুর রহমান বর্তমানে জনতা ব্যাংকের প্রিন্সিপাল অফিসার।

টানা দুইবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ সম্পন্ন করার পর বাংলাদেশের পতাকা হাতে আরাফাত
সংগৃহীত

মিশু বিশ্বাস এর আগে তিনটি আয়রনম্যান প্রতিযোগিতা সম্পন্ন করেছেন। এই প্রথম সফল হলেন বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে। চলতি বছরের মে মাসে মিশু বিশ্বাস ব্রাজিল আয়রনম্যান সম্পন্ন করেন। ২০২২ সালে অংশ নেন আয়রনম্যান মালয়েশিয়ায়। আর ২০২১ সালে তুরস্কে আয়রনম্যান ৭০ দশমিক ৩ আসরে অংশ নেন মিশু বিশ্বাস। মিশু বিশ্বাস ডিবি রমনা বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি)।

শুভ কুমার দেরও এটি প্রথম বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ। শুভ গত বছর আয়রনম্যান মালয়েশিয়া সম্পন্ন করেছেন। এর আগে বাংলা চ্যানেলও পাড়ি দিয়েছেন একবার। পেশাগত জীবনে শুভ কুমার দে মুঠোফোন সংযোগদাতা প্রতিষ্ঠান বাংলালিংকের বিপণন বিভাগের কর্মকর্তা।