এ সরকারকে বিদায় দিতে হবে: মঈন খান
এ দেশের ১৮ কোটি মানুষের ওপর একদলীয় স্বৈরাচারী সরকার চেপে বসেছে অভিযোগ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান বলেছেন, এই সরকারকে বিদায় দিতে হবে। তিনি বলেন, ‘আমরা রাজপথে নেমেছি। রাজপথে শান্তিপূর্ণ নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে অগণতান্ত্রিক সরকারকে বিদায় দিয়ে আমরা গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনব।’
বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আজ শুক্রবার বিকেলে রাজধানীতে এক বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা-পূর্ব সমাবেশে আবদুল মঈন খান এ কথা বলেন।
১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) প্রতিষ্ঠা করেন। আজ দলটির ৪৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। এ উপলক্ষে বিকেলে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার আয়োজন করে বিএনপি। শুক্রবার জুমার নামাজের আগে থেকেই খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে নয়াপল্টনে জড়ো হন বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। নানা রঙের টুপি মাথায়, গেঞ্জি গায়ে হাজারো নেতা-কর্মী মিছিল নিয়ে নয়াপল্টনে আসেন। অনেকে বাদ্যযন্ত্র নিয়ে, কেউ কেউ ঢাকঢোল পিটিয়ে শোভাযাত্রায় অংশ নেন। তাঁদের হাতে ছিল বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান, চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নামে ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড। শোভাযাত্রা শুরুর আগেই বিকেলের দিকে পূর্বে কাকরাইল মোড় থেকে শুরু করে নয়াপল্টন, ফকিরাপুল হয়ে আরামবাগ পর্যন্ত নেতা-কর্মীতে ছেয়ে যায়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে আবদুল মঈন খান বলেন, ‘আমাদের এক দফার আন্দোলনের মধ্যে আজ একটি বিশেষ দিন। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের প্রতিষ্ঠিত দল বিএনপির ৪৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ। আমাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে এক দফা আন্দোলন। এই আন্দোলনের মাধ্যমে এ দেশের ১৮ কোটি মানুষের ওপর যে একদলীয় বাকশালি স্বৈরাচারী সরকার চেপে বসেছে, তাদের বিদায় দিতে হবে।’
মঈন খান বলেন, ‘আওয়ামী লীগ বলে জিয়াউর রহমান সৈনিক ছিলেন। অবাক কাণ্ড, শহীদ জিয়া সৈনিক হয়েও বাংলাদেশের মানুষকে বহুদলীয় গণতন্ত্র ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। এ দেশের মানুষের হাতে মানুষের অধিকার, তাদের ভাতের-ভোটের অধিকার দিয়েছিলেন। আর আওয়ামী লীগ নিজেদের গণতন্ত্রের প্রতিভূ বলে দাবি করে, বাস্তবে তারা স্বৈরাচারের প্রতিভূ।’ তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ কোনো দিন গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেনি। আজকে তারা বাংলাদেশে অলিখিত বাকশাল কায়েম করে মানুষের ওপরে মামলা-হামলা, জেল-জুলুম, অত্যাচার-নির্যাতন, গুম-খুন দিয়ে ক্ষমতাকে দীর্ঘস্থায়ী করতে চায়। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ সেটা হতে দেবে না।
চলমান গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লড়াইয়ে দুটি বিষয়কে অন্তরায় হিসেবে উল্লেখ করেন স্থায়ী কমিটির আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। একটি হচ্ছে পুলিশ বাহিনী, আরেকটি বিচার বিভাগ।
এ প্রসঙ্গে গতকাল বিদায়ী প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর একটি বক্তব্যের উল্লেখ করেন আমীর খসরু। তিনি বলেন, ‘গতকাল বাংলাদেশের বিদায়ী প্রধান বিচারপতি বলেছেন, যদি বিচার বিভাগকে রাজনীতি মুক্ত করা না যায়, বাংলাদেশের অবস্থা ভয়াবহ হবে। যাওয়ার সময় বলেছেন, আসার পরে খেয়াল ছিল না। তবে তাঁর এই বার্তা সব বিচারপতি, সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য।’
আমীর খসরু আরও বলেন, ‘মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশের বিচার বিভাগকে, পুলিশ বিভাগকে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে, সরকারি কর্মকর্তাদের রাজনীতির ঊর্ধ্বে থাকার শপথ রয়েছে। বিদায়ী প্রধান বিচারপতি সেই শপথের কথা তিনি স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। আপনারা এটা মনে রাখবেন। আর মনে না রাখলে বাংলাদেশের মানুষ আপনাদের ছাড় দেবে না।’
ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী প্রমুখ।
সমাবেশ শেষে বিকেল সোয়া চারটায় নয়াপল্টন থেকে শোভাযাত্রা শুরু হয়। সেটি ফকিরাপুল, আরামবাগ, মতিঝিলের শাপলা চত্বর, হাটখোলা হয়ে টিকাটুলীর রাজধানী সুপার মার্কেটের সামনে গিয়ে শেষ হয়। শোভাযাত্রার আগে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে একটি দলীয় গানের উদ্বোধন করা হয়। এবারের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শোভাযাত্রায় নেতা-কর্মীদের উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয়।