চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে রসায়ন বিভাগের অধ্যাপককে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে এ সিদ্ধান্ত নেয় প্রশাসন।
অব্যাহতি দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার কে এম নূর আহমদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বিভাগের একাডেমিক কমিটির সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে ও উপাচার্যের আদেশে ওই শিক্ষককে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব একাডেমিক ও প্রশাসনিক কাজকর্ম থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। ঘটনা তদন্তে ইতিমধ্যে যৌন নিপীড়ন নিরোধ সেল কাজ শুরু করেছে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ
এদিকে ছাত্রীকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগের পর অধ্যাপকের বিচারের দাবিতে ক্লাস বর্জন করে মানববন্ধন করেছেন ভুক্তভোগী ছাত্রীর বিভাগের শিক্ষার্থীরা। অভিযুক্ত অধ্যাপকের বিচার না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা তাঁদের কর্মসূচি চালিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের এ দাবির সঙ্গে সংহতি জানিয়ে মিছিল ও মানববন্ধন করেছেন শাখা ছাত্রলীগের একাংশের নেতা–কর্মীরা।
আজ বেলা এগারোটায় ক্লাস বর্জনের কর্মসূচি শুরু করেন ওই বিভাগের অন্তত ৩০০ শিক্ষার্থী। পরে তাঁরা বেলা দুইটা পর্যন্ত ওই বিভাগের সভাপতির কার্যালয়ে অবস্থান করেন। এরপর মিছিল নিয়ে তাঁরা শহীদ মিনারের সামনে বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড নিয়ে অবস্থান নেন। বেলা তিনটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত তাঁরা প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান করেন।
এ কর্মসূচিতে থাকা ভুক্তভোগী ওই ছাত্রীর এক সহপাঠী প্রথম আলোকে বলেন, ওই অধ্যাপকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি ও হেনস্তার আরও অনেক অভিযোগ রয়েছে। এত দিন পরীক্ষার ফলাফল খারাপ হওয়ার ভয়ে কোনো ছাত্রী কথা বলেননি। কিন্তু এখন সবাই বিষয়টি নিয়ে সোচ্চার হয়েছেন। একের পর এক প্রমাণ সামনে আসছে। যতক্ষণ পর্যন্ত তদন্ত সাপেক্ষে ওই অধ্যাপকের বিচার না হবে, ততক্ষণ তাঁরা কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন।
শহীদ মিনারে হওয়া মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক বিভাগের শিক্ষার্থী অংশ নেন। বাংলা বিভাগের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী ধ্রুব বড়ুয়া প্রথম আলোকে বলেন, দেশের কমবেশি সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থা এখন এক। শিক্ষকদের নৈতিক মান এখন তলানিতে। এর আগেও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের থেকে নারীবিদ্বেষমূলক বক্তব্য শোনা গেছে। নারী হেনস্তার ঘটনার সমাধানস্বরূপ মেয়েদের হলে প্রবেশের নিয়ম বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এতেই স্পষ্ট হয় যে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল অবস্থান এখন আর নেই। আর শিক্ষকেরা এর দায় এড়াতে পারেন না।
ছাত্রলীগের মিছিল
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের এই অধ্যাপকের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের একাংশের নেতা–কর্মীরা। আজ বেলা দুইটায় এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। মিছিলে অংশ নেওয়া নেতা-কর্মীরা শাখা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. ইলিয়াসের অনুসারী। তিনি ক্যাম্পাসে নিজেকে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে পরিচয় দেন।
জানতে চাইলে মো. ইলিয়াস প্রথম আলোকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন হেনস্তা, নিপীড়ন ও ছাত্রী উত্ত্যক্তকারীদের কোনো ঠাঁই হবে না। শিগগিরই এ ঘটনার তদন্ত সাপেক্ষে বিচার করতে হবে। এ ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে, সেটি প্রশাসনকে নিশ্চিত করতে হবে। দ্রুত এটি নিশ্চিত না হলে তাঁরা কঠোর আন্দোলনে যাবেন।
এ ব্যাপারে মন্তব্য জানতে চেয়ে উপাচার্য শিরীণ আখতারের কার্যালয়ে গেলে তাঁকে পাওয়া যায়নি। পরে মুঠোফোনে কল করলেও তিনি সাড়া দেননি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়ন নিরোধ সেলের সদস্যসচিব অধ্যাপক আবদুল্লাহ আল ফারুক প্রথম আলোকে বলেন, অভিযোগের পর বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যে কাজ শুরু হয়েছে। খতিয়ে দেখে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।