সহায়তাযোগ্য মানুষ কমিয়ে তহবিলের ঘাটতি মেটাতে মনোযোগ

জেআরপির খসড়া ২০২৪-এ বলা হয়েছে, ১৬ লাখের মানুষের চাহিদার বিপরীতে ১৩ লাখ মানুষকে সহায়তার জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। চলতি বছরের চাহিদা ধরা হয়েছে ৮৭ কোটি ২৭ লাখ ডলার।

১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গার বোঝা বাংলাদেশের ওপর চেপে আছেফাইল ছবি: রয়টার্স

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে ২০১৭ সালে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের পর থেকে জাতিসংঘ যৌথ সাড়াদান পরিকল্পনা বা জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যান (জেআরপি) তৈরি করে আসছে। তবে এ সংকট দীর্ঘায়িত হওয়ায় তহবিল সংগ্রহ কমে আসছে। এই প্রেক্ষাপটে রোহিঙ্গা ও কক্সবাজারের স্থানীয় জনগোষ্ঠী মিলিয়ে ১৬ লাখ মানুষের মানবিক সহায়তার চাহিদা থাকলেও ১৩ লাখের জন্য সহায়তার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হচ্ছে। ২০২৪ সালের জেআরপির খসড়া থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

চলতি বছরে স্থানীয় বাসিন্দা ও রোহিঙ্গাদের জন্য চাহিদা ধরা হচ্ছে ৮৭ কোটি ২৭ লাখ ডলার। ২০২৪ সালে জেআরপিতে অগ্রাধিকার রয়েছে রোহিঙ্গাদের পুষ্টি নিশ্চিত, সম্মানজনক আশ্রয়, স্বাস্থ্য সেবা এবং বিশুদ্ধ পানি, পয়োনিষ্কাশন ও স্যানিটেশন (ওয়াশ) সেবা। গত বছর (২০২৩) স্থানীয় বাসিন্দা ও রোহিঙ্গাদের জন্য চাহিদা ধরা হয়েছিল ৮৭ কোটি ৫৯ লাখ ডলার। গত বছর রোহিঙ্গা ও শিবিরের আশপাশের স্থানীয়সহ মোট ১৫ লাখ মানুষের চাহিদার বিপরীতে ১৫ লাখকেই মানবিক সহায়তার আওতায় রাখা হয়েছিল।

বাংলাদেশে রোহিঙ্গা আশ্রয় নেওয়ার পর ২০২৩ সালে আন্তর্জাতিক সহায়তা সবচেয়ে কম এসেছিল, যা ছিল জেআরপির চাহিদার মাত্র ৫০ শতাংশ বা ৪৩ কোটি ৮০ লাখ ডলার। আর পরিকল্পনার বাইরে ৬ কোটি ৮৬ লাখ ডলার অর্থ সহায়তা পেয়েছে রোহিঙ্গারা। ২০২২ সালে সহায়তা এসেছিল চাহিদার প্রায় ৬৯ শতাংশ। এর আগে ২০১৭ সালে চাহিদার ৭৩ শতাংশ, ২০১৮ সালে ৭২ শতাংশ, ২০১৯ সালে ৭৫ শতাংশ, ২০২০ সালে ৫৯ শতাংশ এবং ২০২১ সালে চাহিদার ৭৩ শতাংশ অর্থ সহযোগিতা পেয়েছিল রোহিঙ্গারা।
সর্বশেষ ২০২২ সালের জেআরপিতে মানবিক সহায়তাকারী সংস্থাগুলোর অন্যতম প্রধান অগ্রাধিকার ছিল স্থানীয় ও রোহিঙ্গাদের মধ্যে সংহতি ও সুসম্পর্ক স্থাপন। এ জন্য সে বছর মানবিক সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠানগুলো রোহিঙ্গা ও স্থানীয়দের মধ্যে সংঘাত ঠেকাতে কমিউনিটি সুরক্ষা ফোরাম, কমিউনিটি ভিত্তিক সংলাপ এবং আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের মধ্যে যোগাযোগ শক্তিশালী করতে কাজ করেছে। ২০১৭ পর থেকেই রোহিঙ্গা ও স্থানীয়দের মধ্যে সংঘাতের আশঙ্কা করে আসছে জাতিসংঘ। প্রতিবছরই ক্যাম্পে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের অপরাধ প্রবণতা বেড়েই চলেছে। আর ক্রমেই অপরাধের মাত্রা ও ধরন পরিবর্তন হচ্ছে। তবে এ পরিস্থিতিতে জেআরপি খসড়ায় স্থানীয় ও রোহিঙ্গাদের মধ্যে সংহতি ও সুসম্পর্ক স্থাপন অগ্রাধিকারে নেই। আর ২০২৩ সালে বিষয়টি অগ্রাধিকারের তালিকা থেকে বাদ পরে।

গত বছর তহবিল কমে আসায় রোহিঙ্গা ও স্থানীয়দের মধ্যে সংহতি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে সরকার। জাতিসংঘ চাইছে প্রকল্পগুলো সাশ্রয়ী ভাবে পরিচালন করতে। সেই সঙ্গে রোহিঙ্গারা যাতে নিজ জীবিকা নিজেরাই জোগাড় করতে পারে সে ধরনের দক্ষতা বাড়াতে।

জাতিসংঘ বলছে, খাদ্য সহায়তা কমে গেলে রোহিঙ্গারা আরও মরিয়া হয়ে উঠবে। যা ক্যাম্পগুলোতে আরও সহিংসতা এবং অস্থিরতা বাড়াবে। মানবাধিকার রক্ষার উদ্বেগের দিকে নিয়ে যেতে পারে। মানবপাচারের শিকার হওয়ার উচ্চতর ঝুঁকি রয়েছে রোহিঙ্গারা, বিশেষ করে শিশু এবং মেয়েরা। এতে করে গত বছরের মতো সামনের দিনগুলোতে সমুদ্রে আরও রোহিঙ্গা বোঝাই নৌকা পাওয়ার আশঙ্কা করছে সংস্থাটি।