রিভিউ নিষ্পত্তির আগে শুনানি সমীচীন নয়, শুনানিতে জামায়াতের আইনজীবী

হাইকোর্টফাইল ছবি

সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল ঘোষণার রায় পুর্নবিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে করা আবেদন নিষ্পত্তির আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলোপসহ বেশ কিছু বিষয়ে আনা পঞ্চদশ সংশোধনী প্রশ্নে রুল শুনানি সমীচীন নয়।

বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে আজ রোববার এই মত তুলে ধরেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। এর পরিপ্রেক্ষিতে আদালত শুনানি মুলতবি করে আগামী বুধবার পরবর্তী দিন ধার্য করেছেন।

এ সময় রিট আবেদনকারী পক্ষ ও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীর উদ্দেশে আদালত বলেন, পঞ্চদশ সংশোধনী নিয়ে শুনানি সামনের দিকে এগোবেন নাকি ত্রয়োদশ সংশোধনী (তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে রিভিউ) আপাতত ছেড়ে দিয়ে এগোবেন, নিজেরা বসে আলোচনা করেন। নিজেরা বসে কথা বলে সিদ্ধান্ত জানাবেন।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে পঞ্চদশ সংশোধনী আইন ২০১১ সালের ৩০ জুন জাতীয় সংসদে পাস হয়। ২০১১ সালের ৩ জুলাই এ-সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ করা হয়। পঞ্চদশ সংশোধনী আইন চ্যালেঞ্জ করে গত ১৮ আগস্ট শাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তি রিটটি করেন। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট ১৯ আগস্ট রুল দেন। রুলে পঞ্চদশ সংশোধনী আইন কেন সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। এই রুলের ওপর গত ৩০ অক্টোবর, ৬ নভেম্বর ও ৭ নভেম্বর শুনানি হয়। এর আগে রুলে ইন্টারভেনার (আদালতকে সহায়তা করতে) হিসেবে বিএনপি, গণফোরাম, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, সংস্থা ও ব্যক্তিসহ বেশ কয়েকজন যুক্ত হন।

আগের ধারাবাহিকতায় আজ শুনানির দিন ধার্য ছিল। শুরুতে জামায়াতের পক্ষে আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা প্রবর্তন করে আনা সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল ঘোষণার রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে রিট আবেদনকারীরা, বিএনপি ও জামায়াত পৃথক আবেদন করেছে। আবেদন তিনটি শুনানির জন্য আপিল বিভাগে ১৭ নভেম্বর দিন ধার্য রয়েছে। প্রত্যেকেরই রিভিউতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার বিষয়টি মূল বিষয়। আপিল বিভাগ ৪: ৩ মতামতে ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করেছেন। তিনি বলেন, আপিল বিভাগের সংক্ষিপ্ত আদেশের পরপরই বেশ কিছু বিষয় নিয়ে পঞ্চদশ সংশোধনী আনা হয়। তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিলের বিষয়টিই পঞ্চদশ সংশোধনীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাই তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের বিষয়টি ছাড়া পঞ্চদশ সংশোধনীর বাকি বিষয় নিয়ে আলোচনা হলে তা অসম্পূর্ণ হবে।

একপর্যায়ে আদালত রিট আবেদনকারী পক্ষ ও রাষ্ট্রপক্ষের মত জানতে চান। রিট আবেদনকারীদের পক্ষে আইনজীবী রিদুয়ানুল করিম বলেন, শুনানি হতে পারে। তবে শুনানি নিয়ে আদালত রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখতে পারেন। আপিল বিভাগের সিদ্ধান্তের পর সংক্ষিপ্ত শুনানি নিয়ে রায় ঘোষণা করতে পারেন।

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদ উদ্দিনের উদ্দেশে আদালত বলেন, অ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গে কথা বলবেন। পঞ্চদশ সংশোধনীতে ৫৪টি ধারা যুক্ত হয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু, যেটি আপিল বিভাগে রয়েছে। তাই এ নিয়ে এখন বলা যাবে না। তখন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, অ্যাটর্নি জেনারেলকে জানাব। তবে শুনানি থামিয়ে না রেখে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার ইস্যুটি বাদ দিয়ে বাকি অনুচ্ছেদ নিয়ে আলোচনা হতে পারে।

আলোচনায় তিন রিভিউ আবেদন

তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা প্রবর্তন করে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে করা তিনটি আবেদন শুনানির জন্য ১৭ নভেম্বর আপিল বিভাগে দিন ধার্য রয়েছে। ২৪ অক্টোবর প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের ছয় সদস্যের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ শুনানির এ দিন ধার্য করেন।

এর আগে আপিল বিভাগের সাত বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ ২০১১ সালের ১০ মে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের (৪: ৩) ভিত্তিতে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল ঘোষণা করে রায় দেন। এই রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট নাগরিক পৃথক তিনটি আবেদন (রিভিউ) করেন।

১৯৯৬ সালে ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত হয়। এই সংশোধনীর বৈধতা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এম সলিমউল্লাহসহ অন্যরা ১৯৯৮ সালে হাইকোর্টে রিট করেন। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট রুল দেন। হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চ চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০০৪ সালের ৪ আগস্ট রায় দেন। সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীকে বৈধ ঘোষণা করে দেওয়া রায়ে বলা হয়, ১৯৯৬ সালের ত্রয়োদশ সংশোধনী সংবিধানসম্মত। এ রায়ের বিরুদ্ধে সরাসরি আপিলের অনুমতি দেওয়া হয়। এর ধারাবাহিকতায় ২০০৫ সালে আপিল করে রিট আবেদনকারীপক্ষ। এই আপিল মঞ্জুর করে ২০১১ সালের ১০ মে আপিল বিভাগ রায় ঘোষণা করেন। ঘোষিত রায়ের পর তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার বিলোপসহ বেশ কিছু বিষয়ে আনা পঞ্চদশ সংশোধনী আইন ২০১১ সালের ৩০ জুন জাতীয় সংসদে পাস হয়।