লগ্নি বাড়াতে ডিসেম্বরে ভারতে ‘বেস্ট অব বাংলাদেশ’
সমন্বিত অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তি বা ‘সেপা’ সম্পর্কিত নির্দিষ্ট প্রতিশ্রুতি দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বৃদ্ধির প্রধান সহায়ক হবে বলে বাংলাদেশের শিল্প প্রতিনিধিদের দৃঢ় বিশ্বাস। তাঁরা মনে করেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই সফরের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে বিনিয়োগের প্রশ্নে ভারতীয় লগ্নিকারীদের ‘মানসিক বাধা’ বহুলাংশে দূর হয়েছে। বাংলাদেশ সম্পর্কে ভারতীয়দের আগ্রহ ক্রমে বাড়ছে।
লগ্নি বাড়ানোর লক্ষ্যে আগামী ডিসেম্বরে দিল্লি ও মুম্বাইয়ে বাংলাদেশের শিল্পমহল বড় আকারে প্রদর্শনীর আয়োজন করছে। তার আনুষ্ঠানিক নাম ‘বেস্ট অব বাংলাদেশ’।
বাণিজ্য বৃদ্ধিকে বাংলাদেশ কতটা গুরুত্ব দিচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই সফর তার প্রমাণ। তিনি নিজে ভারতের বণিকসভা সিআইআই অনুষ্ঠিত আয়োজনে অংশ নিয়েছেন। ‘ফিকি’ আয়োজিত অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন দেশের বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশিসহ বিভিন্ন বণিকসভার কর্তারা। সর্বত্র এক আহ্বান, বাংলাদেশে লগ্নি লাভজনক। তাই ভারতীয় লগ্নিকারকেরা উৎসাহী হোন। প্রধানমন্ত্রীর শিল্পবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের কথায়, বাজারের স্বার্থেই ভারতীয় বিনিয়োগকারীরা যাতে বাংলাদেশের দিকে নজর দেন, সেই লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নীতি নির্ধারণ করছেন। দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ বাণিজ্যিক সম্ভাবনার নতুন ঠিকানা।
বাণিজ্য সম্পর্ক বাড়াতে এত দিন এফবিসিসিআইয়ের ভারতীয় সঙ্গী ছিল ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি বা ‘ফিকি’। এফবিসিসিআই নতুন করে জোটবদ্ধ হয়েছে সিআইআইয়ের সঙ্গে।
সংগঠনের সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘সিআইআইয়ের সঙ্গে অনুসমঝোতা করার পাশাপাশি আমরা বণিকসভা অ্যাসোচ্যামের সঙ্গেও গাঁটছড়া বাঁধছি। আমরা চাইছি বাংলাদেশ সম্পর্কে ভারতীয় লগ্নিকারকদের যদি কিছু আড়ষ্টতা থেকে থাকে, কোনো ধরনের মেন্টাল ব্লক যদি থাকে, তা দ্রুত দূর করতে। এ জন্য আগামী ডিসেম্বরে দিল্লি ও মুম্বাইয়ে “বেস্ট অব বাংলাদেশ” বাণিজ্য মেলার আয়োজন করা হচ্ছে। আগামী মার্চ মাসে এফবিসিসিআইয়ের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বাংলাদেশে তিন দিনের বাণিজ্য শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশে লগ্নির দিগন্ত কতটা বিস্তৃত তার একটা ঝলক ভারতীয় শিল্পপতিরা পাবেন।’
জসিম উদ্দিন আরও বলেন, ‘আমাদের উদ্দেশ্য বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে দ্রুত সমানতালে এগিয়ে যাওয়া।’
ফিকির মহাপরিচালক অরুণ চাওলা বাংলাদেশে লগ্নির বিষয়ে কোনো মানসিক বাধার কথা অবশ্য স্বীকার করেননি। তিনি মনে করেন, এত দিন বাংলাদেশে বিনিয়োগের যে সুযোগ ছিল, সাম্প্রতিক কালে তা বহুগুণ বেড়ে গেছে। ভারতীয়রা তাই উৎসাহ বোধ করছেন। ‘সেপা’ নিয়ে অগ্রগতি যত হবে, বিনিয়োগের বাধাও তত কমবে; লগ্নির সম্ভাবনা বাড়বে।
ফিকির আরেক কর্তা মনোজ চুঘ বলেন, বাংলাদেশের গুরুত্ব ভারতীয়দের কাছে সাম্প্রতিক সময়ে অবিশ্বাস্যভাবে বেড়ে গেছে। রাজনৈতিক ও সামাজিক স্থিরতা এবং সরকারের বাণিজ্যমুখী দৃষ্টিভঙ্গি এই গুরুত্ব বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান কারণ।
দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় অংশগ্রহণকারী ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্তা বলেন, ‘সাফটা’ খুব একটা কার্যকর হতে পারেনি নানা কারণে। এটা দুর্ভাগ্যজনক। কিন্তু ‘সেপা’ সেই ঘাটতি মিটিয়ে বাণিজ্যের বিস্তার ঘটাবে। দুই পক্ষের কাছেই জরুরি অতি দ্রুত সেপা কার্যকর করা। তিনি আরও বলেন, যোগাযোগব্যবস্থার যেভাবে উন্নতি ঘটছে, তাতে ভারতের পূর্ব ও উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং বাংলাদেশ এই উপমহাদেশের প্রধান বাণিজ্যকেন্দ্র হয়ে উঠবে। দুই দেশের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব তাই দ্রুত এই চুক্তি রূপায়ণে আগ্রহী।
পণ্য ও পরিষেবা বাণিজ্যের পাশাপাশি সেপার লক্ষ্য লগ্নি বৃদ্ধির ক্ষেত্রেও। তিনটি ক্ষেত্র বাস্তবায়নের অর্থ হলো বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনা। এই ব্যাখ্যার সঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ওই কর্তা বলেন, ভারতের বাণিজ্য বৃদ্ধি ও শিল্প পরিস্থিতির উন্নতি ঘটার অর্থ বাংলাদেশেরও এগিয়ে চলা। এ ক্ষেত্রে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীই সমান উদ্যোগী। পারস্পরিক সম্পর্ক যত ভালো হচ্ছে, বাণিজ্য বৃদ্ধির অনুকূল পরিবেশও তত দ্রুত সৃষ্টি হচ্ছে।
জসিম উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং ২৮টি হাই-টেক পার্ক তৈরি হয়েছে। ভারতীয় লগ্নিকারকদের জন্য মোংলা ও মিরসরাইয়ে তৈরি হচ্ছে দুটি বিশেষায়িত অর্থনৈতিক কেন্দ্র। বিনিয়োগে আগ্রহী ভারতীয় শিল্পপতিদের সেখানে আমন্ত্রণ জানানোর একটা পরিকল্পনা রয়েছে। বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ মনে করেন, তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পে বাংলাদেশের অগ্রগতি ভারতীয়দের কাছে দ্রুত আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে। এদিকে লগ্নি আকর্ষণের ক্ষেত্রে সরকার ও বণিকসভাগুলো বিশেষ যত্নবান।