সাক্ষাৎকার
সর্বজনীন হাত ধোয়া চর্চায় প্রবহমান পানি দরকার
করোনাকালে হাত ধোয়ার অভ্যাসে ইতিবাচক পরিবর্তন এলেও তা টেকসই হয়নি। জাতীয় উন্নয়নের স্বার্থে সর্বজনীন হাত ধোয়ার চর্চা নিশ্চিত করা দরকার। হাত ধোয়া দিবসে এসব বিষয় নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন আন্তর্জাতিক সংস্থা ওয়াটারএইডের দক্ষিণ এশীয় প্রধান খায়রুল ইসলাম। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন পার্থ শঙ্কর সাহা।
প্রশ্ন :
প্রথম আলো: করোনার প্রাদুর্ভাব শুরুর পর হাত ধোয়ার ক্ষেত্রে উৎসাহ দেখা গিয়েছিল। এখন তা অনেকটা কমে গেছে। আপনার পর্যবেক্ষণ কী বলে?
খায়রুল ইসলাম: ২০১৮ সালের সর্বশেষ জাতীয় স্বাস্থ্যবিধি জরিপে দেখা যায়, শৌচাগারের ৩০ ফুটের মধ্যে ৬১ ভাগ ক্ষেত্রে পানি ও সাবানের বন্দোবস্ত আছে। হাত ধোয়ার হার বিবেচনায় এটিই পরোক্ষ সূচক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এ চিত্র উপমহাদেশের অন্য দুই দেশ পাকিস্তান ও নেপালের চেয়ে কম। তবে করোনার সংক্রমণ শুরুর পর হাত ধোয়ার ক্ষেত্রে উল্লম্ফন দেখা দেয়। তবে করোনার সংক্রমণ কমে যাওয়ায় এ অভ্যাসও কমে গেছে। হাত ধোয়ার অভ্যাস করোনাপূর্ব পর্যায়ে চলে গেছে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ আছে। এ নিয়ে সরকারি জরিপ খুব জরুরি।
প্রশ্ন :
প্রথম আলো: সাধারণভাবে দেশের মানুষের হাত ধোয়ার অভ্যাসটা কোন পর্যায়ে আছে?
খায়রুল ইসলাম: গভীর পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, আমাদের দেশে খাবার আগে পানি দিয়ে হাত ধোয়ার অভ্যাস বেশির ভাগ মানুষের আছে। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মানুষ সাবান দিয়ে হাত ধোয় খাওয়ার পরে। অর্থাৎ যখন দরকার, তখন সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার প্রবণতা কম। আবার দুই হাত না ধুয়ে একটি হাত ধোয়ার প্রবণতাও দেখা যায়। বিশেষ করে টয়লেট থেকে আসার পর অনেকে শুধু বাঁ হাতটি ধুয়ে ফেলেন। আমাদের এখানে হাত ধোয়ার সঠিক চর্চা দেখাতে যেসব ছবি বা ভিডিও প্রদর্শন করা হয়, সেখানে প্রবহমান পানির উপস্থিতি থাকে। বাস্তবচিত্র কিন্তু ভিন্ন। দেশে মাত্র ১৫ শতাংশ মানুষ প্রবহমান পানি পায়। এ অবস্থা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বনিম্ন। এমনকি আফগানিস্তানের চেয়েও এই হার কম। হাত ধোয়ার চর্চা সর্বজনীন করতে হলে প্রবহমান পানির সংস্থান করতে হবে।
প্রশ্ন :
প্রথম আলো: হাত ধোয়ার অভ্যাস বজায় রাখা কেন গুরুত্বপূর্ণ?
খায়রুল ইসলাম: পানিবাহিত নানা সংক্রামক ব্যাধির বিস্তার রোধে হাত ধোয়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। পুষ্টির প্রসারে হাত ধোয়ার গুরুত্ব আছে। হাত অপরিচ্ছন্ন থাকলে রোগ ছড়ায়। বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থে যে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কথা বলা আছে, এর কারণ হলো এর সঙ্গে স্বাস্থ্য ভালো থাকার বিষয়টি জড়িত। এ ছাড়া স্বাস্থ্যকর্মীদের ক্ষেত্রে হাত ধোয়ার একটি বিশেষ গুরুত্ব আছে। চলমান করোনা মহামারিতে জীবাণুর অ্যান্টিবায়োটিক–প্রতিরোধী হওয়ার একটি বড় ঝুঁকি আছে বলে মনে করা হয়। এর থেকে সুরক্ষায় হাত ধোয়ার গুরুত্ব যথেষ্ট।
প্রশ্ন :
প্রথম আলো: হাত ধোয়ার চর্চা প্রসারের ক্ষেত্রে সরকারি নীতি কতটুকু সহায়ক?
খায়রুল ইসলাম: হাত ধোয়ার ক্ষেত্রে সাবানের জোগান মানুষ নিজেরাই করে। কিন্তু পানির ক্ষেত্রে সরকারি পরিষেবার ওপরই নির্ভর করতে হয়। আমরা শহরের মানুষের জন্য প্রবহমান বা পাইপের পানির কথা ভাবি। গ্রামের প্রসঙ্গ এলেই টিউবওয়েলের কথা বিবেচনা করি। ধরেই নিই, গ্রামের মানুষ দূরে গিয়ে টিউবওয়েলের পানি আনবেন। ভারতের বর্তমান সরকার এসব দিক বিবেচনা করে ‘হর ঘর নলকা জল’ স্লোগান দিয়ে ‘জলজীবন মিশন’ নামের একটি কর্মসূচি চালু করেছে। যেখানে গ্রাম-শহরের সব মানুষ ঘরে পানি পাবেন। এ এক বড় কর্মসূচি। আমাদের স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে কৌশলপত্র আছে। কিন্তু সব মানুষের জন্য প্রবহমান পানির নিশ্চয়তার বিষয়টি নিয়ে এখনো আলোচনা কম। হাত ধোয়াকে সর্বজনীন করার ক্ষেত্রে অবকাঠামো কম। প্রতি ঘরে পাইপের মাধ্যমে পানি সরবরাহ সরকারের রাজনৈতিক অ্যাজেন্ডার অংশ হতে পারে।
প্রশ্ন :
প্রথম আলো: হাত ধোয়ার চর্চা বাড়াতে কী কী করা উচিত?
খায়রুল ইসলাম: প্রথমত, মহামারির সময় হাত ধোয়ার যে অভ্যাস গড়ে উঠেছিল, তা বজায় রাখা প্রথম কাজ বলে আমার মনে হয়। মানুষকে সচেতন করতে প্রচার চালিয়ে যেতে হবে। দ্বিতীয়ত, হাত ধোয়ার জন্য দামি সাবানের দরকার নেই। এর জন্য সাধারণ গায়ে মাখার সাবান, কাপড় কাচার সাবান এমনকি গুঁড়া সাবানও যথেষ্ট। এ বিষয় প্রচারে আনতে হবে। তৃতীয়ত, ভালোভাবে হাত ধুতে হলে প্রবহমান পানির ব্যবস্থা করা দরকার। পাশাপাশি হাত ধোয়ার অগ্রগতি দেখতে নিয়মিত বিরতিতে জরিপের কাজ করতে হবে।