মায়েরা জানতেন না, সেদিনটাই ছিল ওদের শেষ মিছিল

আফিকুল ইসলাম ও সাফওয়ান আখতার

আফিকুল ইসলাম সাদ ছিল সাভার ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী। একই স্কুলের দশম শ্রেণিতে পড়ত সাফওয়ান আখতার সদ্য। ৫ আগস্ট দুপুরে আফিকুল ধামরাইয়ে এবং বিকেলে সাভারে সাফওয়ান পুলিশের গুলিতে গুলিবিদ্ধ হয়। সাফওয়ান সেদিনই মারা যায়। আফিকুল মারা যায় ৮ আগস্ট।

সাভারে বাসার গেটে সাফওয়ানের ছবি দিয়ে ব্যানার টানিয়েছেন এলাকাবাসী। ধামরাই পৌরসভাসহ বিভিন্ন জায়গায় ঝুলছে আফিকুলের ছবি দিয়ে বানানো ব্যানার। যেখানে সে গুলিবিদ্ধ হয়েছিল, সেখানকার চত্বরের নামকরণ করা হয়েছে আফিকুলের নামে। এই দুই কিশোরের মা–বাবা ছেলে হত্যার ক্ষতিপূরণ চান না। চান তাঁদের ছেলেকে ফেরত পেতে।

‘আন্দোলনে মারা গেলে সবাই আমাকে শহীদের মা বলবে, এটা বলত ছেলেরা। কিন্তু আমি তো শহীদের মা হতে চাইনি, বীরের মা হতে চাইনি। আমি দুই ছেলেকে নিয়ে বাঁচতে চেয়েছিলাম।’
আঞ্জুমান আরা, আফিকুল ইসলাম সাদের মা

কে জানত, বিজয় মিছিলই হবে জীবনের শেষ মিছিল

৫ আগস্ট দুপুরে রান্না করছিলেন খাদিজা বিন জুবায়েদ। দেশের চরম অস্থিরতায় টেলিভিশনে প্রচারিত সংবাদ দেখতে থাকায় সেদিন রান্না শেষ করতে দেরি হচ্ছিল। ছেলে সাফওয়ান পড়ার টেবিলেই ছিল। গৃহশিক্ষক অমিত সাহাকে সাফওয়ান নিজেই ফোন করে বলেছিল, ‘ভাইয়া, এখন আইসেন না, গুলি খেয়ে মরে যাবেন।’ এই শিক্ষককে সন্ধ্যা সাতটায় আসতে বলেছিল সে। প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগের খবর পাওয়ার পর সাফওয়ানের বাবা মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান স্ত্রী খাদিজা বিন জুবায়েদকে বিজয় মিছিলের খবর জানিয়ে ছেলেকে নিচে পাঠাতে বলেন।

সেদিন আনন্দমিছিলে অংশ নিয়ে সাভারের পাকিজা বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত সাফওয়ান তার বাবার সঙ্গেই ছিল। দুপুরে খাওয়া হয়নি বলে বিকেল সাড়ে চারটার দিকে বাবা আখতারুজ্জামান বাসায় ফিরে এসেছিলেন। ছেলে বন্ধুদের সঙ্গে আরেকটু আনন্দ করতে চেয়েছিল। মাগরিবের আজানের আগে সব সময় বাসায় ফেরা ছেলে আর ঘরে ফেরে না। পরে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রসহ (আইসিইউ) বিভিন্ন ওয়ার্ডে সাফওয়ানকে খুঁজতে থাকেন সবাই। হাসপাতালের গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গায় স্ট্রেচারে কয়েকটি লাশ ছিল। সন্ধ্যায় সাফওয়ানকে পড়াতে আসা সেই শিক্ষক একটি লাশ দেখে বলেন, সাফওয়ানের চেহারার সঙ্গে মিল আছে মনে হচ্ছে। বাবা কাছে গিয়ে দেখলেন, নিথর হয়ে পড়ে থাকা লাশটিই তাঁর সাফওয়ানের।

‘আমি যদি জানতাম, পুলিশ আমার বাবারে গুলি করে আসছে, পুলিশকে জাপটে ধরে বলতাম, আমাকেও গুলি কর, আমি তো পুলিশকে ছাড়তাম না। ছেলেটা দুপুরে না খেয়ে বের হলো আর ফিরল লাশ হয়ে।’
খাদিজা বিন জুবায়েদ, নিহত সাফওয়ান আখতার সদ্যর মা

মঙ্গলবার সাভারের সিআরপি রোডে ডগরমোড়ার বাসায় বসে কথা হয় সাফওয়ানের মায়ের সঙ্গে। মা খাদিজা বলেন, ‘পড়ার টেবিল থেকে উঠিয়ে ছেলেকে নিচে পাঠাই। বিজয় মিছিলের কথা শুনে ছেলে খুশিতে লাফ দেয়। ছেলের খুশি দেখে হাসলাম। কে জানত, এই আনন্দমিছিলই ওর জন্য শেষ মিছিল হবে। এটা জানলে তো ছেলেকে পাঠাতাম না।’

সাফওয়ান আন্দোলনে যাবে বলে মায়ের কাছে বায়না করত। মা যেতে না দেওয়ায় বাসার ছাদে গিয়ে মিছিল, গোলাগুলি দেখত। ছাদের কথা বলে ছেলে নিচে নেমে আন্দোলনে চলে যাবে, এই ভয় থেকে মা বাসার নিরাপত্তাকর্মীকে বলে রেখেছিলেন যে ভবনের কোনো ছেলে–মেয়ে যেন অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া বাইরে যেতে না পারে।

খাদিজা বলেন, ‘আমি যদি জানতাম পুলিশ আমার বাবারে গুলি করে আসছে, পুলিশকে জাপটে ধরে বলতাম, আমাকেও গুলি কর, আমি তো পুলিশকে ছাড়তাম না। ছেলেটা দুপুরে না খেয়ে বের হলো আর ফিরল লাশ হয়ে।’

রাত নয়টার দিকে আখতারুজ্জামান স্ত্রীকে ফোন দিলে সাফওয়ানের মা খাদিজা প্রথমেই বলেছিলেন, ‘ছেলেকে পাইছ?’ খাদিজা বলেন, ‘ছেলের বাবা ফোনে বললেন, “ছেলেকে তো পাইছি, কিন্তু ছেলে তো বেঁচে নেই।” এরপর আমার আর কিছু মনে নেই।’ সেদিন সাফওয়ানের হাতে ও পাঁজরে গুলি লাগে। মা আক্ষেপ করে বলেন, ‘যদি গুলিটা শুধু হাতে লাগত, হাত না হয় কেটেই ফেলতাম। ছেলে লেখাপড়া নাহয় না–ই করত। চোখের সামনে তো থাকত।’

সাফওয়ান আখতারের মা খাদিজা বিন জুবায়েদ, বাবা মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান ও বোন আতকিয়া
ছবি: সংগৃহীত

২০২৫ সালে এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল সাফওয়ানের। স্কুলে প্রাক্‌–নির্বাচনী পরীক্ষার কয়েকটি পরীক্ষা দেওয়ার পর স্কুল বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। বিজয়ের পর হাঙ্গামা হয়, তা তো জানা ছিল না উল্লেখ করে ক্ষোভের সঙ্গে খাদিজা বলেন, ‘আমি হত্যাকারীর সর্বোচ্চ শাস্তি চাই। আমার ছেলেরে যে গুলি করছে, আমি চাই তার মৃত্যুটাও যেন যন্ত্রণার হয়, কঠিন হয়।’

খাদিজা ছেলের বন্ধুদের কাছে শুনেছেন, সেদিন পুলিশ হঠাৎ করেই গুলি করা শুরু করেছিল। ছেলেকে খুঁজতে বের হয়ে অল্পের জন্য আখতারুজ্জামানের পায়ে গুলি লাগেনি বলেও জানান তিনি। আখতারুজ্জামানের পেছনে থাকা লোকটির পা গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে গিয়েছিল।

সাফওয়ানের বাবা পশুচিকিৎসক মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান। মা খাদিজা নীড় ফাউন্ডেশন নামের একটি সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক। এই দম্পতির বড় মেয়ে আতকিয়া জামান তিশমা প্রতিবন্ধকতার জন্য কথা বলতে পারেন না। এই বাবা ও মায়ের আক্ষেপ, ৫ আগস্টের পর থেকে তাঁরা মা–বাবা ডাক শুনতে পাচ্ছেন না। এই জীবনে এই ডাক আর শুনতেও পাবেন না।

খাদিজা বলেন, ‘ছেলে মিনিটে মনে হয় ৫০ বার মা ডাকত। বলত, বোনেরটাসহ ডাকে সে।’

সাফওয়ানের হারমোনিয়াম, তবলা, গিটার, বল, পড়ার টেবিল—সবই সে যেভাবে রেখে গিয়েছিল, সেভাবেই আছে
ছবি: প্রথম আলো

জামালপুর সদরের রঘুনাথপুরে পারিবারিক কবরস্থানে সাফওয়ানকে কবর দেওয়া হয়েছে। আখতারুজ্জামান বলেন, ‘ছেলেকে নিয়ে গিয়েছিলাম, ফেরত আনতে পারলাম না। দেশ স্বৈরাচারমুক্ত হয়েছে, উত্তাল পরিস্থিতি নেই—এই বিশ্বাসে ছেলেকে আনন্দমিছিলে রেখে এসেছিলাম। আমার ছেলে ছিল অলরাউন্ডার। খুব মানবিক ছিল। শুধু আমরা নয়, দেশ একটা মানবিক ছেলেকে হারিয়েছে।’

সাফওয়ানের হারমোনিয়াম, তবলা, গিটার, বল, পড়ার টেবিল—সবই সে যেভাবে রেখে গিয়েছিল, সেভাবেই আছে। খাদিজা বলেন, ১৫ বছর ধরে ছেলেকে খুব যত্ন ও আদরে বড় করেছেন। ছেলের বাবা কাজের সূত্রে দূরে থাকায় সেভাবে সময় দিতে পারেননি। সবাই বলেন, বাবা ছাড়া ছেলে মানুষ করা কঠিন। কিন্তু সাফওয়ানকে বড় করতে তেমন বেগ পেতে হয়নি। সে কখনো অবাধ্য হতো না। ছেলে মারা যাওয়ার পর বুঝতে পারছেন, ছেলে বড় হয়ে গিয়েছিল। গরুর মাংস দেখলেই ছেলে বায়না করত মায়ের হাতের ভুনা খিচুড়ি খাওয়ার জন্য। ছেলের মৃত্যুর পর মিলাদে খাদিজা সবাইকে সেই ভুনা খিচুড়ি খাইয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এই জীবনে আমি আর কখনোই ভুনা খিচুড়ি রান্না করব না।’

ছেলে হত্যার কোনো ক্ষতিপূরণ চান কি না, জানতে চাইলে আখতারুজ্জামান বলেন, ‘ক্ষতিপূরণ চাই তো। ক্ষতিপূরণ হিসেবে আমি আমার ছেলেকে ফেরত চাই। কেউ ছেলেকে ফেরত দিতে পারবে?’

সাফওয়ানের বড় বোন আতকিয়া ভাইয়ের নাম সদ্য ডাকতে পারেন না। অস্পষ্টভাবে ভাইকে কক্ক ডাকেন। ঘরে তাঁর আদরের কক্ক নেই, এটা মানতে পারছেন না। এই ভাইই তো তাঁকে আগলে রাখত।

সাভারে বাসার গেটে সাফওয়ানের ছবি দিয়ে ব্যানার টানিয়েছেন এলাকাবাসী
ছবি: প্রথম আলো

শুধু দুই ছেলেকে নিয়ে বাঁচতে চেয়েছিলেন আঞ্জুমান আরা

২০০৬ সালে জন্ম নেওয়া আফিকুল ইসলাম সাদ ৪ আগস্ট তার ফেসবুকে লিখেছিল, ‘যে দেশের ইতিহাস রক্ত দিয়ে শুরু হয়েছে, ওই ইতিহাস আবার লিখতে রক্তই লাগবে।’
পরদিন ৫ আগস্ট দুপুরে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী আফিকুল পুলিশের গুলিতে গুরুতর আহত হয়। তিন দিন এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে ৮ আগস্ট সকালে মারা যায় সে।

কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে আফিকুল ফেসবুকে সক্রিয় ছিল। গত ১৬ জুলাই বাংলাদেশের মানচিত্র দিয়ে একটি ব্যানার বানিয়ে ফেসবুকে ‘কোটা আন্দোলন’ শব্দটি কেটে ‘স্বাধীনতা আন্দোলন’ লিখেছিল।

মঙ্গলবার ধামরাইয়ের পূর্ব কায়েতপাড়ার বাসায় বসে কথা হয় আফিকুলের বাবা মো. শফিকুল ইসলাম, মা আঞ্জুমান আরা এবং দেড় বছরের ছোট ভাই সাভার ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী সাজিদুল ইসলামের সঙ্গে।

আঞ্জুমান আরা জানান, ৫ আগস্ট সকালে ছেলে তাঁর বিছানায় শুয়ে ছিল। হঠাৎ একটি ফোন আসে। মায়ের কাছ থেকে ৩০ টাকা নিয়ে তড়িঘড়ি করে বের হয়ে যায়। এই মা পরে শুনেছেন, ধামরাই থানা থেকে বের হয়ে পুলিশ গুলি করতে করতে সামনে এগোলে হার্ডিঞ্জ স্কুল অ্যান্ড কলেজের মূল ফটকের কাছে ছেলে গুলিবিদ্ধ হয়। গুলিটি লাগে আফিকুলের কপালের বাঁ পাশে। অস্ত্রোপচার করা সম্ভব হয়নি বলে গুলিটি কপালে লেগে বাইরে বের হয়েছিল কি না, তা–ও জানা যায়নি।

আফিকুলের মা আঞ্জুমান আরা ও বাবা শফিকুল ইসলাম
ছবি: প্রথম আলো

আঞ্জুমান আরা আরও জানান, বেলা দেড়টার দিকে একজন ফোন করে জানান, আফিকুলের গুলি লেগেছে। গুলি লাগায় প্রচুর রক্তক্ষরণ হতে থাকে। কয়েকজন মিলে আফিকুলকে হাসপাতালে ভর্তি করার চেষ্টা করেন, কিন্তু ভয়ে কোনো হাসপাতাল ভর্তি করতে রাজি হয়নি। সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথেও পুলিশের গোলাগুলি চলে। পরে অ্যাম্বুলেন্স ওই পথ থেকে ফেরত এসে নয়ারহাট হয়ে গ্রামের ভেতর দিয়ে আবার এনাম হাসপাতালে যায়। সেখানে তাকে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালে পৌঁছাতে প্রায় তিন ঘণ্টা লেগে যায়। এদিন আফিকুলের বাবা শফিকুল ইসলাম মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ার দড়গ্রামে গ্রামের বাড়িতে ছিলেন। ছেলের খবর পেয়ে পরে তিনি হাসপাতালে যান।

শফিকুল ইসলাম জানান, দুই ছেলেকে সাভার ক্যান্টনমেন্ট স্কুলে পড়ানোর জন্যই তিনি ঢাকা থেকে ধামরাইয়ে এসেছিলেন। ছেলেদের সঙ্গে তাঁর বন্ধুর মতো সম্পর্ক। দুই ছেলে শুরু থেকেই আন্দোলনে যেতে চেয়েছে। তবে বাবা হিসেবে তিনি আন্দোলনে যেতে নিষেধ করতেন। তাই অন্যান্য বিষয় নিয়ে গল্প করলেও ছেলেরা এ নিয়ে বাবার সঙ্গে কিছু বলত না।

আঞ্জুমান আরা বলেন, ‘আন্দোলনে মারা গেলে সবাই আমাকে শহীদের মা বলবে, এটা বলত ছেলেরা। কিন্তু আমি তো শহীদের মা হতে চাইনি, বীরের মা হতে চাইনি। আমি দুই ছেলেকে নিয়ে বাঁচতে চেয়েছিলাম।’

ভাই সাজিদুলের সঙ্গে আফিকুল
ছবি: পরিবার থেকে সংগৃহীত

আঞ্জুমান আরা সেদিন ছেলেকে বারবার ফোন দিচ্ছিলেন। ছেলে তাঁকে নিয়ে চিন্তা না করতে এবং ফোন করে বিরক্ত না করার জন্য বলেছিল। এটাই ছিল মা ও ছেলের শেষ কথা। বেলা পৌনে একটার দিকে তিনি আবার ছেলেকে ফোন দিয়েছিলেন, কিন্তু ছেলে আর ফোন ধরেনি। পরে অ্যাম্বুলেন্সে রক্তে ভেসে যাওয়া ছেলেকে যখন দেখেন, তখন ছেলে আর কোনো সাড়া দেয়নি, শুধু নিশ্বাস নিচ্ছে, বেঁচে আছে, এটুকুই বুঝতে পেরেছিলেন এই মা।

আঞ্জুমান আরা বলেন, ‘জিম করত, কী যে সুন্দর ছিল আমার ছেলেটা! কী নিষ্ঠুর এই দুনিয়া। পুলিশ নির্মমভাবে গুলি না করলে তো ছেলেটা বেঁচে থাকত। কী যে কঠিন পরীক্ষা দিচ্ছি, আমি তো ধৈর্য ধরতে চাই, কিন্তু পারি না। আমার ছেলে আমার কথা ভাবেনি, ভেবেছে দেশের কথা।’

ক্ষোভ প্রকাশ করে আঞ্জুমান আরা বলেন, ‘অনেকেই টাকাপয়সা দিয়ে সাহায্য করতে চান। আমি বলি, আমার ছেলেকে ফেরত দেন।’

শফিকুল ইসলাম একটি কোম্পানিতে উচ্চপদে চাকরি করতেন। দুই বছর আগে চাকরিটি চলে যায়। তার পর থেকেই সংসারে টানাটানি যাচ্ছে। আফিকুল ফ্রিল্যান্সিং করে কিছু টাকা আয় করত। নিজের খরচের পাশাপাশি সংসারেও কিছু টাকা দিত। ডিসেম্বরে মা, বাবা ও ভাইকে নিয়ে সাজেকে বেড়াতে যেতে চেয়েছিল। ভবিষ্যতে ব্যবসা করে সংসারের হাল ধরতে চেয়েছিল।

ধামরাই পৌরসভাসহ বিভিন্ন জায়গায় আফিকুলের ছবি দিয়ে বানানো ব্যানার লাগানো হয়েছে
ছবি: প্রথম আলো

ভাই সাজিদুল ইসলাম জানায়, ভাইকে নিয়ে যখন হাসপাতালে গেছে, ততক্ষণে মানুষ বিজয় মিছিল নিয়ে বের হয়েছে। সে বলে, ‘স্বাধীনতা পেতে ভাইকে হারাতে হবে, তা তো জানা ছিল না। তাই বিজয়ের উল্লাস করতে পারিনি। শুধুই কানছি।’

মানিকগঞ্জে পারিবারিক কবরস্থানে আফিকুলকে কবর দেওয়া হয়েছে। ছেলে মারা যাওয়ার তিন–চার দিন আগে মা আঞ্জুমান আরা ছেলেকে পরিবারের চারজন মিলে একটি ছবি তোলার কথা বলেছিলেন। মায়ের আক্ষেপ, ‘চারজন মিলে সেই ছবি আর কোনো দিন তোলা হবে না।’