‘দুদকের চিঠি’ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর আগেই গণমাধ্যমে ফাঁস, প্রতিবাদ বিএফএসএর
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চিঠির বরাত দিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচারিত হয়েছে। অথচ দুদকের ওই চিঠি বৃহস্পতিবার পর্যন্ত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়নি। কথিত ওই দুর্নীতির অভিযোগে তদন্তসংক্রান্ত এমন সংবেদনশীল চিঠি গণমাধ্যমে প্রকাশ ও নিরীক্ষা আপত্তির ভিত্তিতে তদন্তের প্রক্রিয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ ফরেন সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন (বিএফএসএ) প্রতিবাদ জানিয়েছে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ ফরেন সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এই প্রতিবাদ জানিয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কর্তৃক বাংলাদেশের বিভিন্ন দূতাবাসে কর্মরত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের কথিত দুর্নীতিবিষয়ক একটি সংবাদের প্রতি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়/বাংলাদেশ ফরেন সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএসএ) নজরে এসেছে।
সংবাদের বিষয়বস্তু পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে কথিত অভিযোগগুলো প্রধানত অডিট (নিরীক্ষা) আপত্তিসংক্রান্ত বিষয়াদি। দাপ্তরিক নিরীক্ষা আপত্তি, যা প্রক্রিয়াধীন আছে এবং যা কর্মকর্তাদের পেনশনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ও অডিট রিপোর্টে চিহ্নিত, সেসব দাপ্তরিক আপত্তি দুর্নীতি হিসেবে অবহিত করা গ্রহণযোগ্য নয়।
প্রকাশিত সংবাদে দুদকের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, এসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি ও বিভিন্ন অনিয়মের মাধ্যমে দেশে-বিদেশে নিজ ও পরিবারের নামে বিপুল পরিমাণে অবৈধ সম্পদ অর্জনের তথ্য রয়েছে।
বিএফএসএর বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এমন ঢালাও অভিযোগের কোনো সত্যতা নেই।
তবে কোনো বস্তুনিষ্ঠ তথ্যের ভিত্তিতে যদি কোনো কর্মকর্তার ব্যাপারে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন অনুযায়ী কোনো ব্যবস্থা নেয়, তাতে আমাদের সহযোগিতা ও সমর্থন থাকবে। নিরীক্ষা সরকারের একটি নিয়মিত প্রক্রিয়া, যাতে সরকারের ব্যয়–সংশ্লিষ্ট আর্থিক নিয়মাবলি অনুসারে সম্পাদন হয়েছে কি না, তা যাচাই করা হয়। নিরীক্ষা শেষে নিরীক্ষকগণ তাঁদের মন্তব্য পেশ করেন, যার পরিপ্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা/কার্যালয় তাঁদের বক্তব্য উপস্থাপন করেন এবং উভয়ের সমন্বয়ে দায় নির্ধারণ হয়। সরকারের প্রতিটি দপ্তরই নিরীক্ষার আওতাধীন। কোনো কর্মচারী/কর্মকর্তার কাছে নিরীক্ষা বাবদ পাওনা থাকলে তা সরকারি কোষাগারে অবশ্যই ফেরতযোগ্য। কোনো কর্মকর্তা–কর্মচারী যদি এই পাওনা টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হন, তবে সেই পরিমাণ অর্থ তাঁর পেনশন থেকে কেটে নিয়ে আদায় করা হয়। সুতরাং দাপ্তরিক নিরীক্ষা আপত্তিকে দুর্নীতি হিসেবে আখ্যায়িত করার অবকাশ নেই। বিগত বছরগুলোতে অনেক ক্ষেত্রেই বিদেশের বাস্তবতা বিবেচনা না করে আর্থিক আইন প্রণয়ন করা হয়েছ, যার ফলে দূতবাসের কর্মকর্তা/কর্মচারীরা নিরীক্ষা আপত্তির সম্মুখীন হচ্ছেন। এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিয়মিতভাবে মহাহিসাব পরিদর্শক দপ্তর ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক করে থাকে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, দুদকের যে চিঠির বরাত দিয়ে সংবাদ পরিবেশিত হচ্ছে, তা এখন পর্যন্ত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়নি। কী করে সংবেদনশীল এই চিঠি গণমাধ্যমে প্রকাশ হলো, তা দুদক কর্তৃপক্ষ অনুসন্ধান করে দেখবে বলে আমরা প্রত্যাশা করি। এ চিঠিতে যাঁদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, তাঁদের অনেকেই যথাসম্মানে তাঁদের কর্মজীবন শেষ করেছেন। তাঁদের সব নিরীক্ষা আপত্তি নিষ্পত্তি করে পেনশন ভোগ করছেন। অনেকে এখনো গুরুত্বপূর্ণ পদে নিযুক্ত আছেন। দুদকের এই চিঠির মাধ্যমে তথ্য চাওয়ায় এবং তা সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ায় জনমনে ভ্রান্ত ধারণা সৃষ্টির অবকাশ রয়েছে। ফলে দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের সম্মানহানিসহ পররাষ্ট্র ক্যাডার ও মন্ত্রণালয়ের বিষয়ে জনমনে বিরূপ ধারণা সৃষ্টি হতে পারে। এতে তাঁদের বর্তমান গুরুদায়িত্ব পালনে অন্তরায় সৃষ্টি হওয়া স্বাভাবিক, ফলে সরকারের কাজ ও দেশের ভাবমূর্তিও ক্ষুণ্ন হয়েছে। সর্বোপরি, কোনো নির্দিষ্ট প্রমাণ ছাড়া এমন ঢালাও মন্তব্য করা আইনের দৃষ্টিতেও অগ্রহণযোগ্য।
পররাষ্ট্র ক্যাডারের কর্মকর্তারা মনে করেন, দুর্নীতি দমন কমিশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা/কর্মচারী যাঁরা বিদ্যমান আইনি কাঠামোর বাইরে গিয়ে এমন একটি অগ্রহণযোগ্য কাজে লিপ্ত হয়েছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বাংলাদেশ ফরেন সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন বলেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অগণিত শহীদের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে অর্জিত নতুন রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে গোটা জাতির মতো ফরেন সার্ভিসে নিযুক্ত কূটনীতিকেরাও ঐকান্তিকতা, একনিষ্ঠতা ও পেশাদারত্বের সঙ্গে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের সমগ্র জাতীয় স্বার্থের নিবেদিতপ্রাণ অতন্দ্রপ্রহরী হিসেবে বাংলাদেশের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির জন্য কাজ করে যাচ্ছে।