দেশের ৩৪ জেলায় নিপাহ শনাক্ত হয়েছে। এ বছর আক্রান্ত হয়েছেন পাঁচজন, তাঁদের সবাই মারা গেছেন। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, মায়ের দুধের মাধ্যমেও নিপাহ সংক্রমণ ঘটতে পারে।
আজ বৃহস্পতিবার রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এক মতবিনিময় সভায় এই তথ্য জানানো হয়। গণমাধ্যম কীভাবে কাঁচা খেজুরের রস খাওয়ার বিরুদ্ধে জনমত গঠন ও জনসচেতনতা গড়ে তুলতে পারে, সেই বিষয় সামনে রেখে মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। এতে সাংবাদিক ছাড়াও সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের গবেষক ও বিজ্ঞানী, সরকারি একাধিক হাসপাতালের চিকিৎসক ও জনস্বাস্থ্যবিদেরা অংশ নেন।
মূল উপস্থাপনায় আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক তাহমিনা শিরীন বলেন, এ বছর নিপাহ ভাইরাসে চার জেলায় (খুলনা, শরীয়তপুর, মানিকগঞ্জ ও নওগাঁ) পাঁচজন আক্রান্ত হয়েছেন, পাঁচজনই মারা গেছেন। এ নিয়ে দেশে ২০০১ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৩৪৩ জন আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৭১ শতাংশ মারা গেছে।
নিপাহ ভাইরাস বহন করে বাদুড়। বাদুড় খেজুরের রস খেলে সেই ভাইরাস যায় রসে। সেই কাঁচা রস খেলে মানুষ নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়। বিজ্ঞানীদের পক্ষ থেকে ১০ বছর ধরে এ কথা গণমাধ্যমকে জানানোর চেষ্টা হয়েছে। অনুষ্ঠানে দেখানো হয়, প্রথম সারির গণমাধ্যমগুলো খেজুর রসের উৎসবের খবর প্রচার করে। এটা বন্ধ হওয়া জরুরি।
গত বছর একজন দুগ্ধদানকারী মা নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হন। পরে তাঁর কোলের শিশুও আক্রান্ত হয়। শিশুটি মারা যায়। তাহমিনা শিরীন বলেন, ‘মায়ের দুধের মাধ্যমে নিপাহ ছড়ায়, এটা প্রথম বাংলাদেশেই ধরা পড়ল। এই নজির অন্য কোনো দেশ থেকে পাওয়া যায়নি।’
অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) বিজ্ঞানী সৈয়দ মইনুদ্দিন সাত্তার বলেন, চারটি প্রতিষ্ঠান নিপাহ প্রতিরোধে টিকা তৈরির গবেষণা করছে। যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড গবেষকদের একটি টিকার দ্বিতীয় ধাপের ট্রায়াল আগামী বছর বাংলাদেশে হওয়ার কথা আছে। ২০২৭ থেকে ২০২৯ সালের মধ্যে বিশ্বের মানুষ নিপাহর একটি টিকা পাবে বলে আশা করছেন বিজ্ঞানী ও গবেষকেরা।
অনেক কারণেই মানুষের জ্বর হয়। কোন জ্বর নিপাহ ভাইরাসের কারণে হচ্ছে, এটা বোঝার উপায় কী?—এ প্রসঙ্গে তাহমিনা শিরীন বলে, কোনো ব্যক্তির জ্বর আছে এবং তার যদি খেজুরের কাঁচার রস খাওয়ার ইতিহাস থাকে, তাহলে নিপাহ ভাইরাসের সংক্রমণ বলে অনুমান করা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে কোনো ঝুঁকি না নিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। যদিও এর সুনির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই। তবে সহায়ক চিকিৎসা নিতে হবে।
নিপাহ আক্রান্ত হওয়ার পর বেঁচে থাকা ৫৫ জন রোগীর ওপর নজর রাখছে আইইডিসিআর। নিপাহর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব জানার জন্য এই নজরদারি। এতে দেখা গেছে, কিছু মানুষ স্নায়বিক সমস্যায় ভোগেন।
বাংলাদেশে মানুষ থেকে মানুষে নিপাহ ভাইরাস ছড়ানোর ইতিহাস আছে। বাদুড়ে খাওয়া ফল থেকে নিপাহ ছড়ানোর ইতিহাস বাংলাদেশে নেই, তবে অন্য দেশে আছে।
করণীয় বিষয়ে বিজ্ঞানী, গবেষক, সাংবাদিকেরা বলেন, খেজুরের কাঁচা রস খাওয়া বন্ধ করতে হবে। কোনো উৎসবে এই রস ব্যবহার করা যাবে না। রসে সমস্যা, গুড়ে সমস্যা নেই, এই কথা ছড়াতে হবে। এ ব্যাপারে কোনো সরকারি প্রজ্ঞাপন জারি করা যায় কি না, তার সম্ভাব্যতা নিয়ে কাজ করতে হবে।