কার্যকর প্রশাসনিক ব্যবস্থা না নেওয়ায় ম্রো গ্রামে হামলা: মানবাধিকার কমিশন
বান্দরবানের লামা উপজেলায় ম্রো জাতিসত্তার মানুষদের বাড়িতে সাম্প্রতিক অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনায় ক্ষোভ ও শঙ্কা প্রকাশ করছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। তারা বলেছে, কার্যকর প্রশাসনিক ব্যবস্থা না নেওয়ায় ম্রো গ্রামে হামলা হলো। এ ঘটনা তদন্তে কমিশনের উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন প্রতিনিধিদল পাঠানো হয়েছে। আজ বুধবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে সংস্থাটি।
গত রোববার রাতে রেংয়েন ম্রোপাড়ায় হামলা চালিয়ে লুটপাট, সাতটি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করা হয়।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের বরাত দিয়ে কমিশনের বিবৃতিতে বলা হয়, লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড কোম্পানি তাঁদের উচ্ছেদ করে জমি দখলের জন্য ট্রাকভর্তি লাঠিয়াল বাহিনী নিয়ে এসে হামলা ও লুটপাট চালিয়েছে। গত ২৬ এপ্রিল ম্রো জাতিসত্তার মানুষদের এলাকার ৩৫০ একর জুমচাষের প্রাকৃতিক বন পুড়িয়ে দেওয়া, পানির ঝরনা বিনষ্ট করা এবং পরবর্তীকালে এর ফলে সৃষ্ট খাদ্য ও সুপেয় পানির অভাবে তিনটি গ্রামের মানুষের অত্যধিক কষ্টে জীবনযাপনের বিষয়ে কমিশন তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নিয়েছিল।
এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পাঁচ দফা নির্দেশনা দেয় কমিশন। এর মধ্যে ছিল এসব পরিবারকে সহায়তা, তাদের হয়রানি না করা। এ ছাড়া তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে বান্দরবানের জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেওয়া হয়। আর বিষয়টি সার্বিক তত্ত্বাবধান সমন্বয় ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিভাগীয় কমিশনার চট্টগ্রামকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
মানবাধিকার কমিশনের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বান্দরবানের জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে দেওয়া প্রতিবেদনে আরও তথ্যের প্রয়োজন আছে। তাই ৩১ জানুয়ারির মধ্যে কমিশন আবারও প্রয়োজনীয় তথ্য দিতে বলেছে বান্দরবানের জেলা প্রশাসককে।
অভিযোগের বিপরীতে কার্যকর প্রশাসনিক ও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় ধারাবাহিকভাবে এসব ঘটনা ঘটে চলেছে এবং ম্রো সম্প্রদায়ের মানবাধিকার চরমভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছে। এ ধরনের ন্যক্কারজনক ঘটনা প্রতিহত করতে এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে দ্রুততার সঙ্গে নিরপেক্ষ তদন্ত সম্পন্ন করে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের কোনো বিকল্প নেই।
কমিশন ঘটনাস্থল সরেজমিনে পরিদর্শন করার জন্য কমিশনের পার্বত্য চট্টগ্রাম-বিষয়ক সদস্য কংজরী চৌধুরীর নেতৃত্বে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন প্রতিনিধিদল পাঠিয়েছে। এতে কমিশনের পরিচালক (অভিযোগ ও তদন্ত) এবং জেলা ও দায়রা জজ মো. আশরাফুল আলমসহ চার সদস্য রয়েছেন।
স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে যাতে কোনোভাবেই কোনো হয়রানি করা না হয় এবং অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম-বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিবকে চিঠি পাঠিয়েছে কমিশন। এর পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত সব পরিবারকে পর্যাপ্ত খাদ্য ও পানি এবং প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে গৃহ নির্মাণসহ প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়ার জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিবকেও চিঠি দেওয়া হয়েছে।