সয়াবিনকে ছাড়িয়ে গেল পাম তেলের দাম

সয়াবিন তেল

বছরের পর বছর ধরে পাম তেলের চেয়ে সয়াবিন তেলের দাম ছিল বেশি। গত এক দশকে প্রতি টনে এই পার্থক্য ছিল গড়ে ১৬২ ডলার। তবে এবার সয়াবিনকে ছাড়িয়ে গেছে পাম তেলের দাম। এ মুহূর্তে বিশ্ববাজার থেকে পাম তেল আমদানি করতে হলে সয়াবিনের চেয়ে বেশি দাম দিতে হবে আমদানিকারকদের।

যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোভিত্তিক ভোগ্যপণ্য লেনদেনের এক্সচেঞ্জ শিকাগো বোর্ড অব ট্রেডের (সিবিওটি) ওয়েবসাইটে দেখা যায়, নভেম্বরে সয়াবিন তেল সরবরাহের চুক্তি হয়েছে টনপ্রতি প্রায় এক হাজার ডলারে। একই সময়ে পাম তেল সরবরাহের চুক্তি হয় টনপ্রতি ১ হাজার ১২৭ ডলারে। অথচ গেল অক্টোবরেও গড়ে টনপ্রতি ১৮ ডলার বেশি ছিল সয়াবিনের দাম।

বাংলাদেশের ভোজ্যতেল আমদানিকারকেরা জানান, এখন বিশ্ববাজার থেকে চট্টগ্রাম বন্দর পর্যন্ত সয়াবিন তেল আমদানিতে খরচ পড়বে ১ হাজার ২৫০ ডলার। পাম তেল আমদানিতে এর চেয়ে ২০ ডলার বেশি খরচ পড়ছে।

শীর্ষস্থানীয় শিল্প গ্রুপ মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ (এমজিআই) চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল প্রথম আলোকে বলেন, খুবই অবাক করা ঘটনা যে বিশ্ববাজার থেকে সয়াবিনের চেয়ে পাম তেল বেশি দামে আমদানি করতে হচ্ছে। গত দুই দশকে শুধু একবার এমন ঘটনা ঘটেছিল। এবার একই ঘটনা ঘটেছে। মূলত ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ায় উৎপাদন কম ও বায়োডিজেলে পামবীজের ব্যবহার বাড়ায় এমনটা হয়েছে।

আমদানির হিসাবে, বাংলাদেশে পাম তেল আমদানি হয় প্রায় ৭০ শতাংশ। সয়াবিন তেল আমদানি হয় ৩০ শতাংশ। পাম তেল ব্যবহার হয় হোটেল, রেস্তোরাঁ ও খাদ্যপণ্যশিল্পে। গ্রামঞ্চলে খোলা তেল হিসেবে পাম তেল ব্যবহৃত হয় বেশি।

বিশ্বের অন্য দেশের মতো বাংলাদেশেও সয়াবিনের দামের দাপটে পাম তেলের কদর ছিল কম। শুধু দামের কারণে পাম তেল আমদানি হয় বেশি। আবার সয়াবিনের দামের সুবিধা নিতে দুবার পরিশোধিত ‘সুপার পাম তেল’ সয়াবিন হিসেবে খোলাবাজারে বিক্রি করতেন খুচরা বিক্রেতারা। অবশ্য শীতকালে এই কৌশল কাজে দিত না। কারণ, শীতে সুপার পাম তেল জমাট বেঁধে যেত। তাতে প্রতিবার শীত মৌসুমে সয়াবিনের কদর আরও বাড়ত। সেই সয়াবিন তেল এখন কদর হারাতে বসেছে পাম তেলের কাছে।

বিশ্ববাজারে সয়াবিন তেলের দাম কখন পাম তেলের নিচে নেমেছে, তা জানতে ১৭ বছর আগে ফিরে যেতে হবে। বিশ্বব্যাংকের হিসাবে, এ ঘটনা ঘটেছিল ২০০৭ সালের মে মাসে। সে সময় সয়াবিনের দাম ছিল ৭৮৮ ডলার। পাম তেলের দাম ছিল সয়াবিনের চেয়ে টনপ্রতি ২৭ ডলার বেশি বা ৮১৬ ডলার। এর আগে ২০০০ সালের এপ্রিলে সয়াবিনের চেয়ে টনপ্রতি চার ডলার বেড়ে পাম তেলের দাম টনপ্রতি ৩৭২ ডলারে ওঠেছিল। সব মিলিয়ে একবিংশ শতকের ২৪ বছরে মাত্র দুবার পাম তেলের ঝলক দেখেছিলেন ব্যবসায়ীরা।

বিশ্ববাজারে বাড়লেও বাংলাদেশে এখনো পাম তেলের দাম সয়াবিনকে ছাড়িয়ে যায়নি। তবে ব্যবধান কমে আসছে। যেমন ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেলের দাম ১৬৭ থেকে ১৬৮ টাকা। পাম তেলের লিটারপ্রতি দাম ১৬২-১৬৩ টাকা। লিটারপ্রতি ব্যবধান এখন পাঁচ টাকা। এক মাসে আগে এই ব্যবধান ছিল আট টাকা। এক বছর আগে ছিল ২৫ টাকা। এই দুটি ভোজ্যতেল যেহেতু আমদানিনির্ভর, তাই ধীরে ধীরে দেশেও খুব সহসা সয়াবিনের দামের আধিপত্য কমবে বলে ব্যবসায়ীরা জানান।

জেন-জি প্রজন্মের কাছে সয়াবিন ও পাম তেলের দামের এমন চমকে দেওয়া ঘটনা হলেও জেনারেশন এক্স কিংবা জেনারেশন ওয়াইদের কাছে অতটা অবাক করার মতো ঘটনা না। বিশ্বব্যাংক জানাচ্ছে, ১৯৬০ থেকে ২০০০ সালের আগপর্যন্ত মোট ৪৮০ মাসের মধ্যে সয়াবিনের চেয়ে পাম তেলের দাম বেশি ছিল ১২২ মাসে। এমন তথ্য নিশ্চয়ই জেন-জির কাছে অজানা। নতুন করে পাম তেলের দাম বেড়ে নতুন-পুরোনো প্রজন্মের কাছে ভুলে যাওয়া ঘটনা সামনে নিয়ে এল।