ত্রাণ নিয়ে বন্যার্তদের কাছে যাওয়া হলো না চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ফাহিমের

বন্যার্তদের জন্য ত্রাণ নিয়ে রওনা হওয়ার আগে ত্রাণবাহী ট্রাকের পাশে ফাহিম আহমদ। ২৬ আগস্টছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রাম থেকে নোয়াখালীতে বন্যার্তদের জন্য ত্রাণ নিয়ে যাওয়ার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফাহিম আহমদ (পলাশ) মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। তিনি পরিসংখ্যান বিভাগের স্নাতকোত্তরের ছাত্র ছিলেন।

গত ২৬ আগস্ট দিবাগত রাতে নোয়াখালী যাওয়ার পথে পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থীদের ত্রাণবাহী ট্রাক দুর্ঘটনার শিকার হয়। এতে ওই বিভাগের তিন ছাত্র আহত হয়েছিলেন। আজ চিকিৎসাধীন অবস্থায় ফাহিমের মৃত্যু হয়।

ফাহিমের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের সভাপতি রোকনুজ্জামান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আজ ভোর ছয়টার দিকে ফাহিমের মৃত্যু হয়েছে। দুর্ঘটনার পর থেকেই পলাশ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। পরে অবস্থার অবনতি হলে গত সোমবার রাতে তাঁকে রাজধানীর একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।’

রোকনুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ফাহিমের বাড়ি দিনাজপুর। তাঁর বাবা পেশায় দিনমজুর। তিন ভাইয়ের মধ্যে তিনি সবার বড় ছিলেন। একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া সন্তান হারিয়ে দিশাহারা তাঁর পরিবার। মেধাবী ছাত্র ফাহিমের তৃতীয় বর্ষে সিজিপিএ ছিল ৩ দশমিক ৭১।

পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থীদের সূত্রে জানা যায়, ওই বিভাগের শিক্ষক–শিক্ষার্থীরা মিলে বন্যার্তদের জন্য তহবিল সংগ্রহ করেছিলেন। এই তহবিল দিয়ে তাঁরা প্রায় ১৩৫টি পরিবারের জন্য শুকনা খাবার আর পানি কেনেন। পরে ২৬ আগস্ট দিবাগত রাত তিনটার দিকে ট্রাকে করে ত্রাণসামগ্রী নিয়ে নগরের দুই নম্বর গেট এলাকা থেকে তাঁরা নোয়াখালীর উদ্দেশে রওনা দেন।

ট্রাকে ১০ জন শিক্ষার্থী ছিলেন। পরে মিরসরাইয়ের বারইয়ারহাট এলাকায় পৌঁছলে দাঁড়িয়ে থাকা একটি কাভার্ড ভ্যানের সঙ্গে তাঁদের ট্রাকের ধাক্কা লাগে। এতে তিনজন আহত হন। ট্রাকচালকের ভুলে এ ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। তাঁদের অভিযোগ, চালক ট্রাক চালানো অবস্থায় ঘুমিয়ে পড়েছিলেন।

আহত অন্য দুই শিক্ষার্থী হলেন, পরিসংখ্যান বিভাগের স্নাতকোত্তরের সাদমান হায়দার, একই বিভাগের প্রথম বর্ষের কায়কোবাদ। এর মধ্যে সাদমানের বাঁ পা ভেঙে গেছে। তিনি এখনো চিকিৎসাধীন। আর কায়কোবাদের অবস্থা গুরুতর ছিল না বলে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাঁকে রাতেই ছেড়ে দেওয়া হয়।

জানতে চাইলে আহত সাদমান হায়দার প্রথম আলোকে বলেন, তিনি ও ফাহিম চালকের পাশের আসনে ছিলেন। দুর্ঘটনায় দুজনেরই পা ভেঙেছে। চালকের কিছু হয়নি। চালকের ভুলের কারণে এ ঘটনা ঘটেছে বলে মনে করেন তিনি। দুর্ঘটনার কারণে তাঁরা আর ত্রাণ দিতে যেতে পারেননি।