ফায়ার সার্ভিসের ভবন নির্মাণ: বাজারমূল্য বর্গফুটে ৭ হাজার টাকা, গণপূর্ত ব্যয় করতে চায় সাড়ে ২১ হাজার

বর্গফুটপ্রতি ব্যয় ধরা হয়েছে ২১ হাজার ৫৮৪ টাকা। পরিকল্পনা কমিশন ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারমূল্য ৫-৭ হাজার টাকা।

ঢাকার মিরপুরে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের একটি ভবন নির্মাণে বর্গফুটপ্রতি ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে ২১ হাজার ৫৮৪ টাকা। ভবনটি নির্মাণের প্রকল্প নেওয়া সংস্থা গণপূর্ত অধিদপ্তর বলছে, ভূমিকম্প সহনীয় করে নির্মাণ করা হবে বলে ব্যয় বেশি পড়বে।

কিন্তু প্রস্তাবিত ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পরিকল্পনা কমিশন। আবাসন ব্যবসায়ীরাও বলছেন, প্রস্তাবিত ব্যয় বাজারমূল্যের প্রায় তিন গুণ। ভূমিকম্প সহনীয় করতে সাধারণ ভবনের চেয়ে বাড়তি ব্যয় হতে পারে। তবে সেটা তিন গুণ হওয়ার কারণ নেই।

মিরপুর ১০ নম্বর সেকশনে ফায়ার সার্ভিসের সদর দপ্তর। সেখানেই নতুন ১০ তলা ভবনটি করতে চায় গণপূর্ত। তারা বলছে, ভূমিকম্প হলে যাতে এই ভবন টিকে থাকে, সেখান থেকে উদ্ধারকাজ পরিচালনা করা যায়, সেই লক্ষ্যে ভবনকে ভূমিকম্প সহনীয় করে নির্মাণ করা হবে।

মিরপুরে বাণিজ্যিক ভবনের প্রতি বর্গফুটের নির্মাণ ব্যয় ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা। উপকরণের ভিন্নতার কারণে সেটা কিছুটা কমবেশি হতে পারে। বর্গফুটপ্রতি প্রায় ২২ হাজার টাকা অনেক বেশি।
আলমগীর শামসুল আলামিন, সভাপতি, রিহাব

ফায়ার সার্ভিসের ভবন নির্মাণে গণপূর্ত অধিদপ্তর ‘নগরাঞ্চলের ভবন সুরক্ষা’ শিরোনামে একটি প্রকল্প নেয়। এর ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৪১ কোটি টাকা, যার ৬১৭ কোটি টাকা দেবে জাপানের উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা জাইকা। বাকি ১২৪ কোটি টাকা দেবে সরকার। প্রকল্পে ভবন নির্মাণের ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৫৫ কোটি টাকা। প্রকল্পে বিদেশি পরামর্শকের পেছনে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩৮ কোটি টাকা, যা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে পরিকল্পনা কমিশন।

প্রকল্পটি পর্যালোচনার জন্য গত ১ আগস্ট একটি সভা হয়, যেখানে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য (সচিব) এমদাদ উল্লাহ মিয়ানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় ভবন নির্মাণে প্রস্তাবিত ব্যয়ের নানা অসংগতি নিয়ে আলোচনা হয়।

ফায়ার সার্ভিসের ভবনটি নির্মাণে দুই ধরনের ব্যয়ের চিত্র দেখানো হয়েছে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবে (ডিপিপি)। এতে বলা হয়, ভূমিকম্প সহনীয় উপকরণ ব্যবহার করা হলে বর্গফুটপ্রতি ব্যয় হবে ২১ হাজার ৫৮৪ টাকা। ভূমিকম্প সহনীয় উপকরণ ছাড়া বর্গফুটপ্রতি ব্যয় হবে ১৯ হাজার ৪৯২ টাকা। ভবনটির আয়তন ধরা হয়েছে ২ লাখ ৩৯ হাজার বর্গফুট।

প্রস্তাবটি পর্যালোচনা করে পরিকল্পনা কমিশন বলেছে, ভবনে ভূমিকম্প সহনীয় উপকরণ ব্যবহারে আলাদা করে ৪০ কোটি টাকা রাখা হয়েছে। এরপরও বর্গফুটপ্রতি ব্যয় কেন ২২ হাজার টাকার কাছাকাছি, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে কমিশন বলেছে, এর আগে বহুতল ভবন নির্মাণে সরকারি বিভিন্ন সংস্থা বর্গফুটপ্রতি ৫ থেকে ৭ হাজার টাকার মধ্যে ব্যয় করেছে।

আরও পড়ুন

ভবনটি নির্মাণে বর্গফুটপ্রতি কত টাকা ব্যয় হতে পারে, তা পর্যালোচনার জন্য গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সৈয়দ মামুনুল আলমকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। মামুনুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ভবনটি নির্মাণ করবে জাপানের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। দরপত্রে প্রতি বর্গফুটে যে ব্যয় এসেছে, সেখান থেকে কমানোর সুযোগ কম। তবে পরিকল্পনা কমিশন পরামর্শকের খরচসহ অন্য যেসব জায়গায় পর্যবেক্ষণ দিয়েছে, সেখানে ব্যয় কমানোর চেষ্টা থাকবে।

সূত্র বলছে, ভবনটি নির্মাণে কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে (ডিপিএম)। এ কারণে প্রতিযোগিতা হয়নি।

ফায়ার সার্ভিস স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের অধীন একটি সংস্থা। তাদের জন্য ভবন নির্মাণের প্রকল্প নিয়েছে গণপূর্ত। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, প্রকল্পটি নেওয়ার ক্ষেত্রে সুরক্ষা সেবা বিভাগের সম্মতিও নেওয়া হয়নি।

আরও পড়ুন

১০ তলা ভবন কী কী কাজে ব্যবহার করা হবে, কারা ব্যবহার করবে, সে ক্ষেত্রে জনবল আছে কি না, তা নিয়ে পরিকল্পনাও করা হয়নি। মেট্রোরেলের দুটি রুটে (৬ ও ১) অবকাঠামো নির্মাণের ক্ষেত্রে ফায়ার সার্ভিসের সদর দপ্তরের জমির একাংশ ব্যবহারের প্রয়োজন পড়বে। পরিকল্পনা কমিশন এসব জটিলতা নিরসনের তাগিদ দিয়েছে। তবে সবচেয়ে বড় আপত্তি এসেছে ব্যয় নিয়ে।

ঢাকায় একটি ভবন নির্মাণে বর্গফুটপ্রতি ব্যয় কত হয়, তা জানতে চাওয়া হয়েছিল আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিহাবের সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিনের কাছে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, মিরপুরে বাণিজ্যিক ভবনের প্রতি বর্গফুটের নির্মাণ ব্যয় ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা। উপকরণের ভিন্নতার কারণে সেটা কিছুটা কমবেশি হতে পারে। বর্গফুটপ্রতি প্রায় ২২ হাজার টাকা অনেক বেশি।