কার্ড টু বিকাশ অ্যাড মানি: ডিজিটাল লেনদেন আরও স্বাচ্ছন্দ্যময়
দিনরাত ঘরে বসে যেকোনো ধরনের ক্যাশলেস লেনদেন এখন আরও স্বাচ্ছন্দ্যময় হয়েছে কার্ড থেকে ‘বিকাশ’-এর অ্যাড মানি সেবায়। ভিসা, মাস্টারকার্ড কিংবা অ্যামেক্স—হাতে যে কার্ডই থাকুক না কেন, তা থেকে বিকাশে অ্যাড মানি করে নানা কাজ সম্পন্ন করা যাচ্ছে। অনলাইন-অফলাইন কেনাকাটা থেকে শুরু করে ইউটিলিটি সেবার বিল দেওয়া, সঞ্চয় করা, ইনস্যুরেন্স প্রিমিয়াম দেওয়া—সবই করতে পারছেন গ্রাহকেরা।
বেসরকারি চাকরিজীবী সামিহা তাহসিন জিনাত বলেন, ‘আমি আসলে সেই মানুষগুলোর মধ্যে একজন, যে ক্যাশলেস লেনদেন পছন্দ করে। ক্যাশলেসের কথা এলেই আমরা হয় কার্ড, নাহয় বিকাশের কথা ভাবি। কারণ, এই দুটিতেই আমি ক্যাশলেস লেনদেনটা করতে পারি। অনেক সময় এমন হয় যে, ব্যাংকের এটিএম থেকে অনেক দূরে আছি বা ওই মুহূর্তে যেতে পারছি না, কিন্তু আমার ট্রানজেকশন এখনই করতে হবে। অমন মুহূর্তে কার্ড টু বিকাশ অ্যাড মানি সার্ভিস অনেক বেশি কাজে লাগে। একটা ভালো জিনিস হলো, বিকাশ সবখানে অ্যাভেইলেবল, সবার থাকে। ফলে যেকোনো লেনদেনে নিমেষেই করে ফেলতে পারি।’
সামিহা তাহসিন জিনাতের মতে, ‘কার্ড টু বিকাশ’ সেবা তাঁর মতো লাখো মানুষের জীবনকে সহজ করে দিয়েছে, যা তাদের আর্থিক লেনদেনে দিয়েছে আরও স্বাধীনতা ও সক্ষমতা।
আরেক বেসরকারি চাকরিজীবী ইসমাম চৌধুরী বলেন, ‘ক্যাশ রাখতে হলে ক্যাশ ওঠাতে হবে। এটা একটা প্রসেস। অন্য ব্যাংক থেকে যদি আমি ওঠাই, সেটার জন্য ফি দিতে হবে। আমার জন্য বিকাশে যেটা সুবিধা, তা হলো যেখানে, যখন চাচ্ছি বিকাশে করতে পারছি। আমার মতে, রিকশাভাড়া দেওয়ার সুযোগ ছাড়া বাকি সব জায়গাতেই বিকাশ ছড়িয়ে গেছে।’
উদাহরণ দিয়ে ইসমাম চৌধুরী বলেন, ‘আমি আমার অফিসে বসে আছি, একজন ফোন করে বলল, ভাইয়া আমার তো এই ক্যাশটা বাকি আছে। আমি দেখলাম আমার বিকাশ অ্যাকাউন্টে আছে ৫০ টাকা। আমি তাৎক্ষণিকভাবে কার্ড টু বিকাশ করে টাকাটা এনে তাকে দিয়ে দিলাম। এই পুরো প্রসেসে আমার সময় লেগেছে সর্বোচ্চ এক মিনিট। চিন্তা করেন, আগে কত সময় লাগত এটা করতে!’
বর্তমানে বাংলাদেশে ইস্যুকৃত ভিসা, অ্যামেক্স বা মাস্টারকার্ড থেকে বিকাশের ৭ কোটি ৫০ লাখ গ্রাহক কোনো চার্জ ছাড়াই তাদের বিকাশ অ্যাকাউন্টে যেকোনো সময় দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে টাকা আনতে পারছেন অ্যাড মানি সেবার মাধ্যমে। এজেন্ট পয়েন্টে গিয়ে বিকাশ অ্যাকাউন্টে ক্যাশ ইন ও ক্যাশ আউট করার পাশাপাশি কার্ড থেকে বিকাশে তাৎক্ষণিক টাকা এনে সেন্ড মানি, মোবাইল রিচার্জ, ইউটিলিটি বিলসহ অফলাইন-অনলাইন কেনাকাটার পেমেন্ট করা সম্ভব হচ্ছে। এ ছাড়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অনুদান দেওয়া, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ফি দেওয়া, বাস-ট্রেন-বিমানের টিকিট কাটা, বিভিন্ন ধরনের সরকারি ফি পরিশোধ, সঞ্চয়, ইনস্যুরেন্সসহ অসংখ্য সেবা খুব সহজেই নিতে পারছেন বিকাশ গ্রাহকেরা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত দেশে সক্রিয় ডেবিট কার্ডের সংখ্যা ৩ কোটি ৭৪ লাখ আর ক্রেডিট কার্ড ২৫ লাখের কিছু বেশি। অনেকের কাছেই ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ড থাকলেও বিপণিবিতান, রেস্তোরাঁ, মুদিদোকানসহ বিভিন্ন স্থানে পিওএস (পয়েন্ট অব সেলস) না থাকা, শহরের ব্যস্ত এলাকার বাইরে এটিএম বুথের স্বল্পতাসহ বিভিন্ন কারণে গ্রাহকেরা কার্ড থেকে বিকাশে টাকা এনে থাকেন। এদিকে বিকাশের আছে দেশজুড়ে ৩ লাখ ৭৯ হাজার এজেন্টের বিশাল এক নেটওয়ার্ক। গ্রাহকেরা কার্ড থেকে বিকাশে টাকা এনে খুব সহজেই হাঁটা দূরত্বে অবস্থিত এজেন্ট পয়েন্ট থেকে ক্যাশ আউট করতে পারছেন। আবার দেশজুড়ে বিকাশের রয়েছে ৮ লাখ ৫০ হাজারের বেশি মার্চেন্ট পয়েন্ট। যেখানে কিউআর কোড স্ক্যান করে খুব সহজেই বিভিন্ন পণ্য ও সেবার দাম পরিশোধ করতে পারছেন গ্রাহকেরা।
এ বিষয়ে বিকাশের চিফ কমার্শিয়াল অফিসার আলী আহম্মেদ বলেন, ‘আমাদের দৈনন্দিন কাজের একটা বড় অংশ হচ্ছে গ্রাহকদের জন্য নতুন নতুন উদ্ভাবন আনা। কার্ড টু বিকাশ অ্যাড মানি সেবাও এর ব্যতিক্রম নয়। আগে কাস্টমারকে কষ্ট করে টাইপ করতে হতো ১৬ ডিজিটের নম্বর, এক্সপায়ারি ডেট। এখন কার্ড স্ক্যান করেই অটোমেটিক কাজটি করা যায়, সেই সঙ্গে সেভ করে রাখার প্রযুক্তি সহজ করা হয়েছে এবং একাধিক কার্ডও সেভ করা যায়। পাশাপাশি সম্প্রতি আমরা চালু করেছি একই কার্ড নম্বর দিয়ে যেকোনো মার্চেন্টে পেমেন্ট। বিকাশ অ্যাপ থেকে এখন পেমেন্টের একটা অপশন আছে ‘ভিসা কার্ড’। এটি সিলেক্ট করে গ্রাহক তার অ্যাকাউন্ট থেকেই সরাসরি মার্চেন্টকে পেমেন্ট করে দিতে পারছেন।’
আলী আহম্মেদ বলেন, ‘এখন দৈনিক প্রায় এক লাখ মানুষ কার্ড দিয়ে বিকাশে লেনদেন করছে। এটাকে ১০ গুণ বাড়ানো সম্ভব। কারণ, এতে কোনো টাকা খরচ হয় না। এটা খুবই সুবিধাজনক ও নিরাপদ। কারণ, এই সেবা পাওয়ার জন্য ঘরের বাইরে যেতে হচ্ছে না। এটি শুধু বিকাশের পাসওয়ার্ড দিয়েই সিকিউরড না, ব্যাংকও প্রতিটি ট্রানজেকশনকে কনফার্ম করার জন্য ওটিপি দিয়ে থাকে। তাই আমরা মনে করি, ক্যাশলেস বাংলাদেশের একটা বড় সহায়ক ভূমিকা পালন করবে এই সেবাটি।’
ভিসা, মাস্টারকার্ড বা অ্যামেক্স থেকে বিকাশে অ্যাড মানি করার পদ্ধতি
বিকাশ অ্যাপের হোম স্ক্রিন থেকে ‘অ্যাড মানি’ আইকনে ট্যাপ করে ‘কার্ড টু বিকাশ’ বাছাই করে ‘ভিসা’, ‘মাস্টারকার্ড’ বা ‘অ্যামেক্স’ সিলেক্ট করতে হবে। এরপর নিজের বিকাশ অ্যাকাউন্ট নম্বর শুরু থেকেই দেওয়া থাকবে। তবে অন্য কারও নম্বরে টাকা পাঠাতে চাইলে সেই বিকাশ অ্যাকাউন্ট নম্বরটি টাইপ করতে হবে। তারপর টাকার পরিমাণ উল্লেখ করে পরবর্তী ধাপে ভিসা, মাস্টারকার্ড, অ্যামেক্স কার্ডের নম্বর, মেয়াদ এবং সিভিএন বা সিভিভি নম্বর (কার্ডের পেছনে থাকা ৩ বা ৪ সংখ্যার ভেরিফিকেশন কোড) দিতে হবে। পরের ধাপে ফোন নম্বরে পাঠানো ওটিপি দিয়ে লেনদেন সম্পন্ন করতে হবে। অ্যাড মানি সম্পন্ন হলে নিশ্চিতকরণ বার্তা চলে আসবে। পরবর্তী লেনদেনের সুবিধার জন্য কার্ডের তথ্য সংরক্ষণ করে রাখতে পারবেন গ্রাহক। কার্ড সেভের পর টাকার পরিমাণ উল্লেখ করে পরবর্তী ধাপে ওটিপি কোড দিয়েই লেনদেন সম্পন্ন করা যাবে।
স্ক্যান করেও কার্ড সেভ করা যাচ্ছে বিকাশে
বিকাশ অ্যাপের নতুন আপডেটে কার্ড সেভ করার পদ্ধতিটিকে আরও সহজ করা হয়েছে। কার্ডের বিস্তারিত টাইপ না করে স্ক্যান করেই কার্ড সেভ করতে পারছেন গ্রাহক। বিকাশ অ্যাপের ‘অ্যাড মানি’ আইকনে প্রবেশ করে কার্ড নির্বাচন করে টাকার পরিমাণ দিয়ে পরের ধাপে গেলেই পাওয়া যাবে সরাসরি স্ক্যান করার অপশন। কার্ড স্ক্যান অপশন গ্রাহকের সময় সাশ্রয়ের পাশাপাশি আরও নির্ভুল সেবা নিশ্চিত করছে।