রাজধানীর মিরপুরের জাতীয় চিড়িয়াখানায় গাধা আছে ১৩টি। তবে গাধার জন্য নির্ধারিত জায়গার ধারণক্ষমতা ছয়টি।
গাধার মতো চিড়িয়াখানায় জায়গার তুলনায় ঘোড়া, সাপ, জলহস্তী, পাখিসহ বিভিন্ন প্রাণীর সংখ্যা বেশি। তাই চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ বাড়তি প্রাণীগুলোকে বিক্রি অথবা অবমুক্ত করে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে।
এ জন্য প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মাধ্যমে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন চেয়ে চিঠি দিয়েছে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি রেখে চিড়িয়াখানার প্রাণীদের সঙ্গে অন্যায় করা হচ্ছে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সাবেক অধ্যাপক বিধান চন্দ্র দাস প্রথম আলোকে বলেন, প্রাণী ও পাখির কল্যাণের পাঁচটি স্তম্ভ রয়েছে। প্রাণীকে তৃষ্ণা, ক্ষুধা ও পুষ্টির অভাব, অস্বস্তিকর অবস্থা এবং ব্যথা, আঘাত ও রোগ থেকে মুক্তি দিতে হবে। স্বাভাবিক আচরণ প্রদর্শনের স্বাধীনতা এবং ভয় ও মর্মপীড়া থেকে মুক্তি দিতে হবে।
বিধান চন্দ্র দাস বলেন, বাংলাদেশের কোনো চিড়িয়াখানা এই নিয়মগুলো পরিপূর্ণভাবে পূরণ করে না, যার কারণে ওয়ার্ল্ড অ্যাসোসিয়েশন অব জু’স অ্যান্ড অ্যাকুয়ারিয়ামের (ডব্লিউএজেডএ) সদস্য হতে পারেনি বাংলাদেশের কোনো চিড়িয়াখানা।
কোন প্রাণী কত বেশি
রাজধানীর মিরপুরে প্রায় ১৮৭ একর জমিতে জাতীয় চিড়িয়াখানা প্রতিষ্ঠিত। প্রতিষ্ঠার পর ১৯৭৪ সালে এটি সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়।
জাতীয় চিড়িয়াখানার ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য বলছে, বর্তমানে চিড়িয়াখানায় ১৩৭টি খাঁচায় ২৩৭ প্রকোষ্ঠের মধ্যে ১৩৫ প্রজাতির ৩ হাজার ৩৪২টি প্রাণী এবং অ্যাকুয়ারিয়ামে মাছ প্রদর্শন করা হচ্ছে।
চিড়িয়াখানায় ২০ ফেব্রুয়ারি গিয়ে দেখা যায়, একটি খাঁচায় তিনটি গাধা ও একটি ওয়াটার বাক রাখা। গাধা তিনটি একসঙ্গে থাকতে পারলেও ওয়াটার বাকটি একা। আরেকটি খাঁচায় তিনটি ঘোড়ার সঙ্গে রাখা হয়েছে একটি গাধা।
চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ বলছে, ধারণক্ষমতার চেয়ে গাধার সংখ্যা বেশি হয়ে যাওয়ায় কয়েকটিকে অন্য প্রাণীর সঙ্গে বিচ্ছিন্নভাবে রাখা হয়েছে।
জাতীয় চিড়িয়াখানায় গাধাসহ ১০ প্রজাতির পশুপাখি ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি। মোট সংখ্যা ৫০৫টি।
২০টির জায়গায় অজগর সাপ রয়েছে ৩১টি। একইভাবে ধারণক্ষমতার চেয়ে আরবিয় ঘোড়া ৪টি, দেশি ঘোড়া ২টি, জলহস্তী ৬টি, ইমু পাখি ১৫টি, দেশি কবুতর ৪৫টি, জালালী কবুতর ৪৫টি, কানিবক ১৭০টি ও ওয়াক পাখি ২০০টি বেশি রয়েছে।
জাতীয় চিড়িয়াখানার পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম তালুকদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘চিড়িয়াখানার মান আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি আমরা। চিড়িয়াখানার সংস্কার, প্রাণী ধারণক্ষমতার মধ্যে রাখাসহ নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মান সন্তোষজনক পর্যায়ে গেলে আমরা ডব্লিউএজেডএর সদস্যপদের জন্য আবেদন করব।’
বিক্রির উদ্যোগ
জাতীয় চিড়িয়াখানায় থাকা প্রাণী ও পাখির মধ্যে ময়ূর ও হরিণ বিক্রির অনুমোদন রয়েছে। ধারণক্ষমতার বেশি হয়ে গেলে প্রতিটি হরিণ ৫০ হাজার টাকা এবং ময়ূর ২৫ হাজার টাকায় বিক্রি করা যায়।
অবশ্য অন্য প্রাণী ও পাখি বিক্রির অনুমোদন নেই।
চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ ধারণক্ষমতার বেশি থাকা ১০ প্রজাতির মধ্যে ৬ প্রজাতির প্রাণী বিক্রির জন্য অনুমোদন চেয়েছে। সেগুলো হলো গাধা, আরবিয় ঘোড়া, দেশি ঘোড়া, ইমু পাখি, দেশি কবুতর ও জালালী কবুতর। তবে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ এখনো এর অনুমোদন পায়নি।
বিক্রি করতে হলে মূল্য নির্ধারণ করতে হবে। চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ বলছে, মূল্য নির্ধারণ করে অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিলে সেই দামে বিক্রি করা যাবে।
বিক্রি ছাড়াও ১১টি অজগর সাপ বনে অবমুক্ত করার জন্য বন বিভাগের কাছে হস্তান্তর করা, ৬টি জলহস্তি প্রাণী বিনিময়ের মাধ্যমে দেশি–বিদেশি চিড়িয়াখানা কিংবা সাফারি পার্কে হস্তান্তর করা এবং ১৭০টি কানি বক ও ২০০টি ওয়াক পাখি প্রকৃতিতে অবমুক্ত করার জন্যও অনুমতি চেয়েছে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। তারা বলছে, পরবর্তীতে আরও এসব প্রজাতির পশুপাখি বিনিময় ও অবমুক্ত করতে চাইলে আবার মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হবে।
চিড়িয়াখানায় প্রাণী যেমন কেনা হয়, তেমনি প্রজননের মাধ্যমে সংখ্যা বাড়ে। রাজশাহীর শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ সংখ্যা বেশি হওয়ায় বিভিন্ন সময় কানিবক ও ওয়াক পাখির মতো প্রাণী প্রকৃতিতে উন্মুক্ত করেছে।
প্রকৃতিতে পশুপাখি ফিরিয়ে আনতে চিড়িয়াখানা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে বলে উল্লেখ করে রাজশাহীর এই চিড়িয়াখানার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. ফরহাদ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশের অধিকাংশ পশুপাখি বিলুপ্তির পথে। চিড়িয়াখানায় পশুপাখির প্রজনন ঘটিয়ে প্রকৃতিতে অবমুক্ত করা যায়। এতে কিছুটা হলেও প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় কাজে আসবে।