মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর লেখা
আম্মা কি আমাদের খুঁজে পাবেন
চলচ্চিত্র নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী যত দূর আসতে পেরেছেন, তার পেছনে তাঁর মা–বাবার অবদানের কথা তিনি কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসার সঙ্গে স্মরণ করেন। মা–বাবার কিছু কিছু বিষয় স্থান পেয়েছে তাঁর টেলিভিশন ও ডুব ছবিতে। এবার তিনি লিখেছেন নিজের মা–বাবাকে নিয়ে, লেখার গুণে আর বিষয়ের অভিনবত্বে যা পাঠককে নিয়ে যাবে এক অনির্বচনীয় জগতে।
ডুব ছবিতে এক জায়গায় ইরফান খান ফেরিতে বসে তিশার সঙ্গে মৃত্যু নিয়ে আলোচনা করেন। বলেন, ‘মানুষ মারা যায় তখনই, যখন পৃথিবীর কাছে তার প্রয়োজন ফুরিয়ে যায়, অথবা তার কাছে পৃথিবীর।’ এই সংলাপটা আমি প্রথম শুনি আমার আম্মার কাছে। ঠিক এই রকম বাক্যে না, তাঁর নিজস্ব ভঙ্গিতে। উনি বলতেন, ‘আল্লাহ মানুষরে নিয়া যায় তখনই, যখন দুনিয়ার সঙ্গে তার লেনাদেনা শেষ হয়ে যায়।’
আমার আম্মা স্কুল–অশিক্ষিত মানুষ। ছোটবেলায় মামাদের বই পড়ে পড়ে লিখতে–পড়তে শেখেন। নানা গ্রামের নেতৃস্থানীয় মানুষ। তাই মেয়েকে স্কুলে পাঠাননি পড়তে। কারণ, সেকালে মনে করা হতো, মেয়েদের পড়াশোনার আবার কী দরকার? আম্মা পরিস্থিতি মেনে নিলেও পরাজয় মেনে নেননি। গোপনে বই পড়া চালিয়ে গেছেন। আম্মার এই লড়াকু শক্তি টের পাওয়া যায় জীবনভর। যখন মেয়েদের মসজিদে যাওয়ার কোনো চল ছিল না বা একরকম নিরুৎসাহিত করা হতো, সেই সময় আম্মা ‘পুরুষ পারলে মহিলারা কেন পারবে না’ বলে হুংকার দিয়ে ঢুকে পড়েন মসজিদে। মহাখালী–গুলশান এলাকার অনেক মসজিদের একদম শুরুর দিকের মুসল্লি বলা যায় আম্মাকে।
প্রথম আলো থেকে যখন বলা হলো, ঈদ আনন্দর জন্য একটা লেখা দিতেই হবে, তখন আমি বিষয় খুঁজে পাচ্ছিলাম না। তখনই নয়ন—আলতাফ শাহনেওয়াজ বললেন, ‘আপনার আম্মা–আব্বাকে নিয়ে লেখেন।’ আমার আব্বা–আম্মা দুজনই এখন প্রয়াত। তাই সঙ্গে সঙ্গেই রাজি হয়ে গেলাম। কারণ আম্মা–আব্বা হচ্ছেন আমার সবচেয়ে বড় জাদুর বাক্স। আমি মনে করি, আমার জিনে সৃজনশীল কিছু যদি থেকে থাকে, সেটা এসেছে আমার মায়ের কাছ থেকে, আর আমার সামনে এগোনোর তাড়না বা উদ্যোক্তার স্পিরিট এসেছে আমার আব্বার কাছ থেকে। ওহ, আরেকটা জিনিস এসেছে আব্বার কাছ থেকে—হিউমার।
আম্মাকে নিয়ে এই লেখার শুরুটা করেছি, শেষটাও তাঁকে দিয়েই করব। বলব, আম্মা কীভাবে তাঁর মৃত্যুটা আগে থেকেই দেখতে পেয়েছিলেন। তার আগে আব্বাকে নিয়ে কয়টা কথা বলি।
আমার আব্বা কৃষক পরিবারের সন্তান। বাড়ির বড় ছেলে। দাদা কৃষিকাজ করতেন। পাশাপাশি নিজের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য অন্য কিছুও খুঁজতে থাকেন। এবং একসময় পেয়েও যান। সেটা হলো, বাংলাদেশ (তখনকার পূর্ব বাংলা) থেকে শ্রমিক রিক্রুট করে আসাম, কলকাতা ও করাচি বন্দরে সরবরাহ করা। এই যে নিজের অবস্থানকে মেনে নিয়েও একই রকমভাবে জীবন চালিয়ে যেতে অস্বীকৃতি জানিয়ে নতুন কিছু একটা চেষ্টা করে দেখার তাড়না, এটা আমার দাদার কাছ থেকে পুরোপুরি পেয়েছেন আব্বা, আর আব্বার কাছ থেকে আমি।
আব্বার সঙ্গে আমার প্রেম–ভক্তির মধ্যেও ছোটবেলায় খটমট লেগেছিল টেলিভিশন নিয়ে। যার আদলের ওপরই বানানো হয়েছিল টেলিভিশন ছবিটা।
নাখালপাড়ার অল্প যে কয়টা বাসায় টেলিভিশন ছিল, তার মধ্যে আমাদের বাসাও একটা। কিন্তু একদিন হঠাৎ টেলিভিশনটা বিক্রি করে দেওয়া হলো। কারণটা স্পষ্টতই একধরনের বিশ্বাস থেকে আসা যে টিভি দেখা হারাম। এ ঘটনাটা সেই সময়ে মনের মধ্যে ভীষণ দাগ কাটলেও এ নিয়ে কথা বলার কোনো সুযোগ ছিল না। তবে ক্লাস টেনে ওঠার পর শুধু এই বিষয় নায়, জগতের সব বিষয়েই কথা বলার সুযোগ পাই আমরা। একধরনের গণতান্ত্রিক আবহ চলে আসে বাসায়। ছোটদের কথা শোনার যে অভ্যাসটা বাসায় চালু করেন আম্মা–আব্বা, তাতে আমাদের যুক্তিবাদী হয়ে ওঠার সুযোগ তৈরি হয়।
তো ছোটবেলায় আব্বার সঙ্গে বেয়াদবির একটা ঘটনা বলতে চাই, যেটা টেলিভিশন ছবির ইমোশনাল স্পিরিটটা তৈরি করেছে। টেলিভিশন ছবিতে চঞ্চল চৌধুরী বাবার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে, বাবার প্রধান সিপাহসালার জব্বারকে মারধর করে। এই অপমানে চেয়ারম্যান সাহেব কান্নায় ভেঙে পড়েন। কিন্তু তবু আল্লাহর কাছে বলেন, আল্লাহ যেন তার ছেলের ওপর নারাজ না হন, ছেলের যেন কোনো ক্ষতি না হয়।
ওদিকে ছেলেও যন্ত্রণায় পুড়তে থাকে জনসমক্ষে বাবার অপমানের কারণে। এবং দুই দিন পর বাবা হজে যাওয়ার আগে ছেলে তার কাছে গিয়ে ক্ষমা চায় এবং কান্নায় ভেঙে পড়ে।
ছবিটা যখন আমি প্রথমবারের মতো শেয়ার করি ইউরোপের একজন বিখ্যাত এজেন্টের সঙ্গে, তিনি ছবিটা দেখে তাঁর ভালো লাগার কথা জানান। তবে সঙ্গে সঙ্গে ছবির তিনটি দিক নিয়ে তাঁর আপত্তির কথা জানিয়ে সেগুলো কীভাবে মেরামত করা যায়, সেটা দেখতে বলেন। এই তিনটির মধ্যে প্রধানটা হলো, ছেলে বাবার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছে। সে আমাদের হিরো, সে কেন আবার দুই দিন পর ক্ষমা চাইবে? এই এজেন্ট খুবই বিখ্যাত। আমার সামনে দুটি অপশন—তাঁকে হারানো বা ছবির এই অংশ সম্পাদনা করে বাদ দেওয়া। আমি তখন বুসানের কিম জি সুক এবং ভেনিসের পাওলো বার্ত্যোলিনের সঙ্গে পরামর্শ করি এবং সিদ্ধান্ত নিই সেটা বাদ না দেওয়ার। কারণ, এটাই বাংলাদেশ। আমরা বাবার সঙ্গে দ্বিমত করতে পারি, খেপে গিয়ে হয়তো বেয়াদবিও করে ফেলতে পারি, কিন্তু হুঁশ ফিরে এলেই আমরা অন্তর্দহনে পুড়ে যাব। এটাই আমাদের বৈশিষ্ট্য। এটাই আমরা।
এই ঘটনাটা সরাসরি আমার জীবন থেকে অনুপ্রাণিত। ছোটবেলায় কী একটা কারণে যেন আব্বা আমাকে খুব মাইর দেন। এতে এত রাগ হয় যে বাথরুমে পেনসিল দিয়ে গোটা গোটা হরফে আব্বার অমঙ্গল কামনা করে কিছু একটা লিখি। অনেকটা দেয়ালে চিকা যে রকম মারে, সে রকম বাণী। লাইনটা এতই হৃদয়বিদারক যে আজকে এত বছর পরেও আমার লিখতে কষ্ট হচ্ছে। যাহোক, সেটা লিখে ঘর থেকে পালিয়ে যাই। তারপর রাতের বেলা জানালার বাইরে থেকে উঁকি মেরে দেখি, আব্বার ঘরে আব্বা শিশুর মতো কাঁদছেন আর বলছেন, আমার ছেলে আমার এ রকম অমঙ্গল চাইতে পারল? আম্মার চোখ দিয়ে ঝরঝর করে পানি পড়ছে। এর মাঝে আব্বা আবার একটু পরপর আকাশের দিকে তাকিয়ে আল্লাহকে বলছে, আল্লাহ, আমার কান্নার জন্য আবার তুমি ছেলেটার ওপর নারাজ হইয়ো না, তার ক্ষতি কোরো না। জানালার ওই পাশে বসে আমি এই দৃশ্য দেখছি আর কান্নায় আমার বুক ভেঙে যাচ্ছে। আজকে লিখতে গিয়েও বুকটা ভারী হয়ে গেল। টেলিভিশন ছবিতে পিতা–পুত্রের সম্পর্কের আদলটা দাঁড়িয়েছে আমাদের সম্পর্কের আদলের ওপর। এতে একটা ভীষণ শৈল্পিক উপকার হয়েছে বলে আমি মনে করি।
আমাদের অনেকেই বিরোধী মত কিংবা বিশ্বাসের সমালোচনা করার সময় অসহিষ্ণুতা দেখিয়ে ফেলেন, গালিগালাজ করেন। যেটা শিল্পের উপকার তো করেই না, সমাজেরও উপকার বিশেষ করে না। আমার আম্মা বলতেন, কারও সমালোচনা করতে চাইলে তাকে সালাম দিয়ে আদবের সঙ্গে তার ভুল দেখিয়ে দাও। তাহলে সে শুনলেও শুনতে পারে। কিন্তু যদি তাকে গালি গিয়ে তার দোষ বলতে থাকো, সে তোমার কোনো কথাই শুনবে না।
টেলিভিশন ছবিতে চেয়ারম্যান সাহেবকে আমার বাবার আদলে ধরতে আমার এই সুবিধাটা হয়েছে—সেটা হলো, চরিত্রটার প্রতি আমার কমপ্যাশনটা নষ্ট হয়নি। ফলে নিছক গালিগালাজের দিকে যাওয়ার সুযোগও হয়নি। অবশ্য শিল্পবিশ্বাসের দিক থেকে আমি সাদা–কালোর বাইনারিতে ফেলে চরিত্রকে দেখার ঘোর বিরোধী। এটা আমার ছবিগুলো দেখলেই হয়তো টের পাওয়া যায়।
লিখতে খুব আরাম পাচ্ছি। সেই স্মৃতিস্নিগ্ধ সময়ে চলে যাচ্ছি। কিন্তু শারীরিক দুর্বলতাকেও উপেক্ষা করতে পারছি না। তাই এবার নাটাই গুটিয়ে আনা যাক।
ভেবেছিলাম আম্মার মৃত্যুদৃশ্য রচনা নিয়ে লিখে লেখাটা শেষ করব। তার আগে আম্মার কাব্যপ্রতিভা নিয়ে একটা ঘটনা বলতেই চাই। ছোটবেলা থেকেই দেখেছি আম্মা প্রচুর ইসলামি কবিতা ও ছড়া লিখতেন। যেগুলোকে উনি গজল নামে ডাকতেন। সেগুলো বেশির ভাগই ছিল তাৎক্ষণিকভাবে মুখে মুখে রচিত। রাতে তাহাজ্জুদ নামাজের পর আম্মা সেসব গজল সুর করে গাইতেন আর কাঁদতে কাঁদতে ফানাফিল্লাহ হয়ে যেতেন।
একদিন আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শুটিং করছি একুশে টেলিভিশনের জন্য, আয়নামহল নামে একটা প্রোডাকশন। সন্ধ্যা হয় হয় মুহূর্তে ফোন এল। আম্মা ফার্মগেট ওভারব্রিজের সিঁড়িতে পড়ে গিয়ে পা ভেঙে ফেলেছেন। পঙ্গু হাসপাতালে আছেন। আমি শুটিং বন্ধ করে ছুটলাম পঙ্গু হাসপাতালে। গিয়ে দেখি, আম্মা ব্যথায় কঁকাচ্ছেন। আমাকে ইশারায় কাছে ডাকলেন। কাছে যেতেই আমাকে মৃদু স্বরে একটা গান বা কবিতা শোনাতে শুরু করলেন।
‘যাইতেছিলাম হাওড়ার পুল
পথে লাগল গন্ডগোল...।’
আমি হেসে দিয়ে বললাম, ‘আম্মা, আপনি তো ফার্মগেট ব্রিজ দিয়ে যাইতেছিলেন, হাওড়ার পুল আসল কোত্থেকে?’
আম্মা মুখে একটু হাসির রেখা ফুটিয়ে বললেন, ‘বাবা রে ফার্মগেট ব্রিজ দিছিলাম। ছন্দে মিলে না। এই জন্য “গন্ডগোলে”র সাথে মিলাইয়া “হাওড়ার পুল” আনছি।’
শেষ করব, আম্মা কেমন করে তাঁর মৃত্যুদৃশ্য অনুমান করে সবকিছু সাজাতে চেয়েছিলেন, সেটার মধ্য দিয়ে। হঠাৎ করেই একসময় আম্মা নানা রকম পরিকল্পনা এবং আয়োজন করতে শুরু করলেন, যে রকমভাবে মানুষ জন্মদিন বা বিয়ের এন্তেজাম করে। আম্মা তাঁর কাফনের কাপড় আলমারির একটা নির্দিষ্ট জায়গায় রেখে আমার বোনদের বলে দিলেন কে তাঁকে গোসল করাবে, কে তাঁর লাশ স্পর্শ করতে পারবে, কে তাঁকে কাঁধে নেবে—সব। যখন উনি এসব করছেন, আব্বা খুব বিরক্ত হলেন। কিন্তু আম্মা কোনো কথায় পাত্তা দিলেন না। ওনার যেন ভীষণ তাড়া ছিল। যেন কারও সঙ্গে দেখা করতে যাবেন। এই পুরো প্রস্তুতিতে ওনার মধ্যে কোনো দুঃখবোধ, ছেড়ে যাওয়ার কষ্ট, কিছু দেখা যায়নি। তারপর একদিন রাত একটার দিকে যেন ওনার মৃত্যুর ড্রেস রিহার্সাল দিলেন। ১২টার দিকে উনি ঘুমাতে যান। হঠাৎ একটার দিকে উনি গোঙানোর মতো করে কালেমা পড়লেন কয়েকবার। তারপর নিশ্চুপ। কোনো নড়াচড়া নেই। আব্বা, আমার ছোট বোন অনেকক্ষণ ডাকাডাকি করলেন, কোনো সাড়া নেই। একবার মনে হচ্ছে নিশ্বাস আছে, আবার মনে হচ্ছে নেই। খবর পেয়ে তিশা ও আমার বড় বোন ছুটে গেল। এর মধ্যে আম্মা জ্ঞান ফিরে পেয়েছেন। উঠে বসেছেন। মুখে তাঁর সেই চিরচেনা হাসি। তিশাদের দেখে বললেন, এত রাতে ওদের কে আনল। তারপর উনি বললেন ওনার কী হয়েছিল। উনি নাকি স্বপ্নে কোনো এক বাগানে চলে গিয়েছিলেন। সেখানে এক অচেনা গাছ দেখে কৌতূহলী হয়ে সেটির কাছে যান। এবং কোন খেয়ালে যেন একটা পাতা ছিঁড়ে নেন। তখন অদ্ভুত দেখতে এক লোক এসে বলেন, ‘এই তুমি এই গাছের পাতা ছিঁড়লে কেন? এখন তোমাকে আমার নিয়ে যেতে হবে।’ আম্মা ভয় পেয়ে জিজ্ঞেস করেন, ‘আপনি কে?’
লোকটা উত্তর দেন, ‘আজরাইল।’
তিশা হেসে উড়িয়ে দিয়ে আম্মাকে মনোবল জোগানোর চেষ্টা করে। আম্মা ওসবে কান না দিয়ে তিশাকে একটা দায়িত্ব দেন। সেটা হলো, ওনার কিছু হলে কোনোভাবেই যেন ও তাঁকে লাইফ সাপোর্টে না দেওয়া হয়।
এর সাত দিন পর আম্মার স্ট্রোক হয় এবং আম্মার কথার অমান্য করে আমরা তাঁকে লাইফ সাপোর্টে দিই এই আশায়—যদি আরও কয়টা দিন আম্মাকে আমাদের সঙ্গে রাখা যায়।
আম্মা ২৬ দিন লাইফ সাপোর্টে ছিলেন। এক দিনও তাঁকে দেখতে যাইনি। প্রতিদিন হাসপাতালের নিচে দাঁড়িয়ে থাকতাম; কিন্তু দেখতে যেতাম না। আম্মা জানতেন আমার পক্ষে তাঁকে এভাবে দেখা সম্ভব না। ২৬ দিন পরে আম্মাকে একঝলকের জন্য দেখা হয়ে যায়, হাসপাতাল বদলানোর সময়, মুখটাকে ভীষণ ভার লাগছিল। হয়তো তিনি যেতে চাইছেন, আমরা টেনে ধরছি বলেই। ওই দিন রাতেই আম্মা চলে যান।
এরপর থেকে আম্মার কবর জিয়ারত করতে করতে বহুবার ভেবেছি ‘আম্মা কোথায় গেলেন আসলে।’ মাঝেমধ্যে মনে করার চেষ্টা করি, আম্মার সঙ্গে আমার শেষ কী নিয়ে কথা হয়েছিল। মনে করতে পারি না। এই কষ্ট আমাকে কুরে কুরে খায়। আবার ভাবি, আম্মার সঙ্গে কি আবার দেখা হবে এই একই রূপে? আম্মা বলতেন, হাশরের ময়দানে আবার দেখা হবে। হাশরের ময়দানে কোটি মানুষের ভিড়ে আম্মা কি আমাকে খুঁজে পাবেন? আম্মা তো নাখালপাড়ার রাস্তাই ঠিকমতো চিনতেন না। হাশরের ওই অচেনা ময়দানে আমাদের কীভাবে খুঁজে পাবেন আম্মা?