পেট্রল-অকটেনে লিটারে ২৫ টাকা লাভ বিপিসির
জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পর প্রতি লিটার অকটেনে ২৫ টাকা লাভ করছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। আর প্রতি লিটার পেট্রলে এর চেয়ে ৫ টাকা কমবেশি লাভ হতে পারে। ডিজেলে এখনো লোকসান হচ্ছে লিটারপ্রতি ৬ টাকা। গত মাসের মতো একই পরিমাণ বিক্রি হলে ডিজেল ও অকটেন থেকে এ মাসে ২০৫ কোটি টাকা মুনাফা করতে পারে বিপিসি।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আজ বুধবার ঢাকার কার্যালয়ে এসব তথ্য জানান বিপিসির চেয়ারম্যান এ বি এম আজাদ। তিনি বলেন, এটি প্রাক্কলিত হিসাব, আগস্টের প্রথম আট দিনের তথ্যের ভিত্তিতে এটি করা হয়েছে। দেশে মার্কিন ডলারের আনুষ্ঠানিক বিনিময় হার ধরলে এ লাভ পাবে বিপিসি। আর খোলাবাজারের বিনিময় হার ধরলে এ মাসে ৩৯ কোটি টাকা লোকসান হবে। বাজারের বিনিময় হার ধরেও এখন কিছু কিছু ঋণপত্র খুলতে হচ্ছে বিপিসির।
জ্বালানি তেলে করের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে বিপিসির চেয়ারম্যান বলেন, প্রতি লিটার ডিজেলে এখন বিভিন্ন ধরনের কর দিতে হয় ২০ টাকা ৭০ পয়সা। আর অকটেনে দিতে হয় ২৩ টাকা ৫১ পয়সা।
বিপিসির মুনাফা, এফডিআর (স্থায়ী আমানত) নিয়ে বিভ্রান্তির জবাব দিতে আজ এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বিপিসি। এতে লিখিত বক্তব্যে বিপিসির লাভ-লোকসানের চিত্র তুলে ধরা হয়। এক সপ্তাহ ধরে বিশ্ববাজের ডিজেলের দাম কমার চিত্রও তুলে ধরেন বিপিসির চেয়ারম্যান।
দেশে উৎপাদিত পেট্রল ও অকটেনে মুনাফা করার বিষয়ে বিপিসি চেয়ারম্যান বলেন, পেট্রল-অকটেনের কাঁচামাল হিসেবে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি করতে হয়। কিন্তু বছরে বিপিসির বিক্রি করা জ্বালানি তেলের মধ্যে ৭০ শতাংশের বেশি ডিজেল। তাই ভারসাম্য রক্ষায় অকটেনের দাম বাড়ানো হয়েছে। পেট্রলের দাম বেশি কমানো হলে অকটেনের সঙ্গে মিশ্রণ করতে পারে। তাই পেট্রলের দামও অকটেনের কাছাকাছি রাখতে হয়।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ১৯৯৯-২০০০ অর্থবছর থেকে ২০১৩-১৪ পর্যন্ত বিপিসি লোকসান করেছে ৫৩ হাজার ৫ কোটি টাকা। সরকার ৪৪ হাজার ৮৭৭ কোটি টাকা ওই সময় বিপিসিকে প্রদান করে। এরপরও বিপিসির ঘাটতি থেকে যায় ৮ হাজার ১২৭ কোটি টাকা। এরপর ২০১৪-১৫ থেকে ২০২০-২১ পর্যন্ত বিপিসি মুনাফা করে প্রায় ৪২ হাজার ৯৯৩ কোটি টাকা। উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যয়, সরকারকে লভ্যাংশ ও উদ্বৃত তহবিল হিসেবে প্রদান, এনবিআরের বকেয়া ও মূলধনি বিনিয়োগ খাতে খরচ হয় ২০ হাজার ১৮৮ কোটি টাকা। আর সর্বশেষ ২০২১-২২ অর্থবছরে বিপিসি লোকসান করেছে ৫ হাজার ৯১০ কোটি টাকা।
বিপিসির বর্তমান তহবিল সম্পর্কে বলা হয়, বিভিন্ন প্রকল্পের নামে টাকা এফডিআর করে রাখে বিপিসি। গত ছয় মাসে এসব এফডিআর ভেঙে তেলের আমদানি খরচ মেটাতে হয়েছে। এতে ৭ আগস্ট পর্যন্ত বিপিসির তহবিলে জমা আছে সব মিলে ১৯ হাজার ৮৮২ কোটি টাকা। এর মধ্যে চলতি হিসাবে আছে মাত্র ৭ হাজার ৭৫ কোটি টাকা। ফরেন কারেন্সি ও প্রকল্পের সিডি হিসাবে আছে ২৮৬ কোটি টাকা, শেয়ার অফলোড বা রিজার্ভ ফান্ডে আছে ১ হাজার ৩৪২ কোটি টাকা, যা খরচ করার সুযোগ নেই। এ ছাড়া উন্নয়ন তহবিলে আছে ৩৭২ কোটি টাকা, অবচয় তহবিলে আছে ৮৬ কোটি টাকা ও বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের নামে জমা আছে ১০ হাজার ৭১৯ কোটি টাকা।
বিপিসির চেয়ারম্যান বলেন, চলতি হিসাবে দুই মাসের তেল কেনার টাকা রাখতে হয়।
এতে ২০ হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন। এটি না থাকায় ইতিমধ্যে প্রকল্পের এফডিআর থেকে আরও ৪ হাজার ৭০০ কোটি টাকা নগদায়ন করতে বলা হয়েছে। গত বছরের জুলাই থেকে এখন পর্যন্ত মোট ১৩ হাজার ২৬৫ কোটি টাকা এফডিআর থেকে নগদায়ন করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
বিপিসি জানায়, মূল্য সমন্বয়ের কারণে বিপিসির আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধি পেলে পুনরায় বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে প্রয়োজনীয় অর্থ সংস্থান করা যাবে। বর্তমানে ১১টি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এসব প্রকল্প বিপিসির জ্বালানি খরচ সাশ্রয়ে ভূমিকা রাখবে।