চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আবার সংঘর্ষে ছাত্রলীগ
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির এক নেতাকে কোপানোর জেরে আবার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। আজ রোববার রাত সাড়ে নয়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহজালাল ও শাহ আমানত হলের সামনে এ ঘটনা ঘটে। রাত ১১টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা চলছিল।
সংঘর্ষে জড়ানো এ দুটি পক্ষ হলো সিক্সটি নাইন ও চুজ ফ্রেন্ডস উইথ কেয়ার (সিএফসি)। এ দুটি পক্ষের মধ্যে গত বৃহস্পতি ও শুক্রবার দুই দফা সংঘর্ষ হয়। এতে তিন পুলিশ সদস্যসহ উভয় পক্ষের অন্তত ২৯ নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। এর আগে বুধবার রাতে ও বৃহস্পতিবার দুপুরে ছাত্রলীগের আরেক উপপক্ষ ‘বিজয়ের’ সঙ্গে দুই দফা সংঘর্ষ হয় সিক্সটি নাইন উপপক্ষের। এতে আহত হয়েছেন অন্তত ১৫ জন।
ছাত্রলীগ সূত্র জানায়, বৃহস্পতি ও শুক্রবারের সংঘর্ষের ঘটনায় কোনো পক্ষই সমঝোতায় আসেনি। পুলিশ ও প্রক্টরিয়াল বডির হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি সাময়িকভাবে নিয়ন্ত্রণে এলেও দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ছিল। এর রেশ ধরে আজ রাত সোয়া নয়টার দিকে সিক্সটি নাইনের অনুসারী ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের উপকর্মসূচি ও পরিকল্পনাবিষয়ক সম্পাদক মাশরুর অনিককে কুপিয়ে জখম করেন সিএফসির কর্মীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ঝুপড়ি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এটি জানাজানি হওয়ার পর সিক্সটি নাইনের কর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
পরে রাত সাড়ে নয়টার দিকে সিএফসির কর্মীরা শাহ আমানত হলের সামনে আর সিক্সটি নাইনের কর্মীরা শাহজালাল হলের সামনে অবস্থান নেন। একপর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। তবে এতে কারও আহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি।
সিক্সটি নাইনের নেতা ও শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি মিজানুর রহমান বলেন, তাঁদের একজনকে কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। এ নিয়ে উত্তেজনা শুরু হয়েছে।
জানতে চেয়ে সিএফসি উপপক্ষের নেতা সাবেক সহসভাপতি মির্জা খবিরের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। পরে ওই পক্ষের আরেক নেতা সাবেক উপদপ্তর সম্পাদক রমজান হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের দুই জুনিয়রকে মারধর করা হয়েছে। পরে তাঁরা এটি প্রতিহত করছেন।
মাশরুর অনিককে কুপিয়ে জখমের বিষয়ে জানতে চাইলে রমজান হোসেন বলেন, জুনিয়রকে মারতে গিয়ে হয়তো ওই নেতা ব্যথা পেয়েছেন। তাঁরা কাউকে মারেননি।
জানতে চাইলে মাশরুর অনিক প্রথম আলোকে বলেন, তাঁকে হত্যার উদ্দেশ্যে নিয়ে হামলা করা হয়েছে। হামলাকারীরা মুখোশ পরে ছিলেন বলে তিনি চিনতে পারেননি। হামলার পর দৌড়ে তিনি পালিয়ে এসেছেন। মাশরুর অনিক বলেন, হামলার পর তিনি স্থানীয় একটি বেসরকারি ক্লিনিক থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। তাঁর হাতের কবজিতে পাঁচটি সেলাই দিতে হয়েছে। এখন হলে অবস্থান করছেন।
এদিকে সংঘর্ষের ঘটনা রাত সাড়ে ১১ টার দিকে নিয়ন্ত্রণে আসে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর রোকন উদ্দীন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে। দুই পক্ষকেই তাঁরা বোঝাতে সক্ষম হয়েছেন। দুই হলের মাঝখানে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।’
বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের বর্তমানে কমিটি নেই। চাঁদাবাজির অভিযোগ, নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষ ও সাংবাদিক মারধরের ঘটনার পর গত বছরের ২৪ এপ্রিল এ কমিটি বিলুপ্ত করে কেন্দ্র। এ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের রাজনীতি দীর্ঘদিন ধরে দুটি পক্ষে বিভক্ত। এর মধ্যে একটি পক্ষ শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী ও আরেকটি পক্ষ সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী হিসেবে নিজেদের পরিচয় দেয়। এ দুটি পক্ষ আবার ১১টি উপপক্ষে বিভক্ত। এর মধ্যে বিজয় ও সিএফসি মহিবুল হাসানের আর বাকি নয়টি উপপক্ষ আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী হিসেবে পরিচয় দেয়।