শিক্ষার্থীদের শুধু উচ্চশিক্ষা নয়, মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন নৈতিক মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের নৈতিকতার পাঠ শেখাতে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে শিক্ষকদের। নৈতিকতার চর্চা অব্যাহত রাখতে সমাজের প্রতিটি পর্যায়ের মানুষকে ভূমিকা রাখতে হবে।
আজ ২৫ জানুয়ারি বুধবার এথিকস ডে বা নৈতিকতা দিবস উদ্যাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন। দিবস উদ্যাপন এবং সংগঠনের এক যুগ পূর্তি উপলক্ষে এথিকস ক্লাব বাংলাদেশ আজ রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
‘নৈতিকতা দিবসের আলোচনা, আদর্শ শিক্ষক সম্মাননা এবং প্রয়াত উপদেষ্টাদের স্মরণ’ শিরোনামে আয়োজিত অনুষ্ঠানটি জাতীয় সংগীত ও দেশাত্মবোধক গান পরিবেশনের মাধ্যমে শুরু হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে অনলাইনে যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। তিনি বলেন, ‘এ সরকার শিক্ষা ব্যবস্থায় রূপান্তর ঘটাচ্ছে। আমরা শিক্ষার্থীদের দক্ষ, মূল্যবোধসম্পন্ন নৈতিক মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছি। এটা করা গেলেই যেমন দেশ হিসেবে আমরা বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে চাই, তেমন দেশ গড়া সম্ভব হবে।’
অনুষ্ঠানে ঘোষণাপত্র পাঠ করেন এথিকস ক্লাব বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী দিলারা আফরোজ খান। ঘোষণাপত্রে বলা হয়, বাংলাদেশের মানুষ আজ বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতোই নানা সংকটে জর্জরিত। রাজনৈতিক অবিশ্বাস, অর্থনৈতিক বৈষম্য, পরিবেশ বিপর্যয়, আর্থিক সন্ত্রাস, সাংস্কৃতিক ও মানবিক মূল্যবোধের অবক্ষয় মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। এতে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও বাংলাদেশের অবস্থা নাজুক হয়ে যেতে পারে। ফলে সরকারি উচ্চ পর্যায় থেকে তৃণমূল পর্যন্ত জাতীয়ভাবে নৈতিকতার পুনরুজ্জীবন নিয়ে ভাবার সময় এসেছে।
অনুষ্ঠানে ১১ জন শিক্ষককে ‘আদর্শ শিক্ষক সম্মাননা’ দেওয়া হয়। তাঁরা হলেন, ইমেরিটাস অধ্যাপক অরুণ কুমার বসাক (রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়), প্রতিভা মুৎসুদ্দি (সাবেক অধ্যক্ষ, ভারতেশ্বরী হোমস), অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ (ঢাকা কলেজ), অধ্যাপক হায়াৎ মামুদ (জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়), ইমেরিটাস অধ্যাপক আইনুন নিশাত (বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়), অধ্যাপক ফকরুল আলম (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়), মো. নুরুল আলম (সাবেক প্রধান শিক্ষক, খুলনা জিলা স্কুল), সাবেরা খানম (প্রধান শিক্ষক, ৫৫ নম্বর সোনাকান্দা সরকারি প্রাথমিক বালিকা বিদ্যালয়, নারায়ণগঞ্জ), মিনতি রানী (প্রধান শিক্ষক, কলসিন্দুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ময়মনসিংহ), মিল্টন মানখিন (শিক্ষক, ধলুয়াপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়, ময়মনসিংহ) এবং পাইনুমা মারমা (প্রধান শিক্ষক, বান্দরবান বৌদ্ধ অনাথালয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়)।
শিক্ষকদের হাতে সম্মাননা তুলে দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। প্রতিভা মুৎসুদ্দির পক্ষে সম্মাননা নেন কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের পরিচালক শম্পা সাহা। এর আগে সম্মাননাপ্রাপ্ত অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীর সম্মাননা তুলে দেওয়া হয় তাঁর স্ত্রী সেলিনা চৌধুরীর হাতে।
স্বাগত বক্তব্যে অধ্যাপক রতন সিদ্দিকী বলেন, একজন শিক্ষক তাঁর কর্তব্য নিষ্ঠা ও সাধনা দিয়ে প্রজন্ম গড়ে তোলেন।
সম্মাননাপ্রাপ্ত শিক্ষকদের মধ্যে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে অধ্যাপক অরুণ কুমার বসাক বলেন, শিক্ষার্থীদের গুণগত মানের শিক্ষায় শিক্ষিত করতে হবে। শিক্ষা ক্ষেত্রে বিশ্ব রকেটের গতিতে এগোচ্ছে। শুধু মুখস্থ বিদ্যা দিয়ে দেশের ভবিষ্যত প্রজন্মের যেন সর্বনাশ করা না হয়।
অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, ‘নৈতিকতা যেন শব্দের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থাকে। নৈতিক শিক্ষা দিয়ে পৃথিবী, দেশ ও জাতি গড়ে তুলতে যেন আমরা সজাগ থাকি।’
আদর্শ শিক্ষক হিসেবে নিজেকে মূল্যায়ণ করতে গিয়ে অধ্যাপক আইনুন নিশাত বলেন, ‘আমি আদর্শ শিক্ষক কিনা জানি না। তবে শিক্ষার্থীদের সব সময় আন্তরিকতার সঙ্গে পড়িয়েছি।’
শিক্ষক সাবেরা খানম বলেন, ভবিষ্যত জীবন মানে শুধু উচ্চ শিক্ষা নেওয়া নয়। শিক্ষার মাধ্যমে যেন বিবেক বুদ্ধি প্রতিষ্ঠা পায়, নৈতিক শিক্ষা নেওয়া হয় সেদিকেও নজর দিতে হবে।
সমাপনী বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সাদেকা হালিম বলেন, শিক্ষকেরা গুণগতমান রক্ষা করে পাঠদান করতে পারছেন কি না, সেটা এখন প্রশ্নবিদ্ধ। শিক্ষক সমাজও দুর্বৃত্তায়িত হয়েছে। আদর্শ শিক্ষকদের অনেক সংগ্রাম করতে হচ্ছে কর্মস্থলে।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন এথিকস ক্লাব বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি এম ই চৌধুরী শামীম।
এথিকস ক্লাব বাংলাদেশের আয়োজনে স্বল্প দৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্য থেকে ১০ জনকে পুরস্কার দেওয়া হয়। এর মধ্যে প্রথম স্থান পান ‘টিনের চশমা’ নির্মাণের জন্য ফজলে রাব্বি। দ্বিতীয় ও তৃতীয় পুরস্কার পান যথাক্রমে ‘দ্য স্টোরি অব স্টোন’ নির্মাণের জন্য রওনোকুর রহমান ও ‘প্রাত্যহিক’ নির্মাণের জন্য মো. রাজু আহমেদ। এ ছাড়া অনুষ্ঠানে আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয়, আন্তঃস্কুল ও জাতীয় বারোয়ারি বির্তক প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের পুরস্কার দেওয়া হয়।