অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম ১০০ দিনে অপতথ্যের প্রবাহ ভয়াবহ রূপ নিয়েছিল। এই সময়কালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ ইন্টারনেটের বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচার হওয়া প্রায় ৯০০ অপতথ্য শনাক্ত করা হয়েছে। সর্বোচ্চ ৯৯টি অপতথ্য প্রচার করা হয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার নিয়ে।
‘অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিনে অপতথ্যের প্রবাহের পরিসংখ্যান’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে বাংলাদেশের তথ্য যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান রিউমর স্ক্যানার।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। সেদিন তিনি দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যান। শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিন পূর্ণ হয় গত ১৫ নভেম্বর।
রিউমর স্ক্যানার এই ১০০ দিনে (৮ আগস্ট থেকে ১৫ নভেম্বর) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ ইন্টারনেটের বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচার হওয়া অপতথ্য পর্যবেক্ষণ, অনুসন্ধান ও শনাক্ত করেছে। এই সময়ে প্রতিষ্ঠানটি মোট ৮৯৬টি অপতথ্য শনাক্ত করে।
রিউমর স্ক্যানার বলেছে, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম ১০০ দিনে অপতথ্যের প্রবাহ বেশ ভয়াবহ রূপ নিয়েছিল। ফেসবুকের পাশাপাশি অপতথ্যের প্রবাহে বেশ আলোচনায় ছিল মাইক্রো ব্লগিং সাইট এক্স (সাবেক টুইটার)। সাম্প্রদায়িক অপতথ্যের প্রচারে এক্স হয়ে উঠেছিল যেন এক আঁতুড়ঘর। এর বাইরে এই সময়ে ইস্যুভিত্তিক বিভিন্ন অপতথ্য ছড়ানো হয়েছিল বেশ জোরাশোরে।
অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিনে রিউমর স্ক্যানার সবচেয়ে বেশি অপতথ্য শনাক্ত করেছে সেপ্টেম্বরে (২৭৬টি)। আগস্টে (৮-৩১ আগস্ট) শনাক্ত হয় ২৪৬টি অপতথ্য। অক্টোবরে ২১৬টি। আর নভেম্বরে (১-১৫ নভেম্বর) ১৫৮টি অপতথ্য শনাক্ত হয়।
রিউমর স্ক্যানার এই সময়ে রাজনীতি নিয়ে সবচেয়ে বেশি অপতথ্য শনাক্ত করে (২৮৮টি)। এরপর যথাক্রমে আছে জাতীয় (২৫১টি), ধর্মীয় (৭৮টি), পরিবেশ ও জলবায়ু (৬২টি), আন্তর্জাতিক (৫৯টি), প্রতারণা (৩৮টি), বিনোদন (৩৫টি), খেলাধুলা (২৬টি), শিক্ষা (২০টি) ও অন্যান্য ৩৯টি।
রিউমর স্ক্যানারের প্রতিবেদন বলছে, ১০০ দিনে অন্তর্বর্তী সরকার নিয়ে অপতথ্য শনাক্ত করা হয় ৯৯টি। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের নামে ছড়ানো অপতথ্য শনাক্ত হয় ৯০টি। শেখ হাসিনার নামে ৭২টি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া সারজিস আলমের নামে ২৪টি, হাসনাত আবদুল্লাহর নামে ১৮টি। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের নামে ১৫টি। উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের নামে ১৫টি। উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার নামে ১৫টি। ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের নামে ১১টি। আর উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের নামে ৮টি অপতথ্য শনাক্ত করা হয়।
এই সময়কালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে নিয়ে ৪৭টি অপতথ্য শনাক্ত করে রিউমর স্ক্যানার। এ ছাড়া বাংলাদেশ পুলিশের নামে ১৬টি, বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর নামে ৫টি, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) নামে ২টি ও বাংলাদেশ নৌবাহিনীর নামে ১টি অপতথ্য শনাক্ত করা হয়।
রিউমর স্ক্যানার অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিনে সাম্প্রদায়িক বিষয়ের ৮৪টি অপতথ্য শনাক্ত করে। আগস্টের বন্যা নিয়ে ৮৯টি, সেপ্টেম্বরে পাহাড়ে সংকট নিয়ে ১৮টি, শহীদ নূর হোসেন দিবস ঘিরে ১৭টি, সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের অধিবেশনে বাংলাদেশ নিয়ে ১৬টি, অক্টোবরের দুর্গাপূজা নিয়ে ১৫টি অপতথ্য শনাক্ত করে।
এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানটি সেপ্টেম্বরে উত্তরবঙ্গের বন্যা নিয়ে ৭টি, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে ৭টি, ঢাকায় ইসলামি মহাসম্মেলন নিয়ে ৬টি, সেন্ট মার্টিন নিয়ে ৫টি এবং আগস্টে সচিবালয় এলাকায় আনসার সদস্যদের আন্দোলন নিয়ে ৪টি অপতথ্য শনাক্ত করে।
রিউমর স্ক্যানারের জ্যেষ্ঠ ফ্যাক্টচেকার তানভীর মাহতাব আবীর প্রথম আলোকে বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিনে অপতথ্য ছড়ানোর ক্ষেত্রে রাজনৈতিক পটপরিবর্তন বড় ভূমিকা রেখেছে। এই সময়ে উদ্দেশ্যমূলকভাবে অনেক অপতথ্য ছড়ানো হয়েছে।