শান্তিরক্ষী বাহিনী প্রসঙ্গে
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে: শাহরিয়ার আলম
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। তিনি বলেন, তাদের (এইচআরডব্লিউ) ওপর দায়িত্ব বিশ্বের মানবাধিকার নিয়ে কাজ করার। কিন্তু তারা কোনো এক অদ্ভূত কারণে যুদ্ধাপরাধের বিচারের সময় থেকে ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।
আজ রোববার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন সুগন্ধায় ডিপ্লোমেটিক করেসপনডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের (ডিক্যাব) উদ্যোগে আয়োজিত ‘ডিক্যাব টক’–এ এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল (শান্তিরক্ষীপ্রধান) জাঁ পিয়ের লাক্রোয়া দুই দিনের সফরে আজ ঢাকা এসেছেন। তাঁর এই সফর সামনে রেখে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীতে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের নিয়োগের ক্ষেত্রে মানবাধিকারসংক্রান্ত বিষয় যাচাই–বাছাইয়ের আহ্বান জানিয়ে ১২ জুন বিবৃতি দিয়েছিল এইচআরডব্লিউ। গত শুক্রবার অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালও এ নিয়ে বিবৃতি দেয়। এ ছাড়া বাংলাদেশের সামরিক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা যাতে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণ করতে না পারেন, সে জন্য নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার জন্য ব্যবস্থা নিতে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে গত ২৫ মে চিঠি দেন ছয়জন কংগ্রেস সদস্য।
ডিক্যাব টকে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর কাছে প্রশ্ন ছিল সফররত জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারির সঙ্গে এসব বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না। জবাবে শাহরিয়ার আলম বলেন, এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনী ১০ বছর ধরে কাজ করছে। যেখানে ১৬৯ জন জীবন দিয়েছেন। এই অর্জনকে যাঁরা খাটো করে দেখছেন, ব্যর্থ করার চেষ্টা চালাচ্ছেন, তাঁরা বাংলাদেশের বন্ধু নন, শত্রু। তাঁরা কংগ্রেসম্যান, নাগরিক, রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী যে-ই হোন, তাঁরা শত্রু। তাঁদের যাঁরা টাকা দিয়ে প্রভাবিত করেছেন, তাঁরাও যে বাংলাদেশের শত্রু, এটা চেনার সময় এসেছে। এটা নিয়ে প্রতিক্রিয়া দেওয়ার কোনো কারণ নেই। এগুলো অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ।
এ প্রসঙ্গেই হিউম্যান রাইটস ওয়াচ নিয়ে ওই মন্তব্য করেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে ডেকে কথাও বলা হয়েছে জানিয়ে শাহরিয়ার আলম বলেন, তাদের বলা হয়েছে, কোনো প্রতিবেদন প্রকাশ করার আগে যেন রিভিউ করতে দেওয়া হয়, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হয়। কিন্তু তারা তা করেনি। এরপর থেকে হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে ‘এনগেজ’ না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্টকে কংগ্রেস সদস্যদের চিঠির দিকে ইঙ্গিত করে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, সামনের নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসবে, এ ধরনের চিঠির সংখ্যা বাড়তে থাকবে। তাঁর নিজের কাছেও দুটো চিঠির ড্রাফট আছে। তিনি অভিযোগ করেন, বিএনপির লোকজন টাকা নিয়ে চিঠির ড্রাফট নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন ইউরোপ–আমেরিকার বিভিন্ন রাজনীতিবিদদের কাছে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, এ ধরনের চিঠি কোনো রাষ্ট্রের অবস্থান না। যাঁরা চিঠি দিয়েছে, তাঁরা বাংলাদেশকে ভালোভাবে জানে কি না, সে ব্যাপারে সংশয় রয়েছে।
আরেক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, লবিস্ট বা পিআর ফার্মের পেছনে জনগণের করের টাকা ব্যয় করতে চান না। এখন ‘নেলসন মলিন’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। এ ছাড়া বিজিআর নামে পত্রিকায় আর্টিকেল লেখার জন্য একটি প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাদের চুক্তি নবায়ন করা হয়নি।
ডিক্যাবের সাধারণ সম্পাদক ইমরুল কায়েসের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এ আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি রেজাউল করিম লোটাস।