ফেসবুকের সাহায্যে আত্মহত্যা ঠেকাতে বাংলাদেশে গবেষণা
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে ফেসবুক এবং অনলাইন ব্যবহারকারীদের আত্মহত্যার প্রবণতা রোধের কথা ভেবেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক।
ফেসবুকে গত বছরের প্রথম দিকে একজন স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন, ‘আমার আত্মা ডিহাইড্রেটেড (শুষ্ক) হয়ে যাচ্ছে’। আরেকজনের স্ট্যাটাস ছিল, ‘বিদায় পৃথিবী’।
আপাতদৃষ্টে মনে হতে পারে, এসব স্ট্যাটাসে খুব বেশি আমল দেওয়ার কিছু নেই। তবে বিষয়টি একেবারে হেলাফেলারও নয়। আমাদের চারপাশে এমন অনেকেই বিষণ্নতা থেকে আত্মহত্যাপ্রবণ হয়ে ওঠেন। একটু আগে নজর দিলে হয়তো তাঁদের জীবনমুখী করে তোলা সম্ভব।
এই ভাবনা থেকেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে ফেসবুক এবং অনলাইন ব্যবহারকারীদের আত্মহত্যার প্রবণতা রোধের কথা ভেবেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং (আইসিই) বিভাগের একদল গবেষক। বাংলাভাষী ফেসবুক ব্যবহারকারীদের স্ট্যাটাস, বিভিন্ন গ্রুপে দেওয়া বার্তার আলোকে হতাশার মাত্রা শনাক্ত করে আত্মহত্যার প্রবণতা কীভাবে প্রতিরোধ করা যায়, তা খুঁজতেই এই গবেষণা হয়েছে। গবেষণাটি তাত্ত্বিক পর্যায়ে রয়েছে। ফেসবুকের সঙ্গে এই পদক্ষেপ নিয়ে এখনো গবেষকদের যোগাযোগ হয়নি।
মনোবিদেরা বলছেন, উদ্যোগটি ভালো। তবে যথেষ্ট সতর্কতার সঙ্গে বিজ্ঞানসম্মতভাবে কাজটি করা দরকার। মনোবিদদের এই কাজে যুক্ত করতে হবে।
আত্মহত্যাপ্রবণ এক মাকে তাঁর ছোট্ট মেয়েটির জীবনমুখী করার প্রচেষ্টার নাটক এভরি ব্রিলিয়ান্ট থিং। ইংরেজ নাট্যকার ও নির্দেশক ডানকান ম্যাকমিলানের এভরি ব্রিলিয়ান্ট থিং–এর সেই ছোট্ট মেয়েটির মা ছিলেন আত্মহত্যাপ্রবণ। হতাশা বা বিষণ্নতা থেকে নিজের প্রাণনাশের চেষ্টা করতেন তিনি। ছোট্ট মেয়েটি মানবজীবনের বিস্ময়কর সবকিছুর নাম লিখে তালিকা করে চেষ্টা করেছিল মাকে জীবনমুখী করতে। বোঝাতে চেয়েছিল জীবনের সবকিছু আসলে বিস্ময়কর ও সুন্দর। যদি মনের বিস্ময়কে বাঁচিয়ে রাখা যায়।
এই ভাবনা থেকেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে ফেসবুক এবং অনলাইন ব্যবহারকারীদের আত্মহত্যার প্রবণতা রোধের কথা ভেবেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং (আইসিই) বিভাগের একদল গবেষক। গবেষণাটি তাত্ত্বিক পর্যায়ে রয়েছে। ফেসবুকের সঙ্গে এই পদক্ষেপ নিয়ে এখনো গবেষকদের যোগাযোগ হয়নি।
তবে যাঁরা আত্মহত্যা করতে চান, তাঁরা ভুলে যান বিস্মিত হতে। বিস্ময়কে গ্রাস করে বিতৃষ্ণা। যাঁরা আত্মহত্যাপ্রবণ, তাঁরা নানাভাবে আত্মহত্যা করেন। এর মধ্যে ফেসবুকে জানান দিয়ে আত্মহত্যা বা আত্মহত্যার চেষ্টার ঘটনাও নেহাত কম নয়।
গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ব্যবসায়ী আবু মহসিন খান (৫৮) ফেসবুক লাইভে এসে আত্মহত্যা করেন। এর এক মাস পর নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার জালকুড়ি এলাকা থেকে ফেসবুকে লাইভে এসে এক যুবক দুই সন্তানসহ আত্মহত্যা করবেন জানান। পরে তাঁর এক বন্ধুর মাধ্যমে তাঁকে বাঁচানো হয়। শুধু দেশে নয়, দেশের বাইরেও এমন আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। ২০১৭ সালের অক্টোবর মাসে তুরস্কের একটি শহরে আয়হান উজুন নামের এক ব্যক্তি ফেসবুক লাইভে এসে আত্মহত্যা করেন। এমন ঘটনার খবর বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমে আসছে।
এ ধরনের ঘটনা মানুষের মনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করেন মনোবিদ ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তানজীর আহমেদ। তিনি বলেন, ‘আত্মহত্যার ঘটনা বা এ–সংক্রান্ত খবরগুলোর উপস্থাপন যেন চটকদার না হয়ে যায়। এ ধরনের ঘটনা যাঁরা দেখবেন বা এ–সংক্রান্ত খবর পড়বেন, তাঁরা মানসিক চাপে পড়তে পারেন। বিশেষ করে শিশু, হৃদ্রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি, কিশোর-কিশোরীদের ওপর প্রভাব বেশি হতে পারে।’ এ ক্ষেত্রে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশিকা (গাইডলাইন) অনুসরণ ও সংবেদনশীলতার ওপর জোর দেন তিনি।
তবে আত্মহত্যার মতো পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার আগে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে ফেসবুকে বা অনলাইনে আত্মহত্যাপ্রবণতা প্রতিরোধের জন্য রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিই বিভাগের স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থী ইমরান হোসেন ২০১৯ সাল থেকে গবেষণা শুরু করেন।
তাঁর সঙ্গে ছিলেন ওই বিভাগের কয়েকজন শিক্ষক। ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন আয়োজিত চতুর্থ শিল্পবিপ্লবোত্তর পরিস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক এক সম্মেলনে গবেষণাপত্রটি উপস্থাপন করা হয়। এই গবেষণা জার্মান-ব্রিটিশ একাডেমিক প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান স্প্রিঙ্গার নেচারের প্রসিডিংস অব ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অন ফোর্থ ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভল্যুশন অ্যান্ড বিয়ন্ড ২০২১ গ্রন্থে প্রকাশিত হয়েছে।
আত্মহত্যার ঘটনা বা এ–সংক্রান্ত খবরগুলোর উপস্থাপন যেন চটকদার না হয়ে যায়। এ ধরনের ঘটনা যাঁরা দেখবেন বা এ–সংক্রান্ত খবর পড়বেন, তাঁরা মানসিক চাপে পড়তে পারেন। বিশেষ করে শিশু, হৃদ্রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি, কিশোর-কিশোরীদের ওপর প্রভাব বেশি হতে পারে।তানজীর আহমেদ, মনোবিদ
যেভাবে গবেষণা
গবেষণায় দেখা গেছে, আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পেছনে বড় ভূমিকা রয়েছে হতাশার। ফেসবুক ব্যবহারকারীদের আত্মহত্যার প্রবণতা বুঝতে তাঁদের দেওয়া বিভিন্ন স্ট্যাটাসের ধরন থেকে হতাশা, উদ্বেগ, মানসিক চাপের মাত্রা নির্ধারণ করেছেন গবেষকেরা। হতাশার মাত্রা বিপজ্জনক পর্যায়ে চলে গেলে ফেসবুক এবং অনলাইনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে ব্যবহারকারীকে ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত করার কথা ভাবা হয়েছে।
গবেষণার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল আত্মহত্যা করতে পারেন, এমন ব্যক্তিকে আগে থেকে শনাক্ত করা। দুই থেকে তিন বছর ধরে বাংলাদেশের ২৭১ জন ফেসবুক ব্যবহারকারীর ৬ হাজার ৪৭৮ স্ট্যাটাস নিয়ে গবেষণা করেন গবেষকেরা। একেকজনের ২৪টি করে স্ট্যাটাস বিশ্লেষণ করা হয়। ১৭ থেকে ৪২ বছর বয়সী ব্যবহারকারীদের স্ট্যাটাস সংগ্রহ করা হয়। তাঁদের মধ্যে পুরুষ ছিলেন ১৪৩ ও নারী ১২৮ জন।
ইমরান হোসেন বর্তমানে রংপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের আইসিই বিভাগের শিক্ষক। গত বছরের জুলাই মাসে তিনি এই গবেষণা প্রতিবেদন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে জমা দেন। এর আগেই ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়।
গবেষণায় ইমরান হোসেনের তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ গোলাম রাশেদ। সহ–তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজের মনোরোগবিদ্যা (সাইক্রিয়াট্রি) বিভাগের শিক্ষক ও চিকিৎসক শেখ মোহাম্মদ আবু হেনা মোস্তফা আলিম। গবেষণায় ইমরান হোসেনকে সহায়তা করেন একই বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী তোহিদুল ইসলাম।
গবেষক ইমরান হোসেন বলছেন, আত্মহত্যাপ্রবণতা শনাক্ত করার পর তাঁরা শুধু ফেসবুক নয়, অ্যাপ, ওয়েবপেজের মাধ্যমেও ব্যবহারকারীদের সতর্ক করার কথা ভাবছেন। আত্মহত্যাপ্রবণতা রোধ নিয়ে কাজ করে, এমন সংস্থার সঙ্গেও যোগাযোগের কথা ভেবেছেন গবেষকেরা।
গবেষক ইমরান প্রথম আলোকে বলেন, ফেসবুকে দেওয়া স্ট্যাটাস, মানসিক স্বাস্থ্যসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন গ্রুপে সহায়তা চাওয়ার ভিত্তিতে ২৭১ জন ব্যবহারকারীর মানসিক অবস্থার পর্যায় নির্ধারণ করা হয় এই গবেষণায়। তাঁদের মধ্যে ৮ জন হতাশামূলক বিভিন্ন স্ট্যাটাস দেওয়ার পর আত্মহত্যা করেছিলেন। পরে তাঁদের স্ট্যাটাসগুলো খতিয়ে দেখেন গবেষকেরা। এ ক্ষেত্রে ফেসবুক ব্যবহারকারীদের গোপনীয়তা রক্ষা করা হয়েছে।
ফেসবুক ব্যবহারকারীদের দেওয়া হতাশাজনক পোস্টগুলো ইমোজি ও গুগলের গো ইমোশন ডেটাসেটের (আবেগ প্রকাশের জন্য ভিন্ন ভিন্ন শব্দের ভান্ডার) অনুকরণে বিশেষ পদ্ধতির মাধ্যমে শনাক্ত করা হয়েছে বলে জানান গবেষক ইমরান হোসেন। ধরা যাক, কেউ স্ট্যাটাস দিলেন, ‘বিদায় পৃথিবী’। সে ক্ষেত্রে তাঁর আবেগকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ‘স্যাড’ বা দুঃখজনক হিসেবে শনাক্ত করেছে। আবার কেউ হয়তো স্ট্যাটাস দিলেন, ‘আজকের সকালটা সুন্দর।’ সেটি ‘লাভ’ বা ভালোবাসার ইমোশন হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে।
যেভাবে সতর্ক করা হবে
গবেষণায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের হতাশ না থাকা, মৃদু, মাঝারি ও বেশি মাত্রায় হতাশার ধরন চিহ্নিত করেন গবেষকেরা। আত্মহত্যার প্রবণতা রোধ করতে বেশি মাত্রায় হতাশাজনক স্ট্যাটাস কেউ দিলে ফেসবুক তাঁর সামনে উদ্দীপনামূলক বিভিন্ন রিসোর্স (পোস্ট, অডিও, ভিডিও) উপস্থাপন করবে। এভাবে জীবনের প্রতি ইতিবাচক করে তোলা হবে তাঁকে। যেমন কেউ যদি একের পর এক হতাশামূলক স্ট্যাটাস দিতে থাকেন, তাহলে তাঁকে উদ্দীপনামূলক, হতাশা কাটানোর উপায়–সংক্রান্ত বিভিন্ন পোস্ট ও ভিডিও দেখাবে ফেসবুক। আত্মহত্যা নিয়ে নেতিবাচক প্রচার, আত্মহত্যার কুফল–সংক্রান্ত ভিডিও ও পোস্টও তাঁর সামনে আসবে।
গবেষক ইমরান হোসেন বলছেন, আত্মহত্যাপ্রবণতা শনাক্ত করার পর তাঁরা শুধু ফেসবুক নয়, অ্যাপ, ওয়েবপেজের মাধ্যমেও ব্যবহারকারীদের সতর্ক করার কথা ভাবছেন। আত্মহত্যাপ্রবণতা রোধ নিয়ে কাজ করে, এমন সংস্থার সঙ্গেও যোগাযোগের কথা ভেবেছেন গবেষকেরা।
ফেসবুক ব্যবহারকারী যদি পরপর তিনটি বেশি মাত্রায় হতাশাজনক স্ট্যাটাস দেন, তাহলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে তাঁকে সতর্ক করা হবে। সেটি ইতিবাচক পোস্ট, ভিডিও, অডিওর মাধ্যমে হতে পারে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে টুইটারেও আত্মহত্যা রোধসহ বিভিন্ন সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ডে নিযুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর যোগাযোগের নম্বর-সংবলিত ফিচার রয়েছে। একটি ব্যানারে হ্যাশট্যাগ দিয়ে ‘দেয়ার ইজ হেলপ’ লেখা ফিচার টুইটারে আছে।
আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে
দুঃখজনক হলেও বিশ্বব্যাপী এবং বাংলাদেশেও আত্মহত্যার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। আর এমনটা ঘটছে সব বয়সী মানুষের মধ্যেই। অলাভজনক বেসরকারি সংস্থা আঁচল ফাউন্ডেশনের পরিচালিত এক গবেষণায় উঠে এসেছে, বাংলাদেশে ২০২২ সালে ৮৬ জন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। ২০২১ সালে যা ছিল ১০১ জন। ২০২০ সালে সংখ্যাটা ছিল ৭৯। জরিপে উঠে এসেছে, আত্মহত্যা করা ১০১ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৬২ জনই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
‘২০২১ সালে ১০১ জন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যা’সংক্রান্ত বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনাভাইরাসের লকডাউনের সময় ঘরে বসে থাকা, আর্থিক অসচ্ছলতা তৈরি হওয়া, পরিচিতদের সঙ্গে সম্পর্কে দূরত্ব তৈরি হওয়ার মতো নানা কারণে শিক্ষার্থীরা বিষণ্নতায় ভোগেন। এই বিষণ্নতা অনেককে আত্মহত্যায় প্ররোচিত করছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, বিশ্বে প্রতি ১০০ জনের মৃত্যুর একটি আত্মহত্যার কারণে হয়। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, দেশে করোনাকালে আত্মহত্যা বেড়েছে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় ১৭ দশমিক ৩৬ শতাংশ। বেসরকারি সংস্থা আঁচল ফাউন্ডেশনের মতে, এই সংখ্যা ৪৫ শতাংশ। মোট আত্মহত্যাকারীর ৮৩ শতাংশের বয়স ৫ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে।
ফেসবুক আমাদের ধারণার জগতে বদল আনতে পারে। ফেসবুকে সতর্কতামূলক ও উদ্দীপনামূলক ভিডিও, পোস্ট দিয়ে আত্মহত্যার প্রবণতা রোধ করা কার্যকর হতে পারেআহমেদ হেলাল, মনোরোগ চিকিৎসক
এমন অবস্থায় আত্মহত্যার প্রবণতা তৈরি হওয়ার সময়ই তা রোধ করা অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করছেন গবেষক ও শিক্ষক ইমরান হোসেন। তাই আত্মহত্যার পরিস্থিতিতে যাওয়ার আগেই ব্যবহারকারীদের এ ধরনের প্রবণতা ফেসবুকে এবং অনলাইনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে রোধ করতে চান এই গবেষক।
দরকার বিজ্ঞানসম্মত গবেষণা
ফেসবুকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে আত্মহত্যাপ্রবণতা রোধ করার কাজটিতে সতর্কতা প্রয়োজন বলছেন মনোবিদেরা। তা না হলে সুফল না–ও মিলতে পারে অথবা উল্টো ফল হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তাঁরা। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের মনোরোগ চিকিৎসক ও সহযোগী অধ্যাপক আহমেদ হেলাল মনে করেন, ‘ফেসবুক আমাদের ধারণার জগতে বদল আনতে পারে। ফেসবুকে সতর্কতামূলক ও উদ্দীপনামূলক ভিডিও, পোস্ট দিয়ে আত্মহত্যার প্রবণতা রোধ করা কার্যকর হতে পারে।’ তবে ফেসবুকের মাধ্যমে হতাশাগ্রস্ত বা আত্মহত্যাপ্রবণ ব্যক্তির মনোজগতে ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটাতে হলে আন্তর্জাতিক মানের গবেষণালব্ধ ও বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি ব্যবহারে জোর দেন তিনি।
এ ক্ষেত্রে মনোবিদের, চিকিৎসকের পরামর্শ বা সরাসরি তাঁদের সংশ্লিষ্টতাও দরকার বলে মনে করেন আহমেদ হেলাল।
ফেরা যাক ডানকান ম্যাকমিলানের নাটকে। তাঁর নাটক এভরি ব্রিলিয়ান্ট থিং অনুসরণে সৈয়দ জামিল আহমেদের নির্দেশনায় নির্মিত বিস্ময়কর সবকিছু মঞ্চনাটকটি দেখেছিলেন মানসিকভাবে হতাশাগ্রস্ত এক যুবক। এ বছরের আগস্ট মাসের শেষ দিকে ঘরোয়া এক আয়োজনে নাটকটি দেখেন তিনি। রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকার বাসিন্দা এই যুবক সে সময়ে পারিবারিক নানা জটিলতার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলেন। হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ছিলেন। বিস্ময়কর সবকিছু নাটকটি তাঁর চিন্তার জগতে গভীর ছাপ ফেলে। ওই যুবক ভাবতে থাকেন জীবনে তো জটিলতা থাকবেই। কিন্তু জীবনের ছোট ছোট যে আনন্দ, যেমন সকালবেলার ধোঁয়া ওঠা চা, বাগানের সদ্য ফোটা ফুলের সৌরভ—তাই–বা কম কী। ফেসবুকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে জীবনের ছোট ছোট আনন্দ উপভোগের গুরুত্ব তুলে ধরেন তিনি।
নাটকের নির্দেশক সৈয়দ জামিল আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘নাটক আমাদের ভেতরের বোধকে জাগিয়ে তোলে। বিস্ময়কর সবকিছু নাটকের মাধ্যমে আত্মহত্যাপ্রবণতা রোধ করার চেষ্টা করা হয়েছে।’ একজন দর্শকের মনের জগতে তা ছাপ ফেলেছে জেনেও আনন্দ প্রকাশ করেন তিনি।
তাই আত্মহত্যার প্রবণতা রোধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, বিনোদনমাধ্যম, গণমাধ্যমের ভূমিকা বাড়ানোর ক্ষেত্রে আরও বড় পরিসরে গবেষণার কথা ভাবতে পারেন গবেষকেরা।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তানজীর আহমেদ বলেন, ফেসবুকে বা অন্য মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের আত্মহত্যাপ্রবণতা ঠেকাতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার্র আধেয়গুলো তৈরিতে মনোবিজ্ঞানীদের সংশ্লিষ্টতা জরুরি। তাহলে কোন ক্ষেত্রে কোন ধরনের বার্তা মানুষের মনে কী প্রভাব ফেলবে, তা বোঝা যাবে বলে তিনি মনে করেন।