চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (চুয়েট) স্নাতকোত্তর শ্রেণির ভর্তি ফি এক লাফে প্রায় চার গুণ বাড়ানো হয়েছে। হঠাৎ করে ভর্তি ফি বাড়ানোর কারণে ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীরা বিপাকে পড়েছেন। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১৭ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে স্নাতকোত্তর শ্রেণির ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। তখন ভর্তি ফি ছিল ২ হাজার ৭০০ টাকা। গত ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ভর্তির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে। এতে ভর্তি ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ১০ হাজার ৬০০ টাকা করে, যা আগের তুলনায় প্রায় চার গুণ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও কৌশল বিভাগ থেকে সদ্য স্নাতক সম্পন্ন করেছেন ইশতিয়াক আহমেদ। স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে ভর্তির অপেক্ষায় রয়েছেন তিনি। ইশতিয়াক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আগের শিক্ষাবর্ষের ফি অনুযায়ী আমাদের প্রস্তুতি ছিল। কিন্তু ভর্তি ফি এক লাফে চার গুণ বাড়ানোর কারণে আমরা অনেকেই ভর্তি হইনি।’
ইশতিয়াক আরও বলেন, ‘স্নাতক পাস করে শিক্ষার্থীরা সবাই চাকরির প্রস্তুতি নিচ্ছে। মেসের ভাড়া, খাওয়াদাওয়ার খরচ, বিভিন্ন চাকরিতে আবেদন ফি ইত্যাদি সামলাতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে এসব শিক্ষার্থীর। এর মধ্যে এত টাকা দিয়ে ভর্তি হওয়া অনেক শিক্ষার্থীর জন্যই কঠিন।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অনেককে স্নাতকোত্তরের ভর্তি ফি বাড়ানোর বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। শিক্ষার্থীরা জানান, হঠাৎ করে ভর্তি ফি চার গুণ বাড়ানোর কারণে দরিদ্র শিক্ষার্থীরা বেশি ভোগান্তিতে পড়বেন। ভর্তি ফি কমানোর জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বরাবর লিখিত আবেদন করা হয়েছে।
পুরকৌশল বিভাগে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ভর্তি-ইচ্ছুক আরেক শিক্ষার্থী অরিত্র আরহান প্রথম আলোকে বলেন, ভর্তি ফি চার গুণ বাড়ানো হলেও চুয়েটে স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য কোনো আবাসিক হল নেই। অন্য সুযোগ-সুবিধাও অপর্যাপ্ত। ফলে লাইব্রেরি, ল্যাব, অ্যাথলেটিকস, ইউনিয়ন ফি—এর যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার শেখ মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, প্রশাসন ভর্তি ফি পুনরায় নির্ধারণের জন্য একটি কমিটি করে দিয়েছিল। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি ফি পর্যালোচনা করে কমিটি প্রতিবেদন জমা দিলে এর আলোকে একাডেমিক কাউন্সিলের ১৫০তম সভায় নতুন ভর্তি ফি নির্ধারণ করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ও আর্থিক কার্যক্রমের দায়িত্বে রয়েছেন পুর ও পরিবেশ প্রকৌশল বিভাগের ডিন সুদীপ কুমার পাল। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের বলেছি—যেসব ফি অযৌক্তিক বলে তাদের মনে হচ্ছে, তা সুনির্দিষ্ট করে লিখে আবেদন করতে। বিষয়টি একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় উপস্থাপন করা হবে। তবে স্থায়ী উপাচার্য না থাকায় আমরা একাডেমিক কাউন্সিল করতে পারছি না বলে আপাতত এর সমাধান করা যাচ্ছে না। ভর্তি ফি কমানোর কোনো সিদ্ধান্ত হলে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের বাড়তি ফি পরবর্তী সেমিস্টারের সঙ্গে সমন্বয় করা যাবে।’