ভবন কে বানাবে, সেই দ্বন্দ্বে ভেস্তে গেল নার্সিং কলেজ তৈরির প্রকল্প
অভিজ্ঞ শিক্ষকের মাধ্যমে যোগ্যতাসম্পন্ন নার্স তৈরি করতে একটি নার্সিং ডিগ্রি কলেজ তৈরির প্রস্তাব দিয়েছিল রাজধানীর মগবাজারের কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতাল। তাতে সাড়া দিয়েছিল সরকার। বেসরকারি এই হাসপাতালের জমিতে ২২ কোটি টাকা ব্যয়ে কলেজটি তৈরিতে প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল। ২০১৭ সালে শুরু করে গত বছরের ৩০ জুনের মধ্যে সেটি শেষ হওয়ার কথা ছিল।
কিন্তু নানা বিষয়ে দুই পক্ষের মতবিরোধে নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও ওই কলেজ তৈরির কাজ শুরু হয়নি। শেষ পর্যন্ত কলেজ ভবন কে তৈরি করবে, তা নিয়ে কমিউনিটি মেডিকেলের সঙ্গে সরকারি কর্তৃপক্ষের দ্বন্দ্বে ‘নার্সিং বিষয়ে মহিলাদের জন্য ঢাকায় কমিউনিটি নার্সিং ডিগ্রি কলেজ স্থাপন’ প্রকল্পটিই বাতিল হয়ে গেছে। তবে এ বিষয় বিভিন্ন বৈঠক বাবদ খরচ হয়ে গেছে প্রায় ২৬ লাখ টাকা।
প্রকল্প বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান ছিল মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর। মন্ত্রণালয়ের নতুন অর্থবছরে এ প্রকল্প বাদ দিয়ে নতুন প্রকল্পের তালিকা তৈরি করা হয়েছে।
নার্সিং ডিগ্রি কলেজ নির্মাণের সর্বশেষ প্রকল্প পরিচালক (উপসচিব) শেখ মুসলিমা মুন প্রকল্প বাতিলের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরে অতিরিক্ত পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করা এই কর্মকর্তা গত মাসে তথ্য মন্ত্রণালয়ে যুক্ত হয়েছেন। প্রকল্প বাতিলের কারণ জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরকার গণপূর্ত অধিদপ্তর দিয়ে ভবন নির্মাণের কাজ করাতে চেয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তাতে আপত্তি রয়েছে। তারা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান দিয়ে নির্মাণের কাজ করাতে চান। এতে আমাদের একমত হওয়া সম্ভব নয়। সরকারি সংস্থা হিসেবে আমাদের অনেক নিয়মকানুন মেনে চলতে হয়।’
অপর দিকে ঢাকা কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের পরিচালক (প্রশাসন) জাবেদ ইউসুফ প্রথম আলোকে বলেন, প্রকল্প বাতিলসংক্রান্ত কোনো চিঠি তাঁরা পাননি। মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর তাঁদের সঙ্গে কোনো আলোচনা ছাড়াই এটি বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তিনি বলেন, ভবন নির্মাণে উন্মুক্ত দরপত্র হওয়ার কথা ছিল। গণপূর্ত অধিদপ্তর দিয়ে নির্মাণ করার কথা ছিল না। একাধিক বৈঠকে সেটা নিয়ে কথাও হয়েছে।
প্রকল্পসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শুরুতে কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের ১২ কাঠা জমিতে ছয়তলা ভবন করার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু একাধিকবার প্রকল্প পরিচালক পাল্টায়। মাঝখানে অনেক দিন কোনো প্রকল্প পরিচালক ছিলেন না।
কয়েক দফা বৈঠকের পর মূল্যবান জমি বিবেচনায় ভবনের উচ্চতা বাড়িয়ে ৯তলা করার সিদ্ধান্ত হয়। এর ফলে নকশা প্রণয়ন ও খরচ পুনর্নির্ধারণসহ নানা পরিবর্তন আনা হয়। খরচ আগের চেয়ে বেড়ে ২২ কোটি ১২ লাখ ২৬ হাজার টাকায় দাঁড়ায়। একাধিকবার প্রকল্পটি নিয়ে দুই পক্ষের মতের অমিল হয়। শেষ পর্যন্ত নির্মাণকাজ নিয়ে দ্বন্দ্ব হলে মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর প্রকল্পটি বন্ধ করে দেওয়ার পক্ষে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে মতামত পাঠায়।
প্রকল্পটির উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা আছে, অভিজ্ঞ শিক্ষকের মাধ্যমে যোগ্যতাসম্পন্ন নার্স গড়ে তোলা। রোগীর সঙ্গে চিকিৎসা ও সেবাসংক্রান্ত বিষয়ে তথ্যের আদান–প্রদানের দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়ন ও রোগীদের মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা প্রদান। এ ছাড়া রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করা, রোগীর চাহিদা অনুসারে সহযোগী হিসেবে দক্ষতার সঙ্গে সেবা করা এবং বেকার ও অর্ধবেকার যুব নারীদের দেশে ও বিদেশে চাকরির সুযোগ সৃষ্টি করা।
২০২১–২২ অর্থবছরের সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির প্রতিবেদন অনুসারে, প্রকল্পটির জন্য ওই অর্থবছরে এডিপি বরাদ্দ ছিল এক কোটি টাকা। গত বছরের জুন মাস পর্যন্ত ২৬ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে।
তবে উপসচিব শেখ মুসলিমা মুন বলেছেন, এই প্রকল্পের কোনো কাজ না এগোনোয় সরকারের কোনো ব্যয় হয়নি। সভাগুলো হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ডাকত। সে ক্ষেত্রে তাদের খরচ হতে পারে।
এ বিষয়ে হাসপাতালের পরিচালক জাবেদ ইউসুফ বলেন, বারবার বৈঠক করা হয়েছে। খরচ তো কিছু হয়েছেই। তিনি বলেন, হাসপাতালের পক্ষ থেকে আবদুর রহমান নামে একজন প্রকল্পটির দায়িত্ব পালন করতেন। তিনি গত বছর মারা গেছেন। প্রকল্পের খুঁটিনাটি অনেক কাগজপত্র এখনো দেখা বাকি।
গত ২০২১–২২ অর্থবছরে ওই প্রকল্পসহ মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ২২টি প্রকল্প ছিল। নতুন অর্থবছরে প্রকল্পটি বাদ দিয়ে ১৭টি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (মহিলা অধিদপ্তরে একটি প্রকল্পে যুক্ত) ইকবাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, এ অর্থবছরে নার্সিং ডিগ্রি কলেজ প্রকল্পটিকে ১৭টি প্রকল্পের মধ্যে রাখা হয়নি।