তথ্যপ্রযুক্তি ও টেলিকম খাতের উন্নয়নে ২০ দফা প্রস্তাব

‘বৈষম্যহীন উন্নয়নে প্রযুক্তির ব্যবহার: নতুন করে যাত্রা’ শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করে টিপাপ। ঢাকা, ১২ অক্টোবরছবি: প্রথম আলো

দেশীয় তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো, টেলিকম সেবা সহজলভ্য করা, সমন্বিত ডেটা ব্যবস্থাপনাসহ বেশ কিছু সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছেন তথ্যপ্রযুক্তি ও টেলিকম খাত–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। এসব প্রস্তাবের মধ্যে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সুনির্দিষ্ট করে সরকারের কাছে পাঠানোর আহ্বানও জানানো হয়েছে।

আজ শনিবার রাজধানীর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে ‘বৈষম্যহীন উন্নয়নে প্রযুক্তির ব্যবহার: নতুন করে যাত্রা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় এসব বিষয় উঠে আসে। প্রযুক্তিভিত্তিক থিঙ্কট্যাংক টিপাপ (টেক ইন্ডাস্ট্রি পলিসি এডভোকেসি প্ল্যাটফর্ম) আয়োজিত এই সভায় খাত–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা অংশ নেন।

সভায় প্রযুক্তি উদ্যোক্তা আদর্শ প্রাণিসেবার ফিদা হক ও অবাক টেকনোলজির প্রধান দিদারুল ভূঁইয়া ২০টি প্রস্তাব তুলে ধরেন। উল্লেখযোগ্য প্রস্তাবগুলো হচ্ছে মোবাইল ডেটার দাম, কল রেট যৌক্তিকীকরণ ও ইন্টারনেট পরিকাঠামো পর্যালোচনা; স্মার্টফোনের ব্যবহার বৃদ্ধি; সরকারি ও জরুরি সেবায় টোল-ফ্রি ও ডেটা ফ্রি করা; সাইবার নিরাপত্তার পর্যালোচনা ও নিশ্চিতকরণ; ফ্রিল্যান্সারদের সমস্যা সমাধানে টাস্কফোর্স তৈরি ও পদক্ষেপ গ্রহণ; অনলাইন জুয়ার প্রসার ও অন্যান্য সাইবার অপরাধ ঠেকাতে সমন্বয়; প্রাতিষ্ঠানিক আইসিটি সার্ভিস রপ্তানি বৃদ্ধি; বিদেশি সফটওয়্যারের ব্যবহার ও নির্ভরশীলতা কমানো; জাতীয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই), ব্লকচেইন ও আইওটি কৌশল এবং রোডম্যাপ; সরকারি প্রযুক্তিসংক্রান্ত টেন্ডারিং সিস্টেম সংস্কার; আইসিটি বিভাগের স্কিল ডেভেলপমেন্ট কর্মসূচির ব্যাপক পরিবর্তন; সব ক্ষেত্রে ডিজিটাল বা ক্যাশলেস পেমেন্ট ও ট্রান্সফার প্রচলন; অ্যাপ মনিটাইজেশন সহজীকরণ; দেশীয় হার্ডওয়্যার শিল্প স্থাপনে সহায়তা নিশ্চিতকরণ।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী বলেন, যেসব প্রস্তাব এসেছে, সেগুলোর মধ্যে অগ্রাধিকার দিয়ে পাঠাতে হবে। কোনটা কত সময়ের মধ্যে করা সম্ভব, তা সুনির্দিষ্ট করে দিলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাজ করতে সুবিধা হবে। আশিক চৌধুরী জানান, সত্যিকারের ব্যবসায়ীদের সমন্বয়ে বিডাতে একটি জাতীয় পরামর্শক কাউন্সিল করা হবে।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসির) কমিশনার (স্পেকট্রাম) মাহমুদ হোসেন বলেন, মোবাইল ডেটার দাম, ভ্যাট-ট্যাক্স এবং এ খাতে মধ্যস্বত্ব ব্যবসার বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করতে হবে। এর মাধ্যমেই সমাধান উঠে আসবে।

বিল্ডকন লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা ও রবির সাবেক সিইও মাহতাব উদ্দিন আহমেদ বলেন, শুধু কর ব্যবস্থাপনা ছাড়াও মোবাইল ডেটার দাম বৃদ্ধির সঙ্গে আরও বিষয় জড়িত। এখানে বেশ কিছু লাইসেন্সধারী মধ্যস্বত্ব ব্যবসায়ী গোষ্ঠী রয়েছে। এগুলো নিয়ে ভাবতে হবে। টেলিকম খাতে ব্যবসা করতে ২৯ ধরনের লাইসেন্স নিতে হয়। এই জটিল প্রক্রিয়ার জন্য চাইলেও অনেকে বিনিয়োগ করতে চান না।

সেবা দেওয়া ও পাওয়া সহজ করতে একটি সমন্বিত ডেটা প্ল্যাটফর্ম তৈরি করার কথা বলেন টালিখাতার প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও শাহাদাত খান।

যেসব প্রস্তাব এসেছে, সেগুলোকে ব্যবসায়িক ও নাগরিকদের দিক থেকে আলাদা করার কথা বলেন তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ডিনেট ও আই সোশ্যালের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান নির্বাহী অনন্য রায়হান। তিনি প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের ওপরও জোর দেওয়ার আহ্বান জানান।

দেশীয় নীতির কারণে স্টার্টআপদের (উদ্যোক্তা) সিঙ্গাপুরে গিয়ে নিবন্ধন করতে হয় জানিয়ে ব্রেইন স্টেশন-২৩-এর সিইও রাইসুল কবির বিডার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

টিপাপ প্ল্যাটফর্মের সমন্বয়কারী ও বিডিজবসের প্রধান ফাহিম মাশরুরের সঞ্চালনায় গোলটেবিল আলোচনায় আরও বক্তব্য দেন টেলিকম বিশেষজ্ঞ নুরুল কবির, ব্র্যাক ব্যাংকের চিফ অপারেটিং অফিসার (সিওও) সাব্বির হোসেন, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কল সেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিংয়ের (বাক্কো) সভাপতি তানভীর ইব্রাহিম প্রমুখ।