বেইলি রোডে ভবনে আগুন: ১৭ ঘণ্টায় যা যা জানা গেল
রাজধানীর বেইলি রোডে একটি ভবনে আগুনে ৪৬ জনের মৃত্যুর ঘটনার পর সামনে আসছে নানা মর্মস্পর্শী ঘটনা। কেউ ভবনটির রেস্তোরাঁয় খেতে গিয়েছিলেন পরিবারসহ, কেউ গিয়েছিলেন বন্ধুদের সঙ্গে। কেউ কেউ ভবনটিতে কাজ করে সংসার চালাতেন।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ভবনটিতে আগুন লাগে বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১০টার দিকে। আজ শুক্রবার বেলা ৩টা পর্যন্ত ১৭ ঘণ্টায় ঘটনার নানা দিক জানা গেছে।
আমরা যা যা জানতে পেরেছি, তা আপনার জন্য তুলে ধরা হলো—
স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন ৪৬ জনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। আরও জানিয়েছেন, ১২ জন চিকিৎসাধীন। তাঁরা কেউ শঙ্কামুক্ত নন। এর মধ্যে দুজন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং ১০ জন শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন এবং শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক প্রবীর চন্দ্র দাস জানিয়েছেন, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মৃত্যুর কারণ ‘কার্বন মনোক্সাইড পয়জনিং’, সহজ ভাষায় যাকে বিষাক্ত ধোঁয়া বলা যায়।
৪৬ জনের মধ্যে ৪০ জনের পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। ৩৮ জনের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে ৭৫ জনকে।
ঢাকা জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এ কে এম হেদায়েতুল ইসলাম জানিয়েছেন, লাশ বহনের জন্য নিহত ব্যক্তিদের স্বজনদের ২৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হচ্ছে। বেলা সোয়া ১১টা পর্যন্ত ৩ জনের পরিবার এই অর্থ নিয়েছে। বাকিরা সচ্ছল হওয়ায় অর্থ নেয়নি। তিনি বলেন, আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসার জন্য আপাতত ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
মৃত্যুর ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, ভবনের নিচতলায় স্যামসাং ও গেজেট অ্যান্ড গিয়ার নামে দুটি ইলেকট্রনিক সরঞ্জাম বিক্রির দোকান এবং শেখলিক নামের একটি জুসবার (ফলের রস বিক্রির দোকান) ছিল। দ্বিতীয় তলায় কাচ্চি ভাই নামের একটি রেস্তোরাঁ, তৃতীয় তলায় ইলিয়ন নামের একটি পোশাকের ব্র্যান্ডের দোকান, চতুর্থ তলায় খানাস ও ফুকো নামের দুটি রেস্তোরাঁ, পঞ্চম তলায় পিৎজা ইন নামের একটি রেস্তোরাঁ, ষষ্ঠ তলায় জেসটি ও স্ট্রিট ওভেন নামের দুটি রেস্তোরাঁ এবং ছাদের একাংশে অ্যামব্রোশিয়া নামের একটি রেস্তোরাঁ ছিল।
বেইলি রোডের আগুন লাগা ভবনটি ছয়তলা। তবে ছাদের একপাশেও একটি রেস্তোরাঁ রয়েছে। ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, ভবনের নিচতলায় স্যামসাং ও গেজেট অ্যান্ড গিয়ার নামে দুটি ইলেকট্রনিক সরঞ্জাম বিক্রির দোকান এবং শেখলিক নামের একটি জুসবার (ফলের রস বিক্রির দোকান) ও চুমুক নামের একটি চা–কফি বিক্রির দোকান ছিল। দ্বিতীয় তলায় কাচ্চি ভাই নামের একটি রেস্তোরাঁ, তৃতীয় তলায় ইলিয়ন নামের একটি পোশাকের ব্র্যান্ডের দোকান, চতুর্থ তলায় খানাস ও ফুকো নামের দুটি রেস্তোরাঁ, পঞ্চম তলায় পিৎজা ইন নামের একটি রেস্তোরাঁ, ষষ্ঠ তলায় জেসটি ও স্ট্রিট ওভেন নামের দুটি রেস্তোরাঁ এবং ছাদের একাংশে অ্যামব্রোসিয়া নামের একটি রেস্তোরাঁ ছিল।
অবশ্য ভবনের ছবিতে সপ্তম তলায় হাক্কাঢাকা নামের একটি রেস্তোরাঁর সাইনবোর্ড দেখা যায়, যা ফায়ার সার্ভিসের হিসাবে আসেনি।
শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে গিয়ে র্যাবের মহাপরিচালক এম খুরশীদ হোসেন ফায়ার সার্ভিসের বরাত দিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, নিচতলার ছোট একটি দোকান থেকে আগুনের সূত্রপাত। অনেকগুলো সিলিন্ডার থাকায় সেগুলো বিস্ফোরিত হয়ে ভবনে দ্রুত আগুন ছড়িয়ে যায়।
ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন বেইলি রোডে গিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ভবনটিতে কোনো অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল না। ঝুঁকিপূর্ণ জানিয়ে ভবন কর্তৃপক্ষকে তিনবার চিঠি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) নগর–পরিকল্পনাবিদ ও বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনার (ড্যাপ) প্রকল্প পরিচালক আশরাফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বেইলি রোডের যে ভবনে আগুন লেগেছে ওই ভবনের কেবল ৮ তলায় আবাসিক এর অনুমোদন নেওয়া হয়েছে। বাকি এক থেকে সাত তলা পর্যন্ত বাণিজ্যিক অনুমোদন নেওয়া হলেও সেখানে কেবল অফিস কক্ষ ব্যবহারের জন্য অনুমোদন ছিল। কিন্তু রেস্টুরেন্ট শোরুম বা অন্য কিছু করার জন্য অনুমোদন নেওয়া হয়নি।
শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে গিয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. মহিববুর রহমান বলেন, আগুনের ঘটনায় তদন্তে যাঁরা দায়ী হবেন, তাঁদের কঠোরভাবে আইনের আওতায় আনার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), ভিকারুন নিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং সিটি কলেজের শিক্ষার্থী রয়েছেন। রয়েছেন এক ইতালিপ্রবাসী ও তাঁর পরিবারের চার সদস্য। রয়েছেন নাজিয়া আহমেদ (৩২) নামের এক নারী ও তাঁর দুই শিশুসন্তান আরহান আহমেদ (৭) ও আবিয়াত আহমেদ (৩)।
বেঁচে ফেরাদের মধ্যে রয়েছেন স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক এবং প্রতিষ্ঠানটির বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) চেয়ারম্যান আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদার। তিনি স্ত্রী ও দুই মেয়েকে নিয়ে সেখানে খেতে গিয়েছিলেন। উপলক্ষটি ছিল বড় মেয়ের (১২) জন্মদিন। আগুন লাগার পর তাঁরা ছাদে আশ্রয় নেন। কামরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার বড় মেয়েটি কাঁদতে কাঁদতে বলছিল, বাবা, আমার জন্মদিন কি মৃত্যুদিন হয়ে যাচ্ছে?’