আসামির তালিকা থেকে নাম বাদ দিতে চাঁদা নিয়েছেন সিরাজুল

ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতফাইল ছবি

আসামির তালিকা থেকে নাম বাদ দেওয়ার কথা বলে দুই লাখ টাকা চাঁদা নেওয়ার অভিযোগে গ্রেপ্তার অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য সিরাজুল ইসলাম আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। গত মঙ্গলবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে তিনি এ জবানবন্দি দেন।

পুলিশ বলছে, জবানবন্দিতে সিরাজুল ইসলাম চাঁদা নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। চাঁদা নেওয়ার সময় উপস্থিত থাকা এক র‍্যাব সদস্যর নামও তিনি জবানবন্দিতে উল্লেখ করেছেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা লালবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নাজমুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, সিরাজুল ইসলাম ২০২১ সালে সেনাবাহিনী থেকে অবসরে যান। তিনি চাঁদা নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। চাঁদাবাজিতে জড়িত এক র‍্যাব সদস্যর নামও জবানবন্দিতে উল্লেখ করেছেন।

পুরান ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম এতিমখানার তত্ত্বাবধায়ক মো. হারুন অর রশীদকে মামলার তালিকা থেকে নাম বাদ দেওয়ার কথা বলে দুই লাখ টাকা চাঁদা নেওয়ার অভিযোগে সিরাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা হয়। এরপর তিনি গত সোমবার গ্রেপ্তার হন।

চাঁদাবাজির বিষয়ে লালবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ক্যশৈনু আজ বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম এতিমখানার তত্ত্বাবধায়ক মো. হারুন অর রশীদকে গ্রেপ্তার এবং মামলার তালিকা থেকে নাম বাদ দেওয়ার কথা বলে দুই লাখ টাকা চাঁদা নেন সিরাজুল ইসলাম। এ চক্রের সঙ্গে জড়িত অন্য সদস্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

তবে চাঁদা নেওয়ার অভিযোগের কথা অস্বীকার করে সিরাজুল ইসলামের আইনজীবী আদালতকে লিখিতভাবে বলেছেন, সিরাজুল ইসলাম সম্পূর্ণ নির্দোষ। তাঁকে হয়রানি করার জন্য মামলার আসামি করা হয়েছে।

মামলার এজাহারে বলা হয়, গ্রেপ্তার এড়ানোর জন্য হারুন অর রশীদকে ১০ লাখ টাকা দেওয়ার কথা বলেন সিরাজুল ইসলাম। গ্রেপ্তার এড়াতে ভয়ে হারুন তখন সিরাজুল ইসলামের হাতে ২ লাখ টাকা তুলে দেন। পাশাপাশি ৮ লাখ টাকার একটি চেক তুলে দেন বাদী। জানতে চাইলে মামলার বাদী হারুন অর রশীদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘যখন সিরাজুল ইসলামসহ অন্যরা আমাকে হুমকি দেন ১০ লাখ টাকা না দিলে আমাকে গ্রেপ্তার করবেন। তখন ভয়ে আমি অন্য সহকর্মীদের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে সঙ্গে সঙ্গে সিরাজুলের হাতে ২ লাখ টাকা দিয়ে দিই। এরপর ৮ লাখ টাকার চেক দেওয়ার পর সিরাজুল আবার আমার কাছে টাকা চেয়ে ফোন দেন।’

হারুন অর রশীদ আরও বলেন, ‘আমি সিরাজুল ইসলামকে বলেছিলাম, আড়াই লাখ টাকার মতো ম্যানেজ করতে পেরেছি। তখন সিরাজুল আমাকে বলেন, ৫ তারিখ (৫ ডিসেম্বর) কিন্তু চার্জশিট দেওয়ার ডেট (তারিখ)। ৫ তারিখের পর নাম কিন্তু কাটতে পারব না। একবার চার্জশিটে নাম উঠে গেলে কিন্তু আমার কিছুই করার থাকবে না।’

মামলার এজাহারের তথ্য অনুযায়ী, স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম এতিমখানার তত্ত্ববধায়ক হারুন অর রশীদ পরে সেনাবাহিনীর লালবাগ ক্যাম্পে গিয়ে চাঁদাবাজির ঘটনার তথ্য জানান। এরপর গত সোমবার সন্ধ্যার দিকে আবার এতিমখানায় টাকা নিতে আসেন অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য সিরাজুল ও তাঁর দুই সহযোগী। তখন সেনাবাহিনীর একটি টিম এতিমখানায় ঢুকে সিরাজুলসহ অন্যদের গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। পরে তাঁদের লালবাগ থানা–পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

এসআই নাজমুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, চাঁদাবাজির ঘটনার তদন্তের জন্য স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম এতিমখানা থেকে সিসিটিভির ফুটেজও জব্দ করা হয়েছে। ওই ফুটেজের ফরেনসিক পরীক্ষায় র‍্যাব সদস্যদের উপস্থিত থাকার সত্যতা পেলে তাঁদেরও গ্রেপ্তার করে বিচারের মুখোমুখি করা হবে।