কোটা আন্দোলন: ‘হামলাকারীদের অধিকাংশ বহিরাগত, আহতদের ২০–৩০ জন ছাত্রী’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এভাবে আন্দোলনরত ছাত্রীদের পেটানো হয়। ১৫ জুলাইছবি: প্রথম আলো

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষের পর গতকাল সোমবার তাঁদের ওপর হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এই হামলায় অনেক নারী শিক্ষার্থীও আহত হয়েছেন। তাঁদের কারও মাথা ফেটেছে, কেউ আবার হাতে-পায়ে গুরুতর আঘাত পেয়েছেন।

অভিযোগ উঠেছে, বিশেষ করে গতকাল নারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেন মূলত বহিরাগত ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য অনুযায়ী, গতকাল বিকেলে সংঘর্ষ চলাকালে ছাত্রলীগের ধাওয়ায় ক্যাম্পাসের মল চত্বর থেকে উপাচার্যের বাসভবনের (ভিসি চত্বর) দিকে দৌড় দেন ছাত্রীরা।

তাঁদের ধাওয়া করছিলেন ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখা ছাত্রলীগের কিছু নেতা-কর্মী। তাঁদের অনেকের মাথায় হেলমেট ছিল। হাতে ছিল লাঠিসোঁটা, হকিস্টিক, স্টিলের পাইপ ইত্যাদি।

একাধিক ছাত্রী প্রথম আলোর কাছে অভিযোগ করে বলেন, পেছন থেকে ছাত্রলীগের মহানগরের নেতা-কর্মীদের ধাওয়া খেয়ে তাঁরা যখন ভিসি চত্বরের দিকে যাচ্ছিলেন, তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ডাবল ডেকার বাস চত্বরে দাঁড়ানো ছিল। অর্ধশতাধিক ছাত্রী ওই বাসে উঠে পড়েন। তাতেও বহিরাগত ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের হাত থেকে তাঁরা রেহাই পাননি। বহিরাগত ছাত্রলীগ নেতা–কর্মীরা তাঁদের বাস থেকে নামিয়ে পেটাতে শুরু করেন। আতঙ্কিত ছাত্রীরা জুতা, ব্যাগ ও ছাতা ফেলেই কেউ ফুলার রোড হয়ে শহীদ মিনারের দিকে, কেউ পলাশীর দিকে, আবার কেউ নীলক্ষেতের দিকে চলে যান। এ ঘটনায় কয়েকজন ছাত্রীর মাথাও ফেটেছে।

ভিসি চত্বরে ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীদের হামলার শিকার হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ছাত্রী তানজিলা তাসনীম। তিনি অভিযোগ করেন, ‘ভিসি চত্বরে হাতে ইটপাটকেল লেগে বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হলের এক ছাত্রী আহত হন। আমি তাঁকে ছেড়ে যেতে পারিনি। এ সময় হেলমেট পরা কয়েকজন এসে আমাদের সরে যেতে বলেন। আমি বুঝতে পারছিলাম না, কী করব। আমি বলি, আমরা যৌক্তিক আন্দোলনে আছি। এরপর হেলমেট পরা ব্যক্তি আমার ডান হাত মুচড়ে দিয়েছেন।’

তানজিলা বলেন, ‘আমার খারাপ লাগছে, নিজ ক্যাম্পাসে এভাবে হামলার শিকার হলাম।’

শান্তি ও সংঘর্ষ বিভাগের ছাত্রী সুলতানা আক্তার বলেন, ছাত্রলীগের ধাওয়া খেয়ে ছাত্রীদের অনেকেই দৌড়ে পালাতে পারেননি। হেলমেট পরা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা এভাবে আটকে পড়া ছাত্রীদের লাঠিপেটা ও বেধড়ক মারধর করেছেন।

চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম আজ মঙ্গলবার দুপুরে প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, ছাত্রলীগের হামলায় আহত আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা দুই শতাধিক। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে ২০-৩০ জন ছাত্রীও রয়েছেন। আহত ছাত্রীদের অধিকাংশই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।

ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের প্রবেশ এবং ছাত্রীদের মারধরের বিষয়ে বক্তব্য জানতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মাকসুদুর রহমানের মুঠোফোনে আজ দুপুরে কল করা হলে তিনি বলেন, তিনি উপাচার্যের সঙ্গে একটি বৈঠকে আছেন। এই মুহূর্তে তিনি কথা বলতে পারবেন না।